Trending

বেহাল দশা স্বাস্থ্যসেবায়

আন্দোলন-সংঘর্ষে আহত মুমূর্ষু রোগীর ভিড় সারা দেশের হাসপাতালে। অপারেশন-পরবর্তী ইনফেকশনে হাত-পা কাটা পড়ছে রোগীদের। এই দুঃসময়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতে চলছে অচলাবস্থা। প্রায় মাসখানেক হয় অফিস করছেন না কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু তেলেসমাতি কারবারে প্রতিদিন বদলি-পদায়নের প্রজ্ঞাপনে চলছে স্বাক্ষর। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্বাস্থ্যসেবা সংস্কারে জোর না দিয়ে দলাদলি, আন্দোলন আর আত্মগোপনে ব্যস্ত এসব চিকিৎসক নেতা ও কর্মকর্তারা।

সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে অধ্যাপক এবং সিনিয়র চিকিৎসকদের আনাগোনা কম। সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং জুনিয়র চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ  অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে চলেছেন। পঙ্গু হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি আন্দোলন- সংঘর্ষে আহত রোগীদের স্বজন এবং সহায়তাকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আন্দোলনের শুরু থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা পেতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ধীরগতি ছিল সেবা দিতে। গণরুমে গাদাগাদি অবস্থায় থাকায় এসব রোগীর অধিকাংশই অপারেশন-পরবর্তী ইনফেকশনে ভুগছেন।

এর মধ্যেই কাটা পড়েছে বেশ কিছু রোগীর হাত-পা। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থী তামান্না ইসলাম তন্বীসহ প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পঙ্গু হাসপাতালে আহতদের সহায়তায় কাজ করে চলেছেন। তন্বী বলেন, ‘এই হাসপাতালে আহত রোগীদের বেশির ভাগেরই ইনফেকশনের কারণে হাত-পা কাটা পড়ছে। এ বিষয়ে নজর না দিলে আরও অনেকের অঙ্গহানি হয়ে যাবে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু-একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং হাতে গোনা চিকিৎসক ছাড়া অধিকাংশ কক্ষেই তালা। সবচেয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিচালক, বিভিন্ন প্রোগ্রামের ম্যানেজাররা কালেভদ্রে অফিসে যাতায়াত করছেন। অফিসে না এলেও নিয়মিত চলছে বদলি পদায়নের হিড়িক। গত ৮ আগস্ট থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে তেলেসমাতি কারবারে। বদলির আবেদন, ফরোয়ার্ড লেটার, ফাইল নোট মিটিং, এডি থেকে ডিজি পর্যন্ত পাঁচ কর্মকর্তার স্বাক্ষরের ধাপ পেরোনোর কোনো নিয়ম না মেনে তাড়াহুড়োই করা হচ্ছে বদলি। এসব অনিয়মে স্বাস্থ্য খাতের শৃঙ্খলা নষ্টের শঙ্কা করছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘চিকিৎসক বদলি হতেই পারে, কিন্তু সেটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে হতে হবে। স্বাস্থ্য খাতকে অস্থিতিশীল করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখন নেওয়া উচিত হবে না। হাসপাতালে আহত রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে এ সময় নজর দিতে হবে।’ রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলমসহ অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ সব কর্মকর্তার অপসারণসহ দুই দফা দাবিতে গত ১৩ আগস্ট অধিদপ্তর ঘেরাও করা হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে ছিলেন বিভিন্ন হাসপাতাল-স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। দ্রুততম সময়ে এসব দাবি মেনে না নিলে বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুমকিও দেন তারা। চিকিৎসকদের দুই দফা দাবি হলো, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিসহ দুর্নীতিবাজ সব কর্মকর্তাকে দ্রুততম সময়ে অপসারণ করতে হবে এবং অবৈধভাবে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন পাওয়া সবকিছু বাতিল করতে হবে।

জানা গেছে, তাদের এ আন্দোলনের আগেই গত ১২ আগস্ট পদত্যাগের আবেদন করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। যদিও এখনো তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের কোনো প্রজ্ঞাপন পাওয়া যায়নি। এ সময়ে দলাদলি ভুলে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নজর দেওয়ার জন্য বলছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ সংকটময় সময় পার করছে। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আসছেন না অনেক চিকিৎসক। মানুষের রোগ তো আর বসে থাকবে না। স্বাস্থ্যসেবাকে রাজনীতির মধ্যে না এনে পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কিংবা বিএনপি সমর্থিত সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) কোনোটিরই দরকার নেই। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতৃত্বে একত্রিত হয়ে চিকিৎসকদের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এগিয়ে আসতে হবে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button