যুক্তরাষ্ট্রে নীরব বিপ্লব ঘটাতে পারেন নারীরা
সারা বিশ্বের চোখ এখন আমেরিকায়। ৫ই নভেম্বর বহুল প্রতীক্ষিত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, তা হবে ইতিহাস সৃষ্টিকারী। কমালা হ্যারিস প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে নিজেই লিখতে পারেন ইতিহাস অথবা ক্ষমতা থেকে ভোটে হেরে বিদায় নেয়ার পর দুই দফা অভিশংসনের মুখে পড়া ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়া ডনাল্ড ট্রাম্প অবতীর্ণ হতে পারেন নায়কের ভূমিকায়। জয়-পরাজয় এখন ধারালো ছুরির তীক্ষ্ণ ফলায় ঝুলে আছে। দুই পক্ষেই চলছে বাকযুদ্ধ। চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার এমন নির্বাচনে দুই প্রার্থীর কপালে দেখা দিয়েছে গভীর চিন্তার ভাঁজ। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন হয়তো অভাবনীয় নীরব বিপ্লব ঘটাতে পারেন নারী ভোটাররা। শেষ সময়ে এসেও পেনসিলভেনিয়া চলে এসেছে পাদপ্রদীপের নিচে। মানবজমিন নির্বাচন শুরুর দিকেই বলেছিল, কমালা হ্যারিস নীল দেয়াল বা ‘সো কল ব্লু ওয়াল’ টপকাতে পারলেই অর্থাৎ মিশিগান, উইসকনসিন ও পেনসিলভেনিয়ায় জয় পেলেই তার হোয়াইট হাউসের পথ সহজ হয়ে যাবে। অতীত বলছে, বহু দশক ধরেই পেনসিলভেনিয়া ছাড়া হোয়াইট হাউসে যেতে পারেননি ডেমোক্রেটরা। কমালা হ্যারিসকে ইতিমধ্যে সমর্থন জানিয়েছে টেক্সাসের বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র হিউস্টন ক্রনিক্যাল এবং প্রখ্যাত অভিনেতা হ্যারিসন ফোর্ড।
একইভাবে ডনাল্ট ট্রাম্প জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা এবং পেনসিলভেনিয়ায় জয় পেলে ২৭০ ম্যাজিক সংখ্যা মিলে যাবে। আমেরিকার নির্বাচনে জনসাধারণের ভোটের পাশাপাশি প্রার্থীকে জিতে আসতে হবে প্রত্যেক রাজ্য থেকেও। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্য এবং রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি মিলে রয়েছে ৫৩৮ ইলেক্টোরাল ভোট। এরমধ্যে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হতে হলে প্রার্থীকে নিশ্চিতভাবে পেতে হবে ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট। এবারের নির্বাচনে মূলত সাতটি রাজ্য ঘিরেই চলছে বেশি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। এই রাজ্যগুলোকে বলা হচ্ছে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্য। বাকি ৪৩টি রাজ্যের ফলাফল প্রায় নির্ধারিত ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দুই দলের মধ্যে। সে অনুযায়ী কমালা হ্যারিসকে ২২৬ এবং ডনাল্ট ট্রাম্প ২১৯টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে পারেন এমনটা প্রায় নিশ্চিত ধরে নেয়া হয়েছে। সাতটি সুইং স্টেট হচ্ছে পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, নেভাদা ও আ্যরিজোনা। কমালার ২৭০ ম্যাজিক সংখ্যার জন্য প্রয়োজন ৪৪ আর ট্রাম্পের দরকার ৫১ ইলেক্টোরাল ভোট। তাই জয়লাভ করতে হলে কমালার প্রয়োজন মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিন। এই তিন রাজ্যের মোট ইলেক্টোরাল ভোট ৪৪। পক্ষান্তরে ট্রাম্পের লাগবে জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা ও পেনসেলভেনিয়া। এই তিন রাজ্যের মোট ইলেক্টোরাল ভোটও ৫১। যুদ্ধেক্ষেত্র পেনসিলভেনিয়ায় কমালা নারীদের মধ্যে ১৭ শতাংশ জনসমর্থনে এগিয়ে প্রতিপক্ষ ট্রাম্পের চাইতে। এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক নারী ভোটার আগাম ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ফেলেছেন। এনবিসি নিউজের বিশ্লেষণ বলছে, এবার ডেমোক্রেট নারী ভোটারদের সংখ্যা বেড়েছে পেনসেলভেনিয়ায়। পুরুষ ভোটার বেড়েছে সুইং স্টেট অ্যারিজোনায়। পেনসিলভেনিয়ায় প্রায় ৩৪ হাজার ডেমোক্রেট নারী যারা ২০২০ সালে ভোট দেননি। এরা সবাই এবার আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে পেনসিলভেনিয়ায় জিতে ছিলেন প্রায় ৮১ হাজার ভোটের ব্যবধানে। নানা হিসাব বলছে, নারীদের মধ্যে সমর্থনের ধারা অব্যাহত থাকলে এবং পুর্তোরিকোদের একটি অংশের ভোট পেলে পেনসিলভেনিয়া বাজিমাত করবেন কমালা। ট্রাম্পের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, তিনি মনে করেন নির্বাচনে কমালা হ্যারিস জয়লাভ করলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা মেনে নেবেন না। এজন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্য ডেমোক্রেটদের প্রতি আহ্বান জানান বোল্টন।
পেনসিলভেনিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেটের তথ্য অনুযায়ী, ডাকযোগে ভোট সম্পন্ন করেছেন ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৬০৬ জন ভোটার। এরমধ্যে ৯ লাখ ৭১ হাজার ৬১৫ জন রেজিস্টার্ড ডেমোক্রেট ভোটার এবং ৫ লাখ ৭১ হাজার ৭২৫ জন রেজিস্টার্ড রিপাবলিকান ভোটার। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ কোটি ২২ লাখ ভোটার ডাকযোগে বা সশরীরে হাজির হয়ে আগাম তাদের ভোটাধিকার সম্পন্ন করে ফেলেছেন আমেরিকায়।