বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়,অথচ বাইডেন চুপ!
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিক্ষোভে উত্তাল। গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হচ্ছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একেবারেই চুপ করে রয়েছেন।
বিতর্কিত এই বিক্ষোভ নিয়ে জো বাইডেন এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলেননি। নির্বাচনী প্রচারে জটিলতার আশঙ্কা থেকেই তিনি এমনটা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৮১ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাট নেতা আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হবেন। গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, কয়েক শ আটকের ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব বিষয় নিয়ে জনসমক্ষে মাত্র একবার কথা বলেছেন বাইডেন।
গত সপ্তাহে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেন, ‘আমি ইহুদিবিরোধী এই বিক্ষোভের নিন্দা জানাই। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমি কিছু কর্মসূচি নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কী ঘটছে তা বুঝতে পারছে না, আমি তাঁদের নিন্দা জানাই।’
১৯৬০ ও ৭০–এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্যতম বড় ও দীর্ঘস্থায়ী বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে বাইডেনের যথেষ্ট জোরালো অবস্থান না নেওয়ার বিষয়টি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নজর এড়ায়নি।
গত বুধবার নির্বাচনী প্রচারে ৭৭ বছর বয়সী রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দেশে বড় ধরনের আন্দোলন চলছে, কিন্তু তিনি এ নিয়ে কথা বলছেন না।’
ট্রাম্প কলেজ প্রেসিডেন্টদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের তাঁবু সরিয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। উগ্রপন্থীদের দমন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসার কথা বলেছেন। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের তিনি ‘পাগলাটে’ ও ‘হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কেরিন জেন-পিয়েরে গতকাল বুধবার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, রাতে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে সংঘর্ষ ও আটকের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের ছোট একটি অংশ জড়িত ছিল। সাংবাদিকদের জেন পিয়েরে আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিজেদের ক্যাম্পাসে নিরাপদ থাকার অধিকার রয়েছে। তাঁদের শেখার অধিকার রয়েছে।’ তিনি এমনও বলেন, গাজায় চলা ‘যুদ্ধ’ বেদনাদায়ক। বাইডেন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমর্থন করেন। তবে পিয়েরে এসব কথা বলে বাইডেনের চুপ থাকার বিষয়টি সহজ করতে চাইলেও তেমনটা ঘটেনি।
ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক অ্যালেক্স কিনা বলেছেন, এই বিক্ষোভ বাইডেনকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। কারণ, ২০২০ সাল থেকে তিনি ভোটারদের জোটের জন্য তরুণ, মুসলিম ও আরব আমেরিকানদের ওপর বেশি নির্ভর করেছেন।
গাজায় হামলার শুরু থেকেই ইসরায়েলকে শর্তহীনভাবে সমর্থনের জন্য বাইডেন সমালোচিত হয়েছেন। বাইরে বের হলে প্রায়ই বাইডেনকে বিক্ষোভকারীরা ‘গণহত্যাকারী জো’ বলেন। তাঁরা যুদ্ধবিরতির দাবি জানান।
তবে তরুণ ভোটারদের মন জয়ের জন্য এখনো বাইডেনের হাতে সময় আছে। কিনা বলেন, হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয় ও জিম্মিদের মুক্ত করে তাহলে এটি সম্ভব। যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রভাব অনেক বড় হবে বলে মনে করেন কিনা। এতে এ ধরনের বিক্ষোভ কমে আসবে। স্থিতিশীলতা ফিরবে।
তবে যুদ্ধবিরতির জন্য ওয়াশিংটন কয়েক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলে সফরে রয়েছেন। সংকট নিরসনে এ নিয়ে তিনি সপ্তমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতিতে হামাসকে হ্যাঁ বলতে হবে। আর এটা প্রয়োজন।’
যদি যুদ্ধবিরতি না হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিতিশীলতা বাড়তে থাকে, তাহলে আগামী আগস্ট মাসে শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে বাইডেনের আনুষ্ঠানিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ওপর প্রভাব পড়বে।
১৯৬৮ সালেও এমনটা ঘটেছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এর ফলে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন পুনর্নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সে সময় বাইডেন ছিলেন আইনের শিক্ষার্থী। তিনি বিক্ষোভ থেকে দূরে ছিলেন। ২০০৭ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে বাইডেন লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ভবন দখল করা দেখে তিনি ভেবেছিলেন, তাঁরা গর্দভ।