Hot

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮, ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ মানুষ, ত্রাণ যাচ্ছে না দুর্গম গ্রামে, ফেনী এখনও বিচ্ছিন্ন নেই বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট

বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেটও উধাও। হাসপাতাল, ব্যাংকসহ জরুরি প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় সেবা বন্ধ। চারদিকে পানি থইথই করলেও এক চুমুক বিশুদ্ধ পানির বড্ড অভাব। এক ইঞ্চি জায়গাও বাকি নেই, যেখানে পানির স্রোত নেই। এমন দুঃসময় হয়তো কখনও আসেনি তাদের জীবনে। তবু ভয়াবহ বানের সঙ্গে চার দিন ধরে চলছে যুদ্ধ! ফেনীর পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী এখনও বিচ্ছিন্ন। কারও সঙ্গে নেই কারোর কথন। বিশেষ করে তিন উপজেলার দুর্গম এলাকার মানুষ কেমন আছেন, তাও সবার কাছে অজানা। আটকা পড়ে আছে লাখ লাখ মানুষ। অনেকে গ্রামে থাকা পরিবারের সদস্যের নাম-ঠিকানা দিয়ে উদ্ধার তৎপরতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দেয়ালে লিখছেন। তবে নৌযান সংকটের কারণে উদ্ধার তৎপরতায় তেমন গতি আসেনি।

ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ এখন বাঁচার জন্য লড়ছে। কেউ অভুক্ত, কারোর জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম আধা পেট খেয়ে। ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকে স্থানীয় প্রশাসনের চালু করা আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েও পাচ্ছে না খাবার। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে গবাদি পশু। সরকারের পাশাপাশি বন্যাদুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন। তবে দুর্গত এলাকায় সেসব ত্রাণ তেমন যাচ্ছে না। সড়কের দু’পাশেই বিতরণ হচ্ছে বেশি। ফলে সেসব এলাকার অসহায় মানুষ উদ্বেগ, অনিশ্চয়তার মধ্যে বুভুক্ষু দিন কাটাচ্ছে। 
 খাদ্য, সুপেয় পানি আর চিকিৎসার সামগ্রী দ্রুত পৌঁছানো না গেলে এসব এলাকার মানুষ আরও বিপর্যয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। 

অবশ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যাকবলিত এলাকায় নগদ ৩ কোটি ৫২ লাখ, শিশুখাদ্য বাবদ ৩৫ লাখ, গোখাদ্য বাবদ ৩৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ত্রাণকাজের অংশ হিসেবে ২০ হাজার ১৫০ টন চাল ও ১৫ হাজার শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান জানান, বন্যায় দেশের ১২ জেলায় মৃতের সংখ্যা শনিবার পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮-তে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৫, কুমিল্লায় ৪, নোয়াখালীতে ৩, কক্সবাজারে ৩ এবং লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীতে একজন করে মারা গেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। সচিব আরও বলেন, বন্যাকবলিত ১১ জেলার ৭৭ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন ও পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৮৭টি। ১১ জেলায় এখন পানিবন্দি আছে ৯ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা দিতে ৭৭০টি মেডিকেল টিম করা হয়েছে। 

সচিব আরও জানান, ফেনীতে স্বাস্থ্যসেবা দিতে ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চালু করা হয়েছে একটি ভি-স্যাট। ভারী বর্ষণ কমায় গোমতী, হালদা, মুহুরী নদীর পানি পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উন্নতি হতে পারে। তিনি বলেন, পানি ধারণক্ষমতার কাছাকাছি ও বিপৎসীমায় পৌঁছে যাওয়ায় রাঙামাটির কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কপাট শনিবার রাতে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাঁধ থেকে পানি ছাড়া হলে এর প্রভাব আশপাশের এলাকায় পড়তে পারে, সেজন্য এরই মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ত্রাণ আছে, ত্রাণ নেই
ফেনীর ফুলগাজীর মুন্সীরহাট থেকে গতকাল সেবীকা রানী দাশ ও তাঁর দুই মেয়েকে ট্রলারে উদ্ধার করে আনে উদ্ধারকারী দল। ট্রলার থেকে যখন তাঁকে নামানো হয়, তখন তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। তিন দিন ভাত না খেয়ে থাকার কথা জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বুধবার রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ি। হঠাৎ ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। তড়িঘড়ি করে পরিবার নিয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসা ভবনে আশ্রয় নিই। এর পর ভাত চোখে দেখিনি। সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ পাইনি। ফুলগাজীর মানুষ কষ্টে আছে। বিশেষ করে ভাতের কষ্টে মানুষ কান্না করছে।’

দুর্গম ফুলগাজীতে যখন ত্রাণের জন্য হাহাকার, তখন গতকাল দিনভর ফেনীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় রাস্তায় ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। বেশির ভাগ উদ্যোক্তাকে সড়কের পাশে ত্রাণ দিতে দেখা গেছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করা একাধিক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, একটু ভেতরে গিয়ে বন্যায় পানিবন্দি মানুষের কাছে খাবার ও পানি পৌঁছে দেওয়া জরুরি। তবে নৌকা না থাকায় এটা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা বা আশপাশে থেকে যারা নৌকা নিয়ে আসতে পেরেছেন, তারা হয়তো নিজেদের মতো করে দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ দিতে পারছেন। তবে এ সংখ্যা খুবই কম।

