Hot

বিএনপি মহাসচিবের নামে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে চেক ইস্যুর প্রপাগান্ডা: রাজনৈতিক নোংরামির শিকার মির্জা ফখরুল

চিকিৎসার জন্য এখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও মেয়ে মির্জা সামারুহ। গত ২৪ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর থেকেই তার এবং রাহাত আরা বেগমের ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক প্রপাগান্ডা। একটি ভুয়া চেকের ছবির সঙ্গে তাদের ছবি বসিয়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে দেখানো হয়েছে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে চিকিৎসার জন্য ৫০ লাখ টাকা সহায়তা নিয়েছেন। যদিও ছবিটিকে ইতোমধ্যে ভুয়া বলে উল্লেখ করেছেন ফেক্ট চেকাররা।

বিএনপি বলছে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে কোন ধরনের নেতিবাচক কিছু না পেয়ে এখন বিরোধীরা নোংরা খেলায় মেতে উঠেছেন। তার নামে যেটি করা হয়েছে এটি রাজনৈতিক নোংরামি ছাড়া আর কিছুই নয়, তিনি নষ্ট রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নোংরামির শিকার। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অসুস্থজনিত কারণে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। এর আগে থেকেই সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কিন্তু ফেসবুকে ভূয়া অপ্রচার চালিয়ে, এজেন্সিগুলোকে দিয়ে সরকার জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এধরণের ভূয়া ও জালিয়াতকারীরা সবসময় থাকে। আর এদেরকে মদদ দিচ্ছে এই অবৈধ সরকার।

তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ও তার সহধর্মিণী অনেকদিন যাবতই অসুস্থ, তা সকলেই অবগত। এছাড়া দুই বছর আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের দেশের বাইরে অস্ত্রোপচার হয়েছে। নিয়মিত চেকআপের জন্য প্রায়ই তাদের দেশের বাইরে যেতে হয়। ওবায়দুল কাদেরওতো চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। সেখানে তিনিওতো অনেকের সাথে কথা বলেন। তখন কি তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করেন?

রিজভী বলেন, আজকে কেউ হাসপাতালে গেলেই কি ষড়যন্ত্র হয়? সরকার এগুলো পরিকল্পিতভাবে ছড়াচ্ছে। একটি অবৈধ সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের কর্মও বৈধ থাকে না। তারা ভালো কাজ করতে পারে না। আজকে যারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করছে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করার সরকার এরআগেও অনেক চেষ্টা করেছে, ব্যর্থ হয়েছে। ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছে পারে নাই। জেল, খুন-গুম করে বিএনপিকে স্তব্ধ করার অপচেষ্টা করেছে, পারেনি।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অত্যন্ত স্বজ্জন ও পরিচ্ছন্ন হিসেবে সর্বমহলে প্রশংসিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের বনেদী পরিবার থেকে বেড়ে উঠা এই রাজনীতিবিদ তার আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, বক্তৃতা, রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি কমিটমেন্ট, দলের চরম দুঃসময়েও দলের হাল ধরে রাখা এবং নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার কারণে ভালোবাসা পাচ্ছেন সবার কাছে। কিন্তু রাজনৈতিক নোংরামি, নষ্ট রাজনীতির হাত থেকে রক্ষা হয়নি তার। সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ও তার স্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালানো হয়েছে ব্যাপক প্রপাগান্ডা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকার চেক ইস্যু করা হয়েছে। মির্জা ফখরুল ও তার স্ত্রীর ছবি দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে বিদেশ ভ্রমণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এদিকে ফেকচেকাররা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মির্জা ফখরুলের চিকিৎসা সহায়তা নেওয়ার সংক্রান্ত ভাইরাল চেকটি ভুয়া। চেকটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে প্রদত্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম ও নাম্বারের সাথে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম ও নাম্বারের মিল নেই। তাছাড়া চেকটিতে সহায়াতা গ্রহণকারীর নাম ও অর্থের পরিমাণও ইংরেজিতে উল্লেখ রয়েছে। সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেকে বাংলায় লেখা থাকে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেকগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের স্বাক্ষর থাকে। যা এই চেকে অনুপস্থিত। এছাড়া চেকে দুটি জায়গায় একই অ্যাকাউন্ট নাম্বার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটিতে যে অ্যাকাউন্ট নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে সেটি দুটি জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা নোংরামি ছাড়া আর কিছু নয়। মির্জা ফখরুল বাপের জমি বিক্রি করে চিকিৎসা ও রাজনীতি করে। আমাকে কেনা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বিরোধী রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের এক জঘন্য খেলায় মেতেছে সরকার ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এমন একটি জায়গায় চলে গেছে, এটাকে আমরা বলি নষ্ট সময়, নষ্ট রাজনীতি। কত টাকা আছে তাদের? লক্ষ-কোটি টাকার মালিক হয়েছে জনগণের সম্পদ-ব্যাংক লুট করে। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে যে মির্জা ফখরুলকে কেনা যায় না। মির্জা ফখরুল বিক্রি হয় না। তারা সবাইকে নিজেদের মতো বিক্রয়যোগ্য পণ্য মনে করে। মির্জা ফখরুলরা টাকার জন্য রাজনীতি করেন না, তাদের কেনা যায় না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটি আওয়ামী লীগের একটি পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা। আমরা আন্দোলন করছি। সরকার নিপীড়ন-নির্যাতন করে এই আন্দোলন কোনোভাবেই দমন করতে পারছে না। দেশের মানুষ এই আন্দোলনে আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছেন। তাই সরকার নানা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকে বিপথগামী করার জন্য, বিভ্রান্ত করার জন্য, নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য এই কাজটি তারা করছে। তারা খুব পরিকল্পিতভাবেই এই কাজগুলো করে, সেটাই করছে। তাদের কাজই গুজব তৈরি করা, তাদের কাজই মানুষের চরিত্র হনন করা। আমরা অতিমানব নই যে আমাদের অসুখ-বিসুখ থাকবে না।

