মাটির ওপরে-নিচে যুদ্ধ: ২৪ ঘণ্টায় ২১৪ ফিলিস্তিনি নিহত
বিমান ও নৌবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় ইসরায়েলি ট্যাংক বহর গাজার প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে। গতকাল দুপুরের দিকে এই বহর গাজার উপরিস্থল দখলে নিতে সক্ষম হয়। এ কারণে এবার যুদ্ধ নতুন পর্যায়ে ধাবিত হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। কারণ গাজার বিস্তীর্ণ ভূগর্ভজুড়ে রয়েছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের যুদ্ধ টানেল, যেগুলোতে প্রবেশ করা ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষে অনেকটাই অসম্ভব। এ অবস্থায় তারা এখন অনেক বেশি শক্তিশালী বোমা এবং চেতনানাশক গ্যাস হামলার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। এতে যুদ্ধ এখন মাটির ওপরে এবং নিচে পর্যন্ত বিস্তৃত হতে চলেছে।
এক খবরে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের স্থলবাহিনী প্রবেশের পর হামাস যোদ্ধাদের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের সুনির্দিষ্ট অবস্থান চিহ্নিত করে একে অকার্যকর করার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে। এই উদ্যোগকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের পরবর্তী পর্যায় হিসেবে অভিহিত করেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, এ অঞ্চলে হামাসের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থান, গাজা শহরকে (গাজা সিটি) তারা চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। ইসরায়েল আরও দাবি করছে, তাদের সেনাবাহিনী এই জনবসতিপূর্ণ শহরের একেবারে কেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউভ গ্যালান্ট জানান, ‘ইসরায়েলের লক্ষ্য এখন একটাই, সেটা হলো গাজায় অবস্থানরত হামাসের যোদ্ধা, তাদের অবকাঠামো, কমান্ডার, বাঙ্কার ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংস করা।
’ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি জানান, ইসরায়েলের কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের সদস্যরা বিস্ফোরক উপকরণ ব্যবহার করে হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করছে। তিনি জানান, এই সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কটি গাজার মাটির নিচে কয়েক শ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা ‘হানাদার বাহিনীর’ ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে। সূত্র জানায়, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো এখন পর্যন্ত স্থল হামলায় তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ থেকে হামাসের যোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ট্যাংকগুলোকে অকার্যকর করে দিয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষে মৃত্যু ও দুর্ভোগের মাত্রা কল্পনার বাইরে। মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ানো লিন্ডমেয়ার বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কমপক্ষে শত হামলা হয়েছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪ হাজার ১০০ শিশু। গাজাজুড়ে আবাসিক এলাকার লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে, এতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৪ জন নিহত হয়েছেন। ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১০ হাজার ৫৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলিদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি।