Science & Tech

ভূপৃষ্ঠের গভীরে নীলাভ পাথরে লুকিয়ে থাকা সমুদ্রের সন্ধান

পৃথিবীর গভীরে লুকিয়ে রয়েছে এক সুবিশাল সমুদ্র! শুনতে অবাক লাগলেও বিজ্ঞানীদের নতুন এই দাবি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

কয়েকজন গবেষক দাবি করেছেন, ভূপৃষ্ঠের নিচে এক বিপুল পানির ভাণ্ডার রয়েছে। শুধু তাই নয়, নীলাভ পাথরের মধ্যে নাকি লুকিয়ে আছে এই সমুদ্র!

পৃথিবীতে এখন অন্যতম বড় সমস্যা পানির সঙ্কট। অনেকে দাবি করেন, যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় তবে তা হবে পানির কারণেই। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতিবছর কমপক্ষে এক মাস প্রবল পানিকষ্টে ভোগেন। এমনন পরিস্থিতিতে ভৃপৃষ্ঠের নিচে বিশাল সমুদ্রের সন্ধান পাওয়ার দাবি নিঃসন্দেহে কৌতূহল জাগিয়েছে অনেকের মনে। এই সমুদ্রের পানি কতটা ব্যবহারযোগ্য, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইভানস্টনের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল গবেষক গত কয়েক বছর ধরে এই বিপুল পানিভাণ্ডারের খোঁজে ছিলেন। অবশেষে সাফল্য মিলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। গবেষকদের দাবি, ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৭০০ কিলোমিটার নিচে রয়েছে এই সুবিশাল সমুদ্র।

এই সমুদ্রের আকার-আয়তন নিয়েও কৌতূহল দেখা দিয়েছে।

গবেষকদের দাবি, বিশ্বের সব মহাসাগরের আয়তন যোগ করলে যা হয়, তার তিন গুণ আয়তন এই নতুন সমুদ্রের। রিংউডাইট নামে এক নীলাভ পাথরের মধ্যে নাকি রয়েছে এই সমুদ্র।

নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা গবেষক স্টিভেন জ্যাকবসেন জানান, পৃথিবীর বেশিভাগ পানি আসে ভূপৃষ্ঠের নিচ থেকেই।

তিনি বলেন, ‘রিংউডাইট পাথরটি স্পঞ্জের মতো। এই পাথরের পানিধারণ করার ক্ষমতা অনেক বেশি।’

রিংউডাইট পাথর কিভাবে এত পানি ধরে রাখতে পারে?

বিজ্ঞানীদের কথায়, এই পাথরের গঠন খুবই অদ্ভুত। পাথরের যে কেলাসাকার গঠন রয়েছে তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে পানিধারণ ক্ষমতার রহস্য। কেলাসাকার গঠন হলো পাথরের পরমাণুর বিন্যাস। এই বিন্যাসই হাইড্রোজেনকে আকর্ষণ করে। যার ফলে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতে পারে রিংউডাইট পাথর।

গবেষকেরা কিভাবে এই পানির সন্ধান পেলেন?

জানা গেছে, এই গবেষণায় মোট ‍দুই হাজারটি সিসমোগ্রাফ ব্যবহার করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে এসব সিসমোগ্রাফ ব্যবহার করা হয়েছে। সিসমোগ্রাফ যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে ৫০০টি ভূমিকম্পের তরঙ্গকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেন গবেষকেরা।

গবেষকদের দাবি, তরঙ্গগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু জায়গায় তার গতি কমে যায়। কেন এই গতি শ্লথ হয়ে গেল, তার অনুসন্ধান শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। সেই অনুসন্ধান করতে গিয়েই পৃথিবীর গভীরে থাকা এই বিশাল পানিভাণ্ডারের খোঁজ পান তারা।

বিশ্বে কিভাবে সমুদ্রের সৃষ্টি হলো তা নিয়ে অনেক তত্ত্ব রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হলো ‘মেলটেড কমেটস থিওরি’। এই তত্ত্বে বলা হয়েছে, ভূপৃষ্ঠে যে সব ধূমকেতু এসে পড়েছে সেই সব ধূমকেতুর বরফ গলেই তৈরি হয়েছে সমুদ্র।

কিন্তু রিংউডাইট পাথরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সমুদ্রের খোঁজ পাওয়ার পরে সেই ‘মেলটেড কমেটস থিয়োরি’ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গবেষকদের দাবি, পৃথিবীর সব সমুদ্রের পানির উৎসই এই ‘নতুন সমুদ্র’।

দাবি করা হচ্ছে, পৃথিবী নিজের গর্ভেই পানি ধারণ করে রেখেছিল। এত দিনে তার হদিস মিলেছে।

নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দাবি, যে নতুন পানির খোঁজ মিলেছে, তা যদি কোনোভাবে ভূপৃষ্ঠের ওপরে উঠে আসে তবে পুরো বিশ্ব ভেসে যাবে। এভারেস্টসহ পৃথিবীর কয়েকটি পার্বত্য এলাকাই পানি ওপরে থাকবে। বাকি সব তলিয়ে যাবে পানির নিচে।

এই সুবিশাল পানিভান্ডারের সব রহস্য লুকিয়ে রয়েছে রিংউডাইট পাথরের মধ্যে। এই পাথরের হাইড্রোজেনকে আকর্ষণ করার ক্ষমতাই গবেষণার মূল কথা। পৃথিবী তৈরির কোনো এক সময়ে হাইড্রোজেন আকর্ষণের এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়া এখনো চলছে।

পৃথিবীর নিচে বিপুল পানিভাণ্ডার নিয়ে গবেষণা এই প্রথম নয়। এর আগেও এমন এক তত্ত্ব সামনে এসেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেই পানিভাণ্ডারের খবর নিশ্চিত করা যায়নি।

২০১৪ সালে কানাডার একদল গবেষকদের গবেষণায় এমন সুবিশাল পানিরাশির ইঙ্গিত মিলেছিল। ওই গবেষকেরা আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসা এক হিরে নিয়ে গবেষণা করছিলেন। সেই গবেষণা করতে গিয়েই রিংউডাইট পাথরের খোঁজ পান তারা।

যদিও তখন রিংউডাইট পাথরের মধ্যে পানি থাকতে পারে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। নতুন আবিষ্কারে সেই তথ্য নিশ্চত হলো।

এখন দেখার বিষয় মার্কিন বিজ্ঞানীদের দাবি কতটা গৃহীত হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button