USA

মার্কিন কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর ভাষণের প্রতিবাদ, বিক্ষোভে উত্তাল ওয়াশিংটন

মার্কিন কংগ্রেসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ভাষণের প্রতিবাদে বুধবার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ওয়াশিংটন। এদিন ক্যাপিটল হিলের বাইরে এবং শহরটির বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ তাদের ওপর আক্রমণ করে। নারীসহ বহু বিক্ষোভকারীকে আটকের ঘটনাও ঘটে। পুলিশের নির্যাতন উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুকে খুনি ও মিথ্যুক বলে সেøাগান দেয়।

গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতেও সেøাগান ওঠে। বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপার স্প্রে ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের যৌথ অধিবেশনে নেতানিয়াহু ভাষণ দেওয়া শুরু করেন। এর আগেই ক্যাপিটার হিলের বাইরে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।

ক্যাপিটল পুলিশের দাবি, নেতানিয়াহু বক্তৃতা শুরু করার কিছুক্ষণ আগে কিছু বিক্ষোভকারী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভকারী পুলিশের আদেশ অমান্য করেছে। যারা আইন ভঙ্গ করে পুলিশের দেওয়া রেড লাইন অতিক্রম করার চেষ্টা করেছে তাদের ওপর পিপার স্প্রে ব্যবহার করা হয়েছে। খবর আলজাজিরা ও এএফপির। 
কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ৭ অক্টোবরের হামলাকে নিউইয়র্কে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার সঙ্গে তুলনা করেন। গাজা যুদ্ধে জয়ের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে একসঙ্গে দাঁড়ায় সেখানে আমরা জিতেছি, তারা হেরেছে। হামাসের সমালোচনা করে নেতানিয়াহু বলেন, হামাস নারীদের ধর্ষণ করেছে, পুরুষদের শিরñেদ করেছে, শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। ভাষণে গাজা থেকে অনেক জিম্মি উদ্ধারের জন্য ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন নেতানিয়াহু।

এ ছাড়া যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরাইলের পাশে থাকায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। এর আগে নজিরবিহীন কড়া নিরাপত্তায় নেতানিয়াহুর ভাষণের আগে ক্যাপিটল ভবনের চারপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকালে ভবনটির সামনে অর্থোডক্স ইহুদিরা রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। দূরে পুলিশের সাইরেন বাজলে বিক্ষোভকারীরা ‘বিশ্বব্যাপী ইহুদিরা ইসরাইলি রক্তাক্ত বর্বরতার নিন্দা জানায়’ এবং ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ (ফিলিস্তিন মুক্ত হোক) লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে।

আরেকটি প্ল্যাকার্ডে নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানানো হয়। নেতানিয়াহু সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেন। এরপর থেকেই কার্যত বিক্ষোভ শুরু হয়। 
বুধবার কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার পরে, তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করবেন তিনি। 
নেতানিয়াহু মার্কিন কংগ্রেসে যে ভাষণ দিয়েছেন তা ছিল মিথ্যায় ভরা। এ ছাড়া তার ভাষণ শুনে মনে হয়নি যে, তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হতে চান। এ কথাগুলো বলেন হামাসের সিনিয়র নেতা সামি আবু জুহরি। বুধবার এক সাক্ষাৎকারে জুহরি বলেন, নেতানিয়াহুর ভাষণ ছিল মিথ্যায় ভরা। প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থতা ও পরাজয় ঢাকতে তার সেনাবাহিনী গাজার জনগণের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ করেছে, তার ওই ভাষণ সেগুলো ঢাকার চেষ্টা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যে কোনো পক্ষ থেকে ইসরাইলের সঙ্গে কোনো ধরনের জোট ‘শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ করা হবে। নেতানিয়াহুর ভাষণের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। তিনি বলেন, হামাসের হাতে বন্দি ইসরাইলি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে চুক্তির বিষয়ে কোনো কথা বলেননি নেতানিয়াহু। সামাজিক মাধ্যমে এক পাস্টে ইয়ার লাপিদ বলেন, গাজায় হামাসের হাতে বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো চুক্তির কথা না বলেই বক্তব্য শেষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। 
নেতানিয়াহুর ভাষণ নিয়ে কথা বলেন সিনিয়র মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর কারণে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশু অনাহারের মুখোমুখি হচ্ছে। ফিলিস্তিনে সহায়তা বন্ধ অব্যাহত রেখেছে তার চরমপন্থি সরকার। নেতানিয়াহু একজন যুদ্ধাপরাধী ও মিথ্যাবাদী শাসক। মার্কিন কংগ্রেসে নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধের লক্ষ্য এবং সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও শান্তি নিয়ে উপত্যকার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন। তবে তার এ বক্তৃতা স্যান্ডার্সসহ বহু সিনেটর বর্জন করেন। এমনকি তারা নেতানিয়াহুর কংগ্রেসে আসারও বিরোধিতা করেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button