ফেনীতে মাঠ পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন সাংবাদিক ফারাবি হাফিজ। তিনি বলেন, আসলে মাঠে যে কত চ্যালেঞ্জ, তা দূর থেকে বোঝা যাবে না। এখানে বাস্তবতা পুরাটাই আলাদা। এখানে অনেকে ত্রাণ নিয়ে আসছে, কিন্তু এই ত্রাণ কীভাবে পৌঁছে দেবে, সেটা জানে না। এখানে বোট ছাড়া অন্য কিছু কাজে আসছে না। খাবার পানির প্রচুর সংকট, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দরকার। তিনি আরও বলেন, এখানে ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। উদ্ধারকাজে পাঠানো আমাদের দুটি নৌকা কোথায় আটকে গেছে, জানি না। এখানে অনেক নৌকার তলা ফেটে গেছে। অনেক উদ্ধারকারী আহত হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

আশ্রয়কেন্দ্রেও দুর্বিষহ জীবন
মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি আটা বা ময়দা জ্বাল দিয়ে বানানো খাবার খেত দেড় বছরের শিশু আয়েশা। তিন দিন ধরে সে খাবার ঠিকমতো পাচ্ছে না শিশুটি। পরিবারের সঙ্গে তারও ঠাঁই হয়েছে দাগনভূঞার কামাল আতাতুর্ক উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে। বুকের দুধে পেট ভরছে না, তাই ক্ষুধায় অনবরত কান্নাকাটি করছে আয়েশা।

শুধু আয়েশা নয়, আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া অন্য শিশুদেরও একই দুর্গতি। আশ্রয়কেন্দ্রে যে খাবার দেওয়া হয়, তা বড়দের উপযোগী। শিশুদের উপযোগী কোনো খাবার না থাকায় তাদের কষ্ট হচ্ছে বেশি। দাগনভূঞার বেকের বাজার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন মোছলেহ উদ্দিন। তিনি জানান, মাত্র এক বেলা চিড়া, মুড়ি ও গুড় পেয়েছেন। এখন খাবার ও সুপেয় পানির অভাবে ভুগছেন তারা। 
বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ার পর ফেনী সদরের বোগদাদিয়া এলাকার বাগদাদ কনভেনশন সেন্টারে আশ্রয় নেন নুরুল আবছার। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ি। পরিবারের আরও ছয় সদস্যের ঠিকানা এখন এ আশ্রয়কেন্দ্র। নুরুল আবছার বলেন, তিন দিন আগে আমাদের ঘরবাড়ি ডুবে যায়। দু’দিন আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো রকমে শেল্টারে এসে আশ্রয় নিয়েছি। একটি কক্ষে আরও অনেক বন্যাকবলিত মানুষের সঙ্গে থাকছি। দু’দিন ধরে একটি দানাও পেটে পড়েনি। সবারই অবস্থা একই।

এদিকে ত্রাণ বিতরণেও রয়েছে সমন্বয়হীনতা। যে যার মতো করে ত্রাণ বিতরণ করছেন। এখানে প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ নেই। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ নঈম গওহার ওয়ারা বলেন, সবাই নিজ হাতে ত্রাণ দিতে চাইলে কীভাবে হবে? এ মুহূর্তে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কে কাজটা করবে, সেটা নির্ধারিত থাকতে হবে। ইউনিয়ন কাঠামোর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে। তরুণদের সম্পৃক্ত করে সেই কাঠামোকে কাজে লাগাতে হবে। ত্রাণবাহী গাড়িকে প্রশাসন এক জায়গায় করতে পারে। তার পর যেখানে ত্রাণের চাহিদা বেশি, সেখানে বিতরণ করা যেতে পারে।
পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশন নেটওয়ার্কের (প্রান) প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ বলেন, প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ উদ্ধারকাজ পরিচালনা। পূর্বাঞ্চলের মানুষে বন্যার সঙ্গে পরিচিত নন। ফলে কীভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয়, সে বিষয়ে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে ফেনী ও নোয়াখালীর মানুষকে উদ্ধার করাটাই বড় কাজ ছিল। আর এখন দীর্ঘদিন ত্রাণ লাগবে তাদের। সেটা বিতরণে একটা সমন্বিত পরিকল্পনা করা জরুরি। সবাই যার যার জায়গা থেকে সহায়তা করবে; কিন্তু সেটা বিতরণের ব্যাপারে যদি রূপরেখা না থাকে তাহলে দেখা যাবে এক অঞ্চলের মানুষ বেশি সাহায্য পাবে, কোনো কোনো জায়গার মানুষ বঞ্চিত রয়েই যাবে।

