International

মোদির শাসনে ভারতে ধর্মীয় মেরূকরণ বেড়েছে

সামাজিক মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করলেই পুলিশ এখন কঠোর হচ্ছে

গত ২২ জানুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর প্রদেশে বিশাল মন্দিরের উদ্বোধন করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রায় এক লাখ ভক্ত। অন্যদিকে কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলীয় কোলার জেলার ছোট্ট শহর মুলাবাগিলুতে শুরু হয় দ্বাদশ শতকের সুফি সাধক হযরত বাবা হায়দার আলীর ওরস। এতে প্রধানত মুসলিমরা উপস্থিত হলেও অন্য ধর্মের মানুষের উপস্থিতিও দেখা যায়। পাঁচ দিনের ওরস উপলক্ষে মুলাবাগিলু শহরে বের হয় মিছিল। শহরটিতে একটি হোটেল চালান শেখ জাফর সাদিক। তিনি বলেন, তারা একটি মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন। তখনই দেখতে পান সুফি সাধকের মাজারের একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে, যা হিন্দু দেবতা রাম ও গেরুয়া পতাকা দিয়ে মোড়ানো।

মঙ্গলবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৩৯ বছরের সাদিক বলেন, তাঁর বন্ধুদের মধ্যে একজন তাঁকে সামাজিক মাধ্যমে ওই পোস্টের বিষয়ে জানান। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল। এটা ছিল মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভাবাবেগে আঘাত করার ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ। এক হিন্দু তরুণ এটা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। 

এ পরিস্থিতিতে সাদিক ও তাঁর বন্ধুরা মাজার পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ দাখিলের সিদ্ধান্ত নেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই হিন্দু যুবককে ডেকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করে। পাশাপাশি পুলিশ অভিযুক্তের পোস্ট সামাজিক মাধ্যম থেকে ডিলিট করে দেয়।

সাদিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা কর্ণাটকের মুলাবাগিলু শহরেই। তিনি সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বড় হয়েছেন; কখনো হিন্দু-মুসলিম বিভেদ দেখেননি। সাদিক বলেন, ভারতে নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) উত্থানের মধ্য দিয়ে গত কয়েক বছরে সেই সহাবস্থানের শৌর্যে ফাটল দেখা দিয়েছে; বিশেষ করে ২০১৯ সালে দক্ষিণপন্থি দলটি ক্ষমতায় আসার পর। 

ভারতে চলছে সাত দফার লোকসভা নির্বাচন। এ অবস্থায় সাদিক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও সামাজিক মেরূকরণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি বেঙ্গালুরুতে একটি কর্মশালায় অংশ নেন। এ কর্মশালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো। কিন্তু এ কর্মশালার সদস্যরা জানেন এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ তারা যে রাজ্য (কর্নাটক) থেকে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, সেখানে রয়েছে আন্তঃধর্মীয় উত্তেজনা। বিশেষ করে, চলমান নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের ‘ইসলামভীতি’র টোপ দিচ্ছে বিজেপি। 

কর্ণাটকের নারী অধিকারকর্মী মমতা ইয়াজামান বলেন, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য নারীদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে; বিশেষ করে দরিদ্র মুসলিম ও দলিত সম্প্রদায়ের নারীদের ওপর। 

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে কিছু এলাকায়ও বেড়েছে এ মেরূকরণ। বেঙ্গালুরুর দেবনগরের অধিকারকর্মী কারিবিশাপ্পা এম বলেন, তাঁর জেলায় ধর্মীয় মেরূকরণ বেড়ে যাওয়ায় তিনি বিস্মিত। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সেখানে অন্তত ১৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button