এটাকে ‹খুবই সস্তা প্রোপাগান্ডা› উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা একটা অপশক্তি। অপশক্তির যে কাজ, সেটাই তারা সারা জীবন করেছে, এখনো সেই কাজটিই করছে। এটা নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতেও আমার রুচিতে বাধে। দেশের মানুষ জানে, এরা প্রোপাগান্ডা চালানোর মেশিন। এরা প্রোপাগান্ডা চালাবে এবং তাদের কোনো প্রোপাগান্ডাই দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। এটা দেখে আমি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাইনি। কারণ, আমি জানি যে এটা নোংরা রাজনীতি। আপনারা একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখবেন, প্রোপাগান্ডার মধ্যেই এর মিথ্যার সাক্ষ্য আছে।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, এমন একটি বিষয়ে কথা বলাও আমার জন্য লজ্জার। আমার খুবই লজ্জা লাগছে যে এই দেশে আমি রাজনীতি করি। আপনারা যখন এমন কোনো সস্তা প্রোপাগান্ডার বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তখন বুঝতে পারি না যে কী বলা উচিত।

চিকিৎসা বিষয়ে তিনি বলেন, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই আমার ফুসফুসের খুব খারাপ রোগ হয়েছে। ঢাকার চিকিৎসকের পরামর্শেই সিঙ্গাপুরে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আর আমার স্ত্রীও ক্যানসারে আক্রান্ত, তার আবার কেমোথেরাপি শুরু হবে। তাই এখানে যে চিকিৎসক তাকে দেখেছিলেন, তার সঙ্গে আবার একটু পরামর্শ করে নিতে এসেছি।

শুধু বিএনপি মহাসচিব নয়, আওয়ামী প্রপাগান্ডা মেশিন বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একইভাবে নানারকম অপপ্রচার চালায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি টেলিযোগাযাগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসি ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বা তার পরিবারের বিরুদ্ধে কে কোথায় অপপ্রচার চালাচ্ছে, কোথায় কি হচ্ছে সবই তারা মুহূর্তের মধ্যেই জানতে পারেন। কিন্তু দেশের একজন প্রবীন রাজনীতিবিদ, স্বজ্জন ব্যক্তিত্ব, প্রধান বিরোধী দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তার বিরুদ্ধে এভাবে অপপ্রচার চালানো হলো কিন্তু তারা কাউকে চিহ্নিত করতে পারলেন না।

আলাল বলেন, এটি যেভাবে ছাড়ানো হয়েছে তাতে নিশ্চিত করে বলা যায় আওয়ামী সরকারের প্রপাগান্ডা মেশিন থেকেই এটি ছড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চরিত্র হননের জন্য। সরকার পতন আন্দোলন যতই জোরালো হবে ততবেশি এমন অপপ্রচার চালানো হবে মন্তব্য করে তিনি দেশবাসীকে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button