Bangladesh

মার্কিন বাজারে জিএসপি বাতিলের এক দশক পরেও তা ফিরছে না কেন

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো এই সুবিধা ফিরিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে শ্রম পরিবেশ উন্নত করার যে শর্তের কথা বলে জিএসপি তুলে নেয়া হয়েছিল তার বেশিরভাগ এরই মধ্যে পূরণ করা হলেও শ্রম অধিকারের কিছু বিষয় নিয়ে এখনো আপত্তির জায়গা রয়েছে। যার কারণে হয়তো এই সুবিধা পেতে বিলম্ব হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য।

তবে যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়েছিল, সেটি দেশের ওপর এক ধরণের চাপ প্রয়োগের প্রচেষ্টা ছিল বলেও মনে করেন তারা।

কর্ম পরিবেশ উন্নত করার শর্ত দিয়ে ২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়।

এর কারণ হিসেবে তাজরিন ফ্যাশনসে আগুন এবং রানা প্লাজা ধসের পর কল-কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নত করা সহ শ্রম অধিকারের বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর নাখোশ হওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

এর মধ্যে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানো এবং এ বিষয়ক বাধা দূর করার লক্ষ্যে এক দশক আগে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি বা সংক্ষেপে টিকফা’ চুক্তি সই করা হলেও এর আওতায় জিএসপি সুবিধা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

এবারের টিকফা বৈঠকে যা হলো
বুধবার রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি বা সংক্ষেপে টিকফার সপ্তম বৈঠক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই বৈঠকের পর ঢাকায় থাকা মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে বৈঠকে আমেরিকা ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিশেষ করে শ্রম সংস্কার, বিনিয়োগ পরিবেশ ও ডিজিটাল বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে এমন নীতি, মেধা সম্পদের সুরক্ষা ও আইনের প্রয়োগ এবং কৃষি খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এতে বলা হয়, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে শ্রমিকদের সংগঠন করার স্বাধীনতা ও যৌথ দর-কষাকষি করতে পারার অধিকার সম্প্রসারণে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে এই বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী রফতানি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি।

বৈঠক শেষে এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশী পণ্য যাতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় সে বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

বিশেষ করে আমেরিকা থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে যে পোশাক তৈরি হবে এবং সেই পোশাক যখন আমেরিকায় রফতানি হবে তখন শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

‘এ বিষয়টি তারা নোট করেছেন এবং আমাদের যুক্তিগুলো মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। তারা বলেছেন এ বিষয়ে কোনো সুবিধা দেয়া যায় কি না সে বিষয়ে চিন্তা করবেন। উচ্চ পর্যায়ে আলাপ করবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বলেছি গত ১০ বছরে আমরা অনেক উন্নতি করেছি বিশেষত তাদের যে কনসার্ন ছিল লেবার রাইটসসহ অন্যান্য ইস্যুতে।’

‘সুতরাং ডব্লিউটিও-তে যে আলোচনা হচ্ছে সেখানে আমরা আমেরিকার সমর্থন কামনা করছি। তারা বলেছেন জেনেভায় তাদের ও আমাদের যে মিশন আছে সেখানে একসাথে কাজ করছেন। তারা বিষয়টি দেখবেন।’

জিএসপি কতটা জরুরি?
জিএসপি বাতিলের সময় পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হলেও তৈরি পোশাক খাতটি যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধার আওতাভুক্ত ছিল না। ফলে এই খাতের ওপর জিএসপি সুবিধার কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা তা নিরূপণ করা যায় না।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রফতানির মাত্র এক শতাংশ জিএসপি সুবিধার আওতাভুক্ত।

জিএসপি সুবিধা পায় এমন সব পণ্যের তালিকায় রয়েছে তামাকজাত দ্রব্য, প্লাস্টিক, সিরামিকের তৈজসপত্র এবং খেলাধুলার সামগ্রী।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি ২.৯৫% শতাংশ বেড়ে ১.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১.৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জিএসপি সুবিধা না থাকার ফলে বাংলাদেশের রফতানি একেবারে নেতিবাচক হয়েছে সেটা বলা যাবে না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, জিএসপির আর্থিক মূল্যমান এবং তার জন্য যে আর্থিক ক্ষতি সেটা যে অনেক বড়, তা বলা যাবে না।

‘একই সাথে আমেরিকায় বাজার প্রবৃদ্ধি না কমলেও ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাকের মার্কেট শেয়ার যে পরিমাণে বেড়েছে এবং প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেছে, সেই তুলনায় জিএসপি সুবিধার অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণে আমেরিকার বাজারে প্রবৃদ্ধি থাকলেও শেয়ার সেই তুলনায় বাড়েনি’, জানাচ্ছেন খন্দকার মোয়াজ্জেম।

