Trending

বাড়ছে ‘ভারতীয় পণ্য বয়কট’ ও ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা, যে প্রভাব পড়তে পারে

বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রতিক ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে ভারতবিরোধী এক ধরনের প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পণ্যসহ দেশটিকে ‘বয়কট’ নিয়ে করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন চলছে।

গত সপ্তাহ দুয়েক যাবত এ প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ফেসবুক, এক্স ও ইউটিউবে। যারা এসব প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ কিংবা সরকার-বিরোধী হিসেবে পরিচিত। এরসাথে ছোটখাটো কয়েকটি রাজনৈতিক দলও রয়েছে।

সম্প্রতি ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার অলি-গলিতে এক তরুণ হ্যান্ডমাইক হাতে ভারতের পণ্য বর্জনের প্রচারণা চালাচ্ছেন। সে যুবক গণঅধিকার পরিষদ নামে একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসব প্রচারণা ভারতেও অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের এসব প্রচারণার বিরুদ্ধে ভারতের অনেকে ইউটিউবে পাল্টা জবাব দিচ্ছেন।

বাংলাদেশে কী প্রচার হচ্ছে?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হলেও দেশের বাইরে বসবাস করেন।

শুক্রবার তিনি তার ভেরিফাইড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার একটি নিউজ শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি ওই নিউজের উদ্বৃতি দিয়ে ‘ইন্ডিয়াআউট’ এবং ‘বয়কটইন্ডিয়ানপ্রোডাক্টস’ দুটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছেন। যে নিউজে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘ভারতের হস্তক্ষেপের’ কারণেই এই প্রচারণা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গত কয়েক দিনে হ্যাশট্যাগ ‘ইন্ডিয়াআউট’, ‘বয়কটইন্ডিয়ানপ্রোডাক্টস’সহ ভারত বিরোধী নানা ধরণের প্রচারণা ও হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।

এতে বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের অনেককেই এ ধরনের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।

সেইসাথে গণঅধিকার পরিষদ ও এ বি পার্টির মতো কয়েকটি ক্ষুদ্র দলের নেতা-কর্মীরা সম্পৃক্ত হয়েছেন। এসব দল গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর থেকে নানাভাবে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে।

এমন অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতবিদ্বেষী মনোভাবের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

এনিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রী কথাও বলেছেন সম্প্রতি।

বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশের জনগণ ‘ভারতবিদ্বেষী’ হয়ে উঠছে, সেক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কী-না?

এর জবাবে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের কোনো টানাপড়েন নেই।’ তবে এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।

গত মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত এক প্রশ্নোত্তরে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেখানে তাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হয়।

সেখানেও বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়।

সেখানে নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, মালদ্বীপের পর ভারতেও এক ধরনের ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন চলছে। এর প্রভাব কী হতে পারে?

জয়শঙ্কর বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মনে হয়নি। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে যা দেখবেন তার সবটুকু বিশ্বাস করবেন না।’

এ অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ- চীন, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা নিয়েও কথা বলেন।

বিভিন্ন প্রতিবেশীর সাথে ভারতের বর্তমান যে সম্পর্ক সেটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা কী না সেটি নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। এর কৌশলী জবাব দেন জয়শংকর।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতীয়দের বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যেতে এবং বাংলাদেশী বন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। যা ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।’

তিনি বলেন, আগে উত্তর-পূর্বের মানুষদের শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে নেমে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে যেতে হতো। এখন তারা চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারে। এটি সমগ্র পূর্ব ভারতীয় অর্থনীতি বদলে দেবে।

‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণার লক্ষ্য কী?
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন চীনপন্থী নেতা মুহাম্মদ মুইজ্জু।

মুইজ্জু ক্ষমতায় বসার পর তিনি প্রথম ইন্ডিয়া আউট প্রচারাভিযান শুরু করেন। এরপরই তিনি ভারতকে তার সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের চাপও দেয়। তখন ভারতের সাথে মালদ্বীপের সম্পর্কে ফাটল ধরে।

গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন বয়কটের ডাক দেয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট বিএনপি। ফলে অনেকটা একতরফা নির্বাচনে জয় নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় বসে আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়েও ছিল নানা প্রশ্ন।

বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের একটা অংশ মনে করে, আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর নয়াদিল্লীর কূটনৈতিক সমর্থনের কারণেই বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। যে কারণে এবার নির্বাচন বয়কট করে এই সামাজিক আন্দোলনে তরুণদের একটা অংশ।

এই নির্বাচনের পরপর দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ধরনের প্রচারণা শুরু হয়। হ্যাশট্যাগ ‘ইন্ডিয়াআউট’ এই প্রচারণায় তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই যোগ দেন।

হ্যাশট্যাগের এই প্রচারণাটি ফেসবুক, এক্স (টুইটার), ইনস্টাগ্রামেও এখন শীর্ষে দেখা যাচ্ছে। যেখানে বেশির ভাগ পোস্টদাতাই বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। যে কারণে এ ধরনের প্রচারাভিযানের মাধ্যমে তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও ডাক দিচ্ছেন।

এরপরই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের রাজনীতি ও কূটনৈতিক অঙ্গনে। দুটি দেশের দায়িত্বশীল সূত্রই এই ‘ইন্ডিয়াআউট’ নিয়ে কথা বলেছেন। তবে, দু’দেশের কুটনৈতিক সম্পর্কে এর প্রভাব কতখানি তা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি কিছু বলেননি।

তবে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী দাবি করেছেন, এ নিয়ে দু দেশের সম্পর্কে তেমন কোনো টানাপড়েন তৈরি হবে না।

প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে ভারতেও
বাংলাদেশে ভারত বিরোধী প্রচারণা নিয়ে পাল্টা জবাব দিতে দেখা যাচ্ছে ভারতেও। এনিয়ে ভারতের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের কনটেন্ট তৈরি করছে। তাদের কেউ কেউ ভারতে সুপরিচিত মুখ।

এসব কন্টেন্টের মাধ্যমে অভিযোগ করা হচ্ছে, বাংলাদেশে ভারতবিরোধী প্রচারণা ‘উস্কে দিচ্ছে’ বিএনপি।

ভারতীয় গণমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের একটি ইউটিউব পেইজে সাংবাদিক পালকি শর্মাকে বাংলাদেশের এই ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন নিয়ে একটি বিশ্লেষণ করতে দেখা গেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পেছন থেকে।

যদিও ‘ভারতীয় পণ্য বয়কট’ কিংবা ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা নিয়ে বিএনপি দল হিসেবে কিছু বলেনি বা প্রচারণায়ও অংশ নেয়নি।

বিষয়টি নিয়ে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কাছে। কিছুদিন আগে গয়েশ্বর রায় মন্তব্য করেছিলেন যে এই সরকার ভারত, রাশিয়া ও চীনের সরকার।

‘আমরা রাজনৈতিকভাবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেই নাই। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সেটা তাদের অধিকার। দলের পক্ষ থেকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন গয়েশ্বর রায়।

ভারতবিরোধিতার যত কারণ
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমানার দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার। দুই দেশের এই সীমান্তে নানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে গত অর্ধশতক ধরেই। এসব হত্যাকাণ্ডে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন দেখা গেছে বিভিন্ন সময়।

বাংলাদেশে ভারতবিদ্বেষী মনোভাবের অন্যতম কারণ একটা এই সীমান্তের হত্যাকাণ্ড। জাতীয় নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর গত ২২ জানুয়ারি যশোরের বেনাপোল সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে মারা যান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন সদস্য।

হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর তার লাশ ফেরত পায় বাংলাদেশ। ওই ঘটনার পর হঠাৎই ভারতবিরোধিতার বিষয়টি আরো বেশি লক্ষ্য করা যায়।

কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব দেশের মানুষের মধ্যে সব সময় ছিল। ১৫ বছর ধরে বর্ডারে মৃত্যু ঘটে যাচ্ছে। সুতরাং ভারতকে আরো সহনশীল হতে হবে। মৃত্যু যাতে একেবারেই না ঘটে।’

গত ১৫ বছরে টানা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এই সময়ে ভারতের বিজেপি ও কংগ্রেস দুটি সরকারই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন আসছে দেশের বড় একটা অংশের মধ্যে কেন ভারতবিদ্বেষী মনোভাব দিনে দিনে বাড়ছে। গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় এক কর্মসূচিতে বিএনপি নেতা ড. আবদুল মঈন খান বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিদ্বেষ কেন বাড়ছে তা খুঁজে দেখতে ভারতের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বানও জানান।

মঈন খান প্রশ্ন রাখেন- ‘আজকে আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রকে এমন একটা পারস্পরিক অবিশ্বাসের দোলাচলে কেন এই সরকার নিয়ে যাচ্ছে?’

সাম্প্রতিক ক্রিকেট ইস্যু কিংবা পেঁয়াজ রফতানিসহ নানা ইস্যুতে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে নানা মন্তব্য দেখা গেছে। তবে হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে ‘ইন্ডিয়াআউট’ প্রচারণা এবারই বেশ গভীরভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এছাড়াও তিস্তা চুক্তি না হওয়া এদেশের মানুষের মধ্যে এক ধরণের ক্ষোভ ও হতাশা দেখা গেছে অতীতেও।

সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে?
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে প্রতি বছর বাংলাদেশে কমপক্ষে ১৪০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে ভারত। দুই দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে এসব পণ্যসামগ্রী আসে দেশের বাজারে।

সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়াআউট’ ও ‘বয়কটইন্ডিয়ানপ্রোডাক্ট’ হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়ার যে বক্তব্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া তা কি প্রভাব হতে পারে সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।

তবে এই ইস্যু নিয়ে দুটি দেশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো কথাও বলেছে।

বাংলাদেশের সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার সাংবাদিকদের স্পষ্ট করেই বলেছেন, ভারত বিরোধী এই অবস্থানের কারণে ভারতের সাথে কোনো টানাপড়েন হবে বলে তারা মনে করেন না।

আর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে ভারতের যে বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে সেখানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিশ্ব রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। চীনও একটি প্রতিবেশী দেশ। বিভিন্নভাবে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির অংশ হিসেবে তারা দেশগুলোকে প্রভাবিত করবে।’

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, গত ৫০ বছরে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের একটা নেতিবাচক অবস্থান ছিল নানা কারণে। তবে তা খুব বেশি প্রভাব রাখেনি দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত কূটনৈতিক বিশ্লেষক নালিম ফেরদৌস বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘মানুষের মনে যদি সন্দেহ জাগে, একটা প্রচারণার কারণে একটা পক্ষ সরব থাকে তাহলে কিছুটা ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে। তবে সেটি খুব বেশি না।’

‘আসলে আমরা ভারত থেকে ইমপোর্ট করি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। এগুলো বর্জন করলেই কী, বর্জন না করলেই কী। এতে খুব একটা প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম,’ বলেন নাসিম ফেরদৌস।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, যারা এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দিয়েছে। তারা দেশের নাগরিক হিসেবে মতামত দিতেই পারে। তবে, এতে প্রভাব কী পড়বে না পড়বে তা জানি না।’

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়কট আন্দোলন কূটনীতিতে খুব একটা প্রভাব রাখতে পারছে না।

তবে নাসিম ফেরদৌস বলেন, ‘আপতত দুই দেশের রাজনীতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার এই আন্দোলন প্রভাব রাখার সম্ভাবনা কম। তবে, সামনেই ভারতের জাতীয় নির্বাচন। এই বয়টক আন্দোলন অনলাইন মাধ্যম ছাপিয়ে যদি রাস্তায় বড় আন্দোলনে রূপ নেয় তার একটা প্রভাব তৈরি হতে পারে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button