Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Trending

মরিস হেরজগের ‘অন্নপূর্ণা’—১

১৯৫০ সালে প্রথমবার এক ফ্রেঞ্চ দল অন্নপূর্ণা সামিট করে, যা যেকোনো মানুষের প্রথম কোনো আটহাজারী শৃঙ্গে সফলতা। ওই ঐতিহাসিক অভিযানের দলনেতা মরিস হেরজগ ফ্রান্স আলপাইন ক্লাব এবং ফ্রান্স মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশনে এক সংক্ষিপ্ত বিবরণী জমা দেন। এই লেখাটি সেই বিবরণীর আলোকেই অনূদিত।

প্রকৃতির এক অনিন্দ্য সুন্দর বিস্ময় হলো হিমালয়। আকাশচুম্বী সুদৃশ্য সব পর্বতের এই আবাসে কে না পা রাখতে চায়! অনেক দিন ধরে একে ছোঁয়ার স্বপ্ন আমিও বুকে লালন করেছি। মাঝেমাঝে ভাবতাম এই স্বপ্ন হয়তো অধরাই থেকে যাবে। এমন সময় হঠাৎ আহ্বান এলো হিমালয়ে অভিযানের। সুযোগ এলো স্বপ্নের হিমালয়ে পা রাখার।

শেষ মূহূর্তের দৌড়ঝাঁপে কদিন খুবই ক্লান্তিতে কেটেছে। তাই বিমান উড়তেই ভারত পর্যন্ত যেভাবে ঘুমিয়েছি তাতে কেউ আমাকে কুম্ভকর্ণ ভাবলেও দোষ দেওয়া যায় না। দিল্লিতে পৌঁছে আড়মোড়া ভাঙতেই দেখি স্বাগত জানাতে সদলবলে হাজির ফ্রেঞ্চ রাষ্ট্রদূত।

৪ এপ্রিল, সোমবার। মালামাল সব পুরাতন দিল্লি স্টেশন থেকে ট্রেনে লখনৌ নিয়ে যাবে শ্যাটজ, লেচেনাল এবং টেরি। স্টেশনটা নোংরা জামা পরিহিত কুলিতে গিজগিজ করছে। জামাগুলো এক সময় সাদা রঙের ছিল। কিন্তু এখন তা ধূসর। সর্বত্র লালচে মরচে পড়া ছোপছোপ দাগ। এদের সাথেই কাটলো ক্লান্তিকর একটা দিন।

পরদিন উড়ে গেলাম লখনৌ। তিনজন লম্বা দাড়িওয়ালা শিখকে ককপিটে দেখে আঁতকে উঠলাম। এদের হাতেই প্রাণ সঁপে দিচ্ছি! কিছুক্ষণ পরে অবশ্য ওরা ‘আরএএফ’-এ প্রশিক্ষণ নিয়েছে, যুদ্ধও করেছে শুনে নিঃশ্বাস আবারো স্বাভাবিক হলো।

লখনৌতে সব মালামাল আবার তুলে দিলাম পরবর্তী গন্তব্যের ট্রেনে। হঠাৎ রহস্যময় মন্ত্র জপতে থাকা এক সাপুড়ের সাথে ধাক্কা খেলেও ঝুড়িতে থাকা ওর সন্তানেরা প্রতিশোধে তেমন আগ্রহ না দেখানোতে প্রাণে বেঁচে গেলাম এই যাত্রায়। নেপাল সীমান্তের আগের সর্বশেষ স্টেশনে আমাদের অপেক্ষায় ছিল গাট্টাগোট্টা গড়নের একদল শেরপা। আমাদের নিয়ে জিপ ছুটলো মনুষ্য বসতিহীন, ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা দিয়ে। বনে দাবানলের তীব্রতা দেখে আমরা হতবাক। ফ্রান্স নিঃসন্দেহে একে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে আখ্যা দিত। কিন্তু এখানে যেন এটিই স্বাভাবিক!

