Bangladesh

বিচারবহির্ভূত হত্যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজন। এ ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক আখ্যায়িত করে তারা বলেছেন, মব ট্রায়াল বা গণপিটুনির যে ধারা শুরু হয়েছে, তা দ্রুত বন্ধ করতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ বাহিনী সক্রিয় হতে না পারে, ততক্ষণ এ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

এ দুই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সমকালকে বলেন, আমি হতভম্ব। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মনে হচ্ছে, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের জায়গাটা হারিয়ে গেছে। শুধু পিটিয়ে মারা নয়, ঢাবির ঘটনার পেছনের ঘটনা শোনা গেছে, তাঁর পরিবারকে ফোন করে অর্থ দাবি করা হয়েছে। তাহলে জিনিসটা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে?

তিনি আরও বলেন, দেশে অনেক হামলা-মামলার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এটা কী ধরনের ঘটনা? এই ঘটনায় সাধারণ ছাত্ররা যে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদে নেমেছে, এটাই প্রত্যাশিত। ছাত্ররা শুধু নয়, জনগণও নামবে– এটা এ দেশে হতে দেওয়া যায় না।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সরকারের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য কোনো অশুভ চক্র মাঠে নেমেছে কিনা, সেটাও তাঁর সন্দেহ হচ্ছে। যাতে সরকার এসব কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অনতিবিলম্বে এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, আইন হাতে তোলার মতো এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন উন্মত্ততা কেন ঘটবে, যেখানে শিক্ষিত লোকজন বসবাস করেন। যারা এই ঘটনায় জড়িত, দ্রুত তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। তদন্ত যেন দীর্ঘসূত্রতায় আটকে না থাকে, এটা নিশ্চিত করা দরকার।

তিনি আরও বলেন, কেউ ভিন্ন দল ও মতের বিশ্বাসী হলেই তাকে দলবদ্ধভাবে আক্রমণ করা সমীচীন নয়। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে। যদি এমন নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটতে থাকে, তাহলে দেশে যে পরিবর্তন হলো, তা অর্থহীন হয়ে যাবে। আইন যারা হাতে তুলে নিয়েছে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এর পেছনে কারও উস্কানি রয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে বের করতে হবে।
সমকালের সঙ্গে আলাপকালে মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, গণপিটুনি বা মব ট্রায়াল যেটা শুরু হয়েছে, এটাকে সমর্থন করার কোনো সুযোগ নেই। এই ঘটনা যাতে আর একটিও না ঘটে, সেই ব্যবস্থা সরকারের নেওয়া উচিত। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করা, এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, বিগত ১৫-১৬ বছরের স্বৈরশাসনের সময় শাসকগোষ্ঠী পুলিশ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। শাসক দলের নানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়, পাড়া-মহল্লায় দাপটের সঙ্গে নানাবিধ অপকর্ম করেছে। জনগণকে মারধর, অসম্মান করা, জায়গা-জমি দখল করাসহ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। ৫ আগস্টের পরে কোনো কোনো ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, জনগণের ক্ষোভ ও ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। যেটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য ও কাম্য নয়। সাম্প্রতিককালে এই ধরনের ঘটনার প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, পুলিশ বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার ফলে পুলিশ আস্থা বা বিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে পারছে না।
নূর খান বলেন, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জনগণের মধ্যে, ছাত্রদের মধ্যে বোধশক্তি জাগ্রত করা দরকার। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করা। এর কোনো বিকল্প নেই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d