ব্রিকসে সদস্যপদ পেতে তৎপর পাকিস্তান, বাধা ভারত
বিকাশমান পাঁচ অর্থনীতির দেশের জোট ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে। গত বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালুচ এ তথ্য জানিয়েছেন।
ব্রিকসের বর্তমান সদস্যদেশগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ছাড়াও আছে ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
বৃহস্পতিবার মুমতাজ জাহরা ব্রিকসকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ একটি জোট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, ব্রিকসে যোগদানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং বহুপক্ষীয় অংশগ্রহণকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে পাকিস্তান।
আমরা আরও আশা করি, বহুপক্ষীয় অংশগ্রহণের বিষয়ে ব্রিকস যে অঙ্গীকার করেছে, তার সঙ্গে সংগতি রেখে ব্রিকস পাকিস্তানের অনুরোধটি বিবেচনা করবে।’
মুমতাজের দাবি, ব্রিকসের বেশির ভাগ সদস্যদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের উষ্ণ সম্পর্ক আছে।
মুমতাজের এ ঘোষণার দুই দিন আগে রাশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানি দূতও একই রকম তথ্য জানিয়েছিলেন। রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা তাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ব্রিকসে যুক্ত হতে পাকিস্তান আবেদন করেছে। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান এ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার অংশ হতে চায়। এ সদস্যপদ পেতে পাকিস্তানের জন্য সমর্থন আদায়ে আমরা সাধারণভাবে সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে এবং সুনির্দিষ্ট করে রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’
বিশ্লেষকদের অনেকের দৃষ্টিতে ব্রিকস এমন একটি জোট, যারা নীতিমালাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের নেতৃত্বাধীন জোটকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।
ব্রিকসের সবশেষ সম্মেলনটি হয়েছে গত আগস্টে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত ওই সম্মেলনে জোটটির জনপ্রিয়তা বাড়ার ইঙ্গিত মিলেছে। অন্তত ৪০টি দেশ জোটটিতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তিন দিনের ওই সম্মেলন শেষ হওয়ার পর ব্রিকসের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, আগামী বছর ছয়টি দেশ এ জোটে যোগ দেবে। দেশগুলো হলো মিসর, ইথিওপিয়া, আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরান।
চলতি বছর পাকিস্তান সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারপারসন মুশাহিদ হুসেন সাইদ দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন। সেখানে নেতৃত্ব সম্মেলনের ফাঁকে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুশাহিদ বলেন, আঞ্চলিকতাবাদের দিকে যাচ্ছে বিশ্ব। এখন দেশগুলো পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলার জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করছে।
ব্রিকসে যোগদানের জন্য পাকিস্তান সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকেও স্বাগত জানিয়েছেন মুশাহিদ হুসেন সাইদ।
মুশাহিদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ইসলামাবাদের কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং কৌশল নির্ধারণবিষয়ক বিশেষজ্ঞ সালমা মালিকও। তিনি মনে করেন, এ ধরনের আঞ্চলিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জোটগুলো পাকিস্তানের জন্য সহায়ক হবে।
আল-জাজিরাকে সালমা মালিক বলেন, ‘এখন বহুপাক্ষিকতার সময়। ছোট জোটগুলোতে আপনাদের কথাগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হবে। আপনারা সেখানে জোরালো কণ্ঠে নিজেদের উদ্বেগগুলো জানাতে পারবেন। বিভিন্ন উদ্বেগের বিষয় নিয়ে আপনারা সাধারণ ঐকমত্য গড়ে তুলতে পারবেন।’
ব্রিকসে পাকিস্তানের সদস্যপদ পাওয়া সহজ হবে না
সম্প্রতি ব্রিকসের বর্তমান পাঁচ সদস্যদেশ এবং আগামী বছর যুক্ত হতে যাওয়া আরও ছয় দেশ মিলে একটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেছে। সেখানে তারা গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য অনেকটা সর্বসম্মতিক্রমে আহ্বান জানিয়েছে।
তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক মুহাম্মদ ফয়সাল মনে করেন, পাকিস্তান ব্রিকসে যোগ দিতে চাইলেও কাজটি তাদের জন্য সহজ হবে না।
মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, পাকিস্তানে সামনে যে পথটি খোলা আছে, তা একেবারেই চ্যালেঞ্জের এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। নতুন সদস্যপদ দেওয়া নিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রাজনীতি আছে। পাকিস্তানের বিষয়টি একেবারেই ভারতের বিরোধিতার সঙ্গে জড়িত। ভারত-চীন সম্পর্ক কেমন যাচ্ছে, তার ওপরই ভারতের বিরোধিতা করা না করার বিষয়টি নির্ভর করছে।
এ ধরনের উদ্বেগগুলোকে ভিত্তিহীন বলা যায় না। গত বছরের জুনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রবিষয়ক কার্যালয় বলেছে, চীনে ব্রিকস নেতৃত্ব সম্মেলনের ফাঁকে আয়োজিত একটি নীতিমালাসংক্রান্ত সংলাপ অনুষ্ঠানে তারা অংশ নিতে পারেনি। একটি সদস্যদেশের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
পাকিস্তান সরাসরি ভারতের নাম উচ্চারণ করেনি। তবে তারা আশা প্রকাশ করেছে, অংশগ্রহণমূলক নীতির ভিত্তিতে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যতের আলোচনাগুলো হবে।
পাকিস্তান সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারপারসন মুশাহিদ হুসেন সাইদ ভারতের অবস্থানের ব্যাপারে আক্ষেপ করে বলেন, ক্রিকেট, কূটনীতি কিংবা রাজনীতি—যা-ই হোক না কেন, ভারত সব সময় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংকট দেখিয়ে দিয়েছে যে বৃহত্তর গ্লোবাল সাউথের অংশ না হয়ে মার্কিন কিংবা ইসরায়েলি শিবিরের দিকে বেশি ঝুঁকেছে ভারত।
সাইদ মনে করেন, ভারত ইতিহাসের ভুল অংশে অবস্থান করছে।