বুটওয়ালে নেপাল সরকার আমাদের জন্য ডাল-পালা দিয়ে তৈরি কুঁড়েঘরের ব্যবস্থা করেছে। আমাদের দেখাশোনার দায়িত্বে আছে এক সুদর্শন নেপালী তরুণ অফিসার জিবি রানা। কাজ চালানোর মতো ইংরেজি বলে। টুপিতে লাল ফিতে, ঐতিহ্যগতভাবে প্যান্টের বাইরে শার্ট বের করা, চোখের চাহনি প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর।

ছয় টন মালামাল ভাগাভাগি করে ১৬০ জন কুলি, ৮ জন শেরপা নিয়ে দীর্ঘ কাফেলার যাত্রারম্ভ হলো। লেচেনাল এবং টেরি আগেই ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে গেল। কয়েকঘণ্টা পর দেখি ওদের বাহকেরা এক আস্তাবলে বাঁধা। মজা করে বলল পর্বতারোহীদের ঘোড়ার পিঠে না চড়ে পায়ে হাঁটাই উচিত।

পিছনে ঘোড়ায় চড়ে বহর নিয়ে আসছে রানা। সাথে আছে বেহালা, ছাতা, সেবক এবং বাবুর্চির দল। ঠিক যেন পটে আঁকা ছবি। ইচ্ছা হলে রানা বেহালা নিয়ে বসে। সূর্যের আলো থেকে বাঁচাতে ওর সেবক মাথার ওপর ধরে ছাতা। এরপর শুরু হয় দ্রুতলয়ের গোর্খা সুর, যা আজো অলস সময়ে কানে বাজতে থাকে আমার।

মানচিত্র বলছে তানজেনের ওপরের পাহাড়ে দর্শন দিবে হিমালয়। এখানে হুটহাট মেঘ এসে চারপাশ ঢেকে দেয়। তাই পৌঁছেই দ্রুত পাহাড়ে উঠলাম। ১৯৩৬ সালের স্বদেশী অভিযাত্রীদের মুখে হিমালয়ের সৌন্দর্যের অনেক বর্ণনা শুনেছি। কিন্তু স্বচক্ষে যা দেখলাম তা সব বর্ণনার চেয়েও মোহনীয়। মেঘ ফুঁড়ে বেরিয়ে আছে দূরের বরফের চূড়াগুলোর ঝলমলে দেয়াল। এ এক অদ্ভুত মায়াজাল!

পথে প্রথমবার এক নেপালি বিয়ে দেখলাম। কনেকে রেশমি চাদরে আড়াল করতেই গানের তালে শুরু হলো বরের উদ্দাম নাচ। অনেকক্ষণ পর সে ঘেমে-নেয়ে ক্লান্তিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। বিয়ে করতে পেরে এত খুশি!

২২ এপ্রিল। সুবিস্তীর্ণ সমভূমির সামনে সমীহ জাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধৌলাগিরি। এর চূড়ায় দাঁড়াতে এসেছি জেনেও সেদিকে চোখ মেলে দেখতেই ভয়মিশ্রিত এক অদ্ভূত অনূভুতি হল। কিছুটা দূরে অনেক প্রার্থনা-পতাকার মাঝে ছোট্ট ছবির মতো সুন্দর গ্রাম টুকুচে। কিছুক্ষণ ঘুরে-ফিরে বৌদ্ধ মন্দিরের কাছেই ঠিক করলাম আমাদের আস্তানা।

ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে অগম্য নীলিগিরি। এর ৪৫০০ মিটারের দেয়াল একরকম ঘোরের মধ্যে রেখেছে। আশপাশে দেখতে গেলেই তা পরিণত হচ্ছে ছোটোখাটো অভিযানে। তাই ঠিক হলো দুই-তিনটা দলে ভাগ হয়ে যাব। প্রথম দফায় ধৌলাগিরি এবং অন্নপূর্ণার উত্তর এবং পূর্ব দিক চষে বসলাম পরিস্থিতি বিশ্লেষণে। ধৌলাগিরির উত্তরে বিস্তীর্ন মিরিস্তি-খোলা উপত্যকা।