বিভিন্ন জেলায় নামছে পানি, বাড়ছে রাজশাহীতে
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে, নোয়াখালীতে পানি কমতে থাকায় উন্নতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির। আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট তীব্র। জেলার অনেক এলাকায় গতকাল পর্যন্ত পৌঁছেনি ত্রাণ। ফলে অর্ধাহার-অনাহারে থাকছে পানিবন্দি মানুষ। অবশ্য অনেকেই বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। বন্যায় গতকাল নতুন দু’জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, বন্যাকবলিত আট উপজেলার মধ্যে সেনবাগে পানি কিছুটা বেড়েছে। বাকি সাত উপজেলায় কমে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমীন আরা জানান, আট উপজেলার ৮২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে দেড় লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নেন। জেলায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন তিনজন। তারা হলেন সেনবাগে ঘরের পানিতে বিদ্যুৎস্পর্শে কাকন কর্মকার (৩০) ও পানিতে ডুবে মো. সোহেলের ছেলে জিলহাদুল ইসলাম (১০) এবং সদরে রাজীব হোসেনের ছেলে রিয়ান (৩)।

মৌলভীবাজার সদরের সুমারাই ও রাজনগরের সদর ইউনিয়নের ময়নার দোকান নামক স্থানে বানের পানিতে ভেসে যান দু’জন। গতকাল ভোরে তাদের মধ্যে সাদিক হোসেন হৃদয়ের (২২) লাশ উদ্ধার করে রাজনগর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তিনি মুন্সিবাজার ইউনিয়নের মেদিনীমহল গ্রামের ছনাওর মিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার সদরের মনুমুখ ইউনিয়নের মনু নদের সুমারাই অংশে ভেসে যাওয়া শামসুদ্দিন মনাইয়ের (২৮) খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। জেলার নদনদীর পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল।

কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পানিও কমছে। তবে দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন জানায়, নৌকা সংকটের কারণে ত্রাণ বিতরণ ব্যাহত হচ্ছে। তার পরও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দুর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুরে মাদ্রাসা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ছেলে নাঈমকে (১০) নিয়ে ফেরার পথে স্রোতে ভেসে যান রজি আহমেদ (৫৫)। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। নাঈম বলে, ‘বাবা আমাকে একটি গাছ শক্ত করে ধরতে বলেন। আমি দুই হাতে গাছ ধরি। বাবা এক হাতে আমাকে ও আরেক হাতে গাছ ধরেন। এক পর্যায়ে বাবা স্রোতের তোড়ে ভেসে যান। একটু পরে কিছু মানুষ টের পেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন।’

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তে উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষ উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। এদিকে রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ফুলবাগিচা গাবতলা এলাকায় বাঁশের ভেলায় বিল পাড়ি দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভেসে যায় মো. রনি (১৭)। রাত সোয়া ১১টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। রনি ওই এলাকার আবু বক্করের ছেলে ও পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পানি নেমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত দু’দিন বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। কোথাও কোথাও জমির আইল ভেসে উঠছে। বেশির ভাগ ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে থাকায় বাসিন্দারা ফিরছেন। আখাউড়া স্থলবন্দর, শুল্ক বিভাগ চত্বর ও ইমিগ্রেশন দপ্তরে কোনো পানি নেই। রোববার থেকে কার্যক্রম শুরু হতে পারে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হবে বলে আশা করছেন আখাউড়ার ইউএনও গাজালা পারভীন রুহি। কসবার পানিও নামছে। তবে এখনও ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
কুমিল্লার ১৪ উপজেলায় সাত লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি। এর মধ্যে গোমতীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বুড়িচংয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় গোমতীর পানি কমলেও প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। অনেক এলাকায় ফেরেনি বিদ্যুৎ। জেলা সদরের সঙ্গে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পাউবো কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান জানান, গোমতী বাঁধে ভাঙন প্রায় ৫০০ ফুট ছড়িয়েছে। নদীর পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। সরেজমিন গোমতী বাঁধে খোলা আকাশের নিচে শত শত বন্যার্ত মানুষ পাওয়া যায়। তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট রয়েই গেছে। জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান জানান, তারা শুকনো খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ করছেন।

অবশ্য উত্তরের জেলা রাজশাহীর বড় নদনদীতে পানি কিছুটা বাড়ছে। যদিও এখন পর্যন্ত তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, নগরীর বড়কুঠি পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। শনিবার বিকেল ৩টায় ১৬ দশমিক ২৪ মিটারে পৌঁছেছে। উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, বারনই নদে পানি বাড়ছে ভারী বর্ষণের কারণে। শনিবার সকাল ৯টায় পানি ১২ দশমিক ৫২ মিটারে দাঁড়ায়। নওহাটায় বারনই নদের বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ৯৬ মিটার ধরা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর বিপৎসীমা ২০ দশমিক ৫৭ মিটার। শুক্রবার সকালে পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৪৭ মিটার। শনিবারও একই খবর পাওয়া গেছে। পানি বাড়ছে পুনর্ভবা ও আত্রাই নদীতেও। রেজাউল করিম বলেন, ‘শনিবার থেকে আগামী ১০ দিনেও রাজশাহী অঞ্চলে বন্যার শঙ্কা নেই।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d