বিশ্বজুড়ে তীব্র দাবদাহের পূর্বাভাস, জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি
দিনদিনই উত্তপ্ত হচ্ছে বিশ্ব। ক্রমবর্ধমান দাবদাহের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে জাতিসংঘ। এদিকে দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে দাবদাহ আরো বাড়বে বলেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে।
এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় জারি করা হয়েছে স্বাস্থ্য সতর্কতা। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে চীনা কর্তৃপক্ষ তীব্র দাবদাহের কারণে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি এবং জনগণকে বেশি করে পানি পান ও সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বিশজুড়েই রেকর্ড তাপমাত্রা বিরাজ করছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে রেকর্ড তাপমাত্রা চলছে।
বেইজিংয়ে ২৩ বছরের ইতিহাস ভেঙে গত সাত দিন ধরে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে গ্রিস ও কেনারি দ্বীপে অগ্নিনির্বাপক সদস্যরা দাবানল নিয়ন্ত্রণে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্পেন উচ্চ তাপমাত্রার কারণে রেড এলার্ট জারি করেছে। ইতালির সারদিনিয়া ও সিসিলি দ্বীপে তাপমাত্রা ৪৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ইরানে ৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত সোমবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ বুশেহেরের আসালুয়েহ জেলার পার্সিয়ান গালফ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় দুপুর ১২টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইউএস স্টর্মওয়াচের কর্মকর্তা কলিন ম্যাকার্থি এক টুইট বার্তায় এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
যুক্তরাষ্ট্র তীব্র তাপমাত্রা মোকাবেলা করছে। টেক্সাসের সান এঞ্জেলো শহরে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছবে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিওএমও) বলেছে, তাপমাত্রা সহজে কমছে না। ডাব্লিওএমও-এর তাপবিষয়ক উপদেষ্টা জন নায়ারন জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেছেন, তাপমাত্রা আরো বাড়বে। বিশ্বকে আরো দাবদাহের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
ফ্রান্সের জলবায়ু বিষয়ক ইনস্টিটিউট পিয়েরে সিমন লাপেলেসের পরিচালক রবার্ট ভটার্ড বলেছেন, ইউরোপ ও বিশজুড়ে চলা এই দাবদাহ শুধু একটি কারণে নয়, একাধিক বিষয় এতে রয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন পুরো বিশ্ব দেখছে।
এর অর্থ, শুধু শিশু ও বয়স্কদের মত অপেক্ষাকৃত দুর্বলরা নয় বরং সমগ্র বাসিন্দারা তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাপপ্রবাহের কারণে ইউরোপজুড়ে দাবানলের সংখ্যাও বাড়ছে। গ্রিস ও সুইস আল্পসে দাবানল জ্বলছে।
বিবিসি ওয়েদার থেকে বলা হয়েছে, ইতালির সার্দিনিয়া ও সিসিলি দ্বীপগুলোর কিছু অংশে আবারও তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হবে এবং ওই অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৬ থেকে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।
তাপমাত্রার তীব্রতার এই সময়টিকে ইতালিয়রা ‘সেতিমানা ইনফেরনালে’ বা ‘নরকের সপ্তাহ’ বলে বর্ণনা করছে। বিবিসি-র খবরে বলা হয়, সিসিলির অনেক ভবনেই এত গরমের সঙ্গে লড়াই করার মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই।
অনেক পরিবার ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বসবাস করে। অনেক অ্যাপার্টমেন্টে জানালার সংখ্যাও খুব কম। কোথাও কোথাও অল্প জায়গায় অনেকে একসঙ্গে থাকে।
মঙ্গলবার সিসিলির রাজধানী পালেরমোতে ৬৯ বছর বয়সের একজন নারী ও একজন পুরুষকে তাদের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয় বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রচণ্ড গরমে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
ইতালির উত্তরাঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র। ফলে সেখানের অনেক মানুষের এয়ার কন্ডিশনার কেনার আর্থিক সামর্থ্য নেই। এমনি কেউ কেউ ফ্যান কেনার সামর্থ্য পর্যন্ত রাখেন না। গৃহহীনদের অবস্থাও অবর্ণনীয়।
এসির ব্যবহার অনেক বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের উপর চাপ বেড়ে গেছে। যা সমাল দিতে সিসিলিতে লোডশেডিং দেখা দিয়েছে।
ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেশজুড়ে জরুরি সেবা কক্ষ প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। যাতে কারও শরীরে তাপদাহ জনিত অসুস্থতা দেখা দিলে তাকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায়।
২০২০ সালে ইতালি যখন ইউরোপে কোভিড মহামারির এপিসেন্টারে পরিণত হয়েছিল তখনও জরুরি চিকিৎসার জন্য এ ধরণের কক্ষ স্থাপন করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাপদাহ জনিত রোগে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ২০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার তথ্যও দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার রাজধানী রোমে নুতন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। ইতালি ছাড়াও স্পেন, গ্রিস এবং বলকান অঞ্চলের দেশগুলোর কিছু কিছু অংশে প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে।
যদিও বৃহস্পতিবার থেকে ইউরোপের অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউরোপজুড়ে এই তাপদাহ আগামী আগাস্ট মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলোজিক্যাল অর্গানাইজেশন।