এদিক দিয়ে তিলিচো এবং এক বিশাল হ্রদ পেরিয়ে যাওয়া যাবে অন্নপূর্ণা। মানচিত্রের সাথে বাস্তবের খুব একটা মিল নেই। তাই শুরুতে ঘোরপাক খেলেও এখন মোটামুটি ভালো ধারণা হলো। দলের সদস্যরা ধৌলাগিরি নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নয়। এদিকে সময় ফুরিয়ে আসছে। ৫ জুন থেকে এদিকে বর্ষা শুরু হয়। তাই যা করার দ্রুত করতে হবে।

১৪ মে সবাইকে নিয়ে বসলাম কৌশল ঠিক করতে। এই কদিনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সবাই মতামত দিল। সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আমার। ধৌলাগিরিতে সাফল্যের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। স্থানীয় ভিক্ষুও ওদিকটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার পরামর্শ দিলেন। ভেবে দেখলাম ওখান থেকে খারাপ আবহাওয়া বা দুর্ঘটনাতে ফেরা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। সবার প্রাণের ভার আমার কাঁধে। তাই ধৌলাগিরিকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।

অন্যদিকে উত্তর দিক দিয়ে অন্নপূর্ণার গোড়ায় যাওয়া যাবে। কিন্তু ওপরে যাবার পথ আছে কি না জানি না। তবুও গন্তব্য স্থির হলো অন্নপূর্ণা। একসাথে সবাই গিয়ে পথ না পেলে হতাশা বাড়বে। তাই প্রথম দলে গেল লেচেনাল, শ্যাটজ এবং টেরি। পরদিন বেরোলাম আমি, কৌজি এবং রেবুফেট। আইজ্যাক ও ঔদুতের দল তৈরি হলো রসদ নিয়ে। চতুর্থ দল প্রস্তুত থাকবে আমাদের ইশারা পেলে বেরিয়ে পরতে।

আবহাওয়া শত্রুতা করছে। মেঘ ও তুষারে ভিজে পথ বড্ড পিচ্ছিল। মিরিস্তি-খোলা পৌঁছাতেই শ্যাটজ জানাল যে লেচেনাল এবং টেরি উত্তর-পশ্চিম দেয়াল দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। সন্ধ্যায় ওরা ক্লান্ত হলেও উদ্যমের সাথেই ফিরল। আল্পসে এদের সাফল্য অনেক। সারাদিন ওই অভিজ্ঞতা যথেষ্ট কাজে লাগিয়েছে। ওরা ওই পথে ভালোই সম্ভাবনা দেখছে। ওদের বিশ্রাম নিতে পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত তোলা রাখলাম পরদিন ভোরের জন্য।

সকালে ওদের প্রস্তাবিত পথ দেখলাম। কিছু অংশ বেশ কঠিন যেখানে মালবাহকদের জন্য দড়ি লাগবে। এমন কিছু বিপদজনক অংশও দেখলাম যা এড়াতেই ধৌলাগিরি ছেড়ে এদিকে আসা। রেবুফেট ও লেচেনালকে উত্তর হিমবাহে পাঠালাম অন্য পথের খোঁজে। আমি ও টেরি এগিয়ে গেলাম এই পথে। সম্পূর্ণ বাতিল করার আগে নিশ্চিত হতে চাই। ছয়হাজার মিটারের উপরে এক খাঁড়া ঢাল থেকে ক্রমাগত গড়িয়ে পরছে তুষারের গুঁড়ো। লক্ষণ সুবিধার নয়। দ্রুত ওই বিপদজনক ঢাল থেকে বেসক্যাম্পে ফিরে ভাবতে বসলাম বিকল্পের কথা।

ভোরে উত্তর হিমবাহে যাওয়া দলের খোঁজে বের হলাম। এক উঁচু স্থানে উঠতেই চোখে পরল ভবিষ্যৎ ক্যাম্প-১ এ দাঁড়িয়ে আছে ওরা। এখান থেকে পর্বতকে ভয়ানক লাগছে। উঁচু ধারালো শৈলশিরা, সুবিস্তীর্ণ বরফের দেয়াল গিয়ে মিশেছে সামিট রিজে। ক্রমাগত ধেয়ে আসা তুষারধস এই বিশালতার দৃশ্যে যোগ করছে নতুন মাত্রা। অপলক তাকিয়ে মোহাবিষ্ট হয়ে ভাবছি এই বিশালতা পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছি!

