Bangladesh

বিদেশি ঋণের দায় বেড়েছে ১ লাখ কোটি টাকা

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সরকারের নেওয়া বিদেশি ঋণে। টাকার অঙ্কে অনেক বেড়ে গেছে বিদেশি ঋণের দায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলতি বছরের জুন শেষে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি থাকার কথা ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা।

কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে সেটি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বৈদেশিক ঋণের দায় দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, শুধু ডলারের দাম বাড়ায় বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়েছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। 

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, গত আট থেকে ১০ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃত্রিমভাবে টাকার মূল্যমান বাড়িয়ে রেখেছিল। আদর্শ নিয়ম হচ্ছে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। সংকট তৈরির আগেই টাকার মূল্যমান কিছুটা কমানো হলে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ত। কিন্তু হুট করে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এক ধাক্কায় টাকার মূল্যমান অনেক কমেছে। এতে বিদেশি ঋণে বাড়তি দায় সৃষ্টি হয়েছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ৭২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার।

সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক দরপতনের ফলে বিদেশি ঋণের স্থিতি অনেক বেড়ে যাওয়ায় গত অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণের দায় বেড়েছে প্রায় পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা। এদিকে ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ ব্যয়ও বাড়ছে। গত অর্থবছর সরকারকে ৯২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার সুদ গুনতে হয়েছে। 

গত জুনভিত্তিক সরকারের ঋণসংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, সরকারের মোট ঋণের (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) দায় জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। গত বছরের জুন পর্যন্ত যা ছিল ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা।

মোট ঋণ স্থিতির অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাতে সরকারের দায় ৫ লাখ ৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। এ ছাড়াও অন্যান্য খাতে ঋণের দায় ৭১ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। এর পর গত অর্থবছর এ উৎস থেকে আরও নেওয়া হয়েছে ৭০ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, গত জুন শেষে সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু টাকার দরপতনে পুঞ্জীভূত বিদেশি ঋণের দায় ১ লাখ ৬ হাজার ৬১১ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) হিসাবে, একটি দেশ তার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করতে পারে। এর বেশি হলে ঝুঁকিতে পড়বে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ঋণ নিয়েছে জিডিপির ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ বিবেচনায় ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও ঝুঁকিমুক্ত আছে বলেই মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

তবে বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ঝুঁকিমুক্ত থাকা কঠিন হবে বলে মনে করেন ড. এম এ রাজ্জাক। তাঁর মতে, হঠাৎ করে বেশি মাত্রায় টাকার দরপতনে সরকারি-বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে  ব্যয় অনেক বেড়েছে, আগামীতেও তা অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ দেশীয় মুদ্রা আয় করে ডলারে এসব ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া আমদানির বিল মেটাতে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। টাকার যদি আরও দরপতন হয়, তাহলে ব্যয় বাড়তে থাকবে। তাই জিডিপির অনুপাতে সরকারের ঋণ আর সহনীয় পর্যায়ে নাও থাকতে পারে। 

তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক উন্নয়নশীল দেশ ঋণকে আর জিডিপির সঙ্গে তুলনা করে না। আদর্শ নিয়ম হচ্ছে, রাজস্বের সঙ্গে ঋণের তুলনা করা। কারণ জিডিপি নয়, ঋণ পরিশোধ করতে হয় রাজস্ব আয় থেকে। এ ক্ষেত্রে তুলনা করলে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। রাজস্ব বাড়ানোর দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখাও যাচ্ছে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor