Trending

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে: ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এখন ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল। এসব বিক্ষোভে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের বয়কট করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভেতরে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত এবং সেটির জের ধরে ইসরাইল গাজায় যে হামলা চালাচ্ছে তাতে এখনো পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে ক্রমশ। 

এ ধরনের বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়ছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এরপর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ নির্মম আচরণের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি নির্মমতার চিত্র উঠে এসেছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো চেষ্টাই করেনি পুলিশ। লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আটলান্টায় বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে ইহুদি বিদ্বেষের জন্য অভিযুক্ত করা হয় তার মধ্যে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। গত সপ্তাহে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বললে একশোর বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। এ ঘটনা বিক্ষোভকে আরো উসকে দেয়।

বিক্ষোভের কারণে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সেখানে কমেন্সমেন্ট অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটিতে ভালো ফলাফল অর্জন করা একজন শিক্ষার্থীর ভাষণ বাতিল করেছে। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি থাকার কারণে এটি বাতিল করা হয়েছে। গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ম্যানহাটন ক্যাম্পাসে কিছু বিক্ষোভকারী তাত্ক্ষণিকভাবে তাঁবু টানিয়ে বসে যায়। সেখান থেকে পুলিশ ১২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত বুধবার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি চত্বরে একদল শিক্ষার্থী অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে বসে বিক্ষোভ শুরু করে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হার্ভার্ড আন্ডারগ্র্যাজুয়েটস প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে। তবে পুলিশ ডেকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অস্বীকৃতি জানান হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট। গত বৃহস্পতিবার বোস্টনের এমারসন ইউনিভার্সিটিতে ১০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বাতিল করতে হয়েছে। বিক্ষোভের সময় চার জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্ষোভ সামাল দিতে যখন মার্কিন প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে তখন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের অনেক দেশেই। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে,  শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ইউরোপের ফ্রান্স, ইতালি থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি ফিলিস্তিনের সমর্থনে ফ্রান্সের প্যারিসে সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। একই সঙ্গে সায়েন্সেস পো থেকে প্যালেস্টাইন কমিটি একটি বিক্ষোভের আয়োজন করে যেখানে শিক্ষার্থীরা বুধবার প্রায় ১০টি তাঁবু স্থাপন করে। পুলিশের ধরপাকড় সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ফের জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা।

ইতালির রোমে সাপিয়েনজা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত ১৭ এবং ১৮ এপ্রিল বিক্ষোভ, অবস্থান ধর্মঘট এবং অনশন করে। ১৯ এপ্রিল রাত থেকে যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডে অবস্থিত ক্যাম্পাস পিয়াজা দখল করে রেখেছে ‘ওয়ারউইক স্ট্যান্ডস উইথ প্যালেস্টাইন’ নামে ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ। সোমবার ইংল্যান্ডের লেস্টারে একটি বিক্ষোভ হয় যাতে লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন প্যালেস্টাইন সোসাইটি অংশ নেয়। গত মাসে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টতার প্রতিবাদে একটি ক্যাম্পাস ভবন দখল করে।

বার্লিনে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের সামনে তাঁবু খাটিয়ে ইসরাইলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে। সুইডেনের সড়কগুলো ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো ও ইসরাইলকে বয়কট করো’ স্লোগানে মুখরিত ছিল গত শনিবার। লন্ডনের কেন্দ্রে এদিন হাজারো মানুষ ফিলিস্তিনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে পথে নেমে আসেন।

অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং শুক্রবারেও তাদের সেই বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। এছাড়া মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত বৃহস্পতিবার তাদের মূল ক্যাম্পাসের দক্ষিণ লনে তাঁবু খাটায়। সময় যত গড়াচ্ছে গাজায় আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ততই বাড়ছে। যদিও এই আন্দোলনকে ভালোভাবে নিচ্ছে না ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে ভয়ানক বলে মন্তব্য করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি অবিলম্বে এসব বিক্ষোভ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হয় সেটায় দেখার বিষয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button