Trending

‘মন্দা পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে কোনো দিকনির্দেশনা নেই’

দীর্ঘদিন ধরে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে দেশের পুঁজিবাজারে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। 

তারা বলেছেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সবচেয়ে যেটা জরুরি ছিল—তা হলো বাজেটে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করা। কারণ, শেয়ারবাজার স্বাভাবিক গতিতে না ফিরলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতি ফেরানো কঠিন হবে। কিন্তু, প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজার কোনো প্রণোদনা পায়নি। উলটো মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর বসানো হয়েছে। যদিও বাজেট পেশের আগে থেকেই বাজার-সংশ্লিষ্টরা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল গেইনের (মূলধনি মুনাফা) ওপর কর আরোপ না করা, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান আরও বাড়ানো। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয়ের প্রথম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের বাইরে রাখা ইত্যাদি। কিন্তু এসব দাবি শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়নি।

বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নতুন করে মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপের এ প্রস্তাব করেছেন। ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনি মুনাফায় কোনো কর বসবে না। তবে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করলে তার ওপর কর দিতে হবে। এছাড়া, আগামী অর্থবছর থেকে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির জন্য এই হার ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো, একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকা এবং বার্ষিক সর্বমোট ৩৬ লাখ টাকার বেশি সব খরচ ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে হতে হবে। বর্তমানে এই শ্রেণির প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২৭ শতাংশ কর দিতে হয়। এছাড়া, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে করপোরেট কর আগের মতোই ২০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। শর্ত পূরণ না করলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে এ করহার হবে সাড়ে ২২ শতাংশ। এ হিসেবে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান আরও কমেছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে গতকাল বলেন, আগামী বাজেটে শেয়ারবাজার নিয়ে কোন দিক নির্দেশনা নেই। কিন্তু বর্তমান মন্দাবস্থায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করা উচিত ছিল। সাবেক এই অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো করতে সরকারি-বেসরকারি ভালো কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। না হলে বাজার স্থিতিশীল হবে না। পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ গতকাল বলেন, বর্তমানে মন্দাবস্থায় শেয়ারবাজারের কোনো প্রণোদনা পায়নি। উলটো বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করের ব্যবধান আরও কমানো হয়েছে। এ অবস্থায় বাজারের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। বিশিষ্ট এই অর্ধনীতিবিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলছেন, শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে। কিন্তু আমরা বাজেটে কী দেখলাম? প্রস্তাবিত বাজেটে, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান আরও কমানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন? এ অবস্থায় শেয়ারবাজারে একটি ভালো কোম্পানি কেন তালিকাভুক্ত হবে?

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button