তার মতে, জিএসপি সুবিধা থাকলে আমদানির শুল্ক দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ফলে অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর সাপেক্ষে বাংলাদেশের পণ্যগুলোর প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পায়।

সেটা মাথায় রেখে আমদানিকারকরাও বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে উৎসাহিত হন।

ফলে এটি পুনর্বহাল হলে অন্তত ওই খাতগুলোর পণ্যে একটা প্রভাব দেখা যেতো।

তবে জিএসপি শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং এটি প্রত্যাহারের একটা রাজনৈতিক ইমেজ-গত বিষয় রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জিএসপি বাতিলের সময় বাংলাদেশের কর্মপরিবেশের নিরাপত্তাহীনতার যে শর্ত দেয়া হয়েছিল সেটি এক ধরণের বৈশ্বিক নেতিবাচক ইমেজ, দেশের কর্মপরিবেশ বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতের কর্মপরিবেশ সম্পর্কে তৈরি করেছিল। আর্থিক খাতের সঙ্কটের তুলনায় সেই ইমেজের সঙ্কটটিই বেশি।’

জিএসপি ফিরতে বাধা কোথায়?
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা বাতিলের পর অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ড এর মতো জোটের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার কারণে বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ নিয়ে নেতিবাচক ইমেজ সঙ্কট অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সেই প্রেক্ষাপটেও যদি এখনকার কর্মপরিবেশ পুনর্মূল্যায়ন করতে বলা হয়, বিশেষ করে মার্কিন ইউএসটিআরকে পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয় তাহলে সেটি জিএসপি ফিরিয়ে দেয়ার দাবির তুলনায় বেশি কার্যকর হবে।

তিনি বলেন, ‘জিএসপি বাতিলের সিদ্ধান্ত যখন গৃহীত হয় তার আগে থেকেই বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ নিয়ে মার্কিন শ্রম সংগঠনগুলোর এক ধরণের শক্ত অবস্থান ছিল যে মার্কিন ইউএসটিআর যাতে বাংলাদেশের ব্যাপারে কড়া অবস্থান নেন।’

রানা প্লাজার ধসের পর তারা তাদের সেই দাবিকে আরো জোরালোভাবে তুলে ধরতে পেরেছে। ফলে এক ধরনের চাপ সেসময় ছিল।

এখনকার প্রেক্ষাপটে এসব চাপ তুলনামূলকভাবে কমে যাওয়ার কথা। তবে শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের সব জায়গায় ত্রুটি দূর হয়নি বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদ খন্দকার মোয়াজ্জেম।

‘সেই দুর্বলতা সাপেক্ষেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অধিকার রক্ষা গ্রুপগুলো এখনো বাংলাদেশের এই পরিবেশের বিষয়গুলোর ওপর শক্তভাবে নজর রাখছে।’

তিনি বলেন, ‘ফলে এটিকে যতটা ডিপ্লোম্যাটিক ইনিশিয়েটিভ বলবেন তার চেয়ে মোর ইম্পরট্যান্ট হলো ইন্টারনাল লেবার প্র্যাকটিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা বা আর্থিক সংস্থাগুলোর লক্ষ্য বা ভূমিকা- এই জায়গাগুলো এখনো উইক বা দুর্বল।’

‘আমার ধারণা যথেষ্ট মাত্রায় উন্নতি না হলে আমাদের পক্ষে কূটনৈতিকভাবে এই বিষয়গুলোর সুবিধা নেয়া কষ্টকর হবে।’

তবে কর্মপরিবেশে যেহেতু বড় ধরণের উন্নতি হয়েছে তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ চাইলে এ বিষয়গুলো পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, বিজিএমইএ-এর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতর ইউএসটিআর এর একটি দল তাদের সাথে আলোচনা করেছে।

যেখানে মার্কিন প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এটি প্রত্যাহার করা গেলে তৈরি পোশাক শিল্পে রফতানি আরো বাড়তো।

শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ওই দলটি বলেছে যে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অনুমোদিত নয়। তবে তারা কর্তৃপক্ষের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছে।

‘ওরা এসেছিল মানবাধিকার, শ্রমিকদের বিষয়ে কি কাজ হয়েছে তা দেখতে। আমি বলেছি যে বোর্ড গঠন করা হয়েছে, শ্রমিক, মালিক ও সরকার – তিন পক্ষ মিলে কাজ করছে।’

আজিম আরো বলেন, জিএসপি না পাওয়ার জন্য এই খাতের কোনো ব্যর্থতা তিনি দেখেন না। কারণ যেসব শর্ত বেধে দেয়া হয়েছিল তার বেশিরভাগই পূরণ করা হয়েছে।

‘এরপরও যদি না দেয় সেটা দুঃখজনক।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d