একটা পথ দেখে মনে হচ্ছে এটি দিয়ে চূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব। শুরুতে পাথর ও বরফ মেশানো এক বিশাল আইসফিল্ড। এটা পেরিয়ে আছে এক ছোট আইসফিল্ড (নিচে থেকে ছোট মনে হলেও আসলে অনেক বড়)। সেখান থেকে খুব ঢালু কিছু তুষারাবৃত ঢাল পাড়ি দিতে হবে। এরপর সমাধান খোঁজা লাগবে এক গোলকধাঁধার। বড় একটা ফাটল আড়াআড়ি পেরিয়ে উঠতে হবে রিজে। সেখানে কঠিন কিছু থাকতে পারে। এরপর আছে কাস্তেকায় এক গোলমেলে হিমবাহ। এরপর সামিট রিজ নিয়ে যাবে শীর্ষে। সফল হলে এটিই হবে অদ্যাবধি কোনো মানুষের ছোঁয়া সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া।

টুকুচে থেকে আমরা চারদিন দূরে। সময় নষ্ট না করলে সফলতার সুযোগ আছে জানিয়ে বার্তা পাঠালাম। শেরপাদের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য সার্কি বার্তাবাহক হিসেবে উপযুক্ত। কিন্তু ইংরেজি না জানা সার্কিকে কথাগুলো অঙ্গভঙ্গি করে বুঝাতে হলো। ওর ক্ষিপ্রতার ওপর অভিযানের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। দন্তবিকশিত এক হাসি দিয়ে সে নিশ্চিত করল সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। পরে জেনেছি চারদিনের রাস্তা অনবরত দৌড়ে দেড় দিনেই পাড়ি দিয়েছে ও।

সবাই দ্রুত বেসক্যাম্পে চলে এলো। প্রত্যেকে ১৫-২০ কেজি ভার বহন করে ছয়হাজার মিটার উচ্চতায় দুইটা তাঁবুসহ তৈরি করলাম ক্যাম্প-২। এই বিশাল আইসফিল্ড পাড়ি দিতে গিয়ে ঘেমে-নেয়ে একাকার। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে সূর্যিমামা ঠিক মাথার উপর রাগ ঝাড়ছে। চারপাশের তুষারের দেয়ালে আলো ঠিকরে আবার ধেয়ে এসে আমাদের ঝলসে দিচ্ছে। লেচেনালের মস্তিষ্ক বেশ উর্বর। একটা ব্যাগ দিয়ে দুইটা হুডি বানিয়েছে ও। ওই হুডিতে ওদের মনে হচ্ছে কু-ক্লাক্স গোত্রের সদস্য! টেরি এবং আমার একমাত্র ভরসা সানবার্ন ক্রিম। স্থানটা যেন একটা জ্বলন্ত উনুন। একফোঁটা বাতাসও নেই। ঘেমে স্নান করতে করতেই উঁচুতে উঠছি। এই উচ্চতায় হাল্কা ব্যাগও অনেক ভারী মনে হয়। ক্লান্তিতে এগিয়ে চলার ইচ্ছাও প্রায় শেষ। বর্ষা দ্রুত এগিয়ে আসছে। প্রত্যেকটা দিনই গুরুত্বপূর্ণ ভেবে থামার ইচ্ছা দমিয়ে রাখছি। শেষ পর্যন্ত জিতলেই সফল হবে এই লড়াই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
toto slot
bacansport
slot gacor
slot toto