যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ইস্যু ছাত্র বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার পৌঁছাল আড়াই হাজারে, ঘরে-বাইরে বেকায়দায় বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ এবং গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নতুন ইস্যু হয়ে উঠেছে। রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে আক্রমণের একটি নতুন অস্ত্র হাতে পেয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, এ ইস্যুতে বাইডেন তাঁর দলের উদারপন্থি অংশেরও প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প ফৌজদারি মামলার বিচারের জন্য নিউইয়র্ক সিটির আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। তবে রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্টকে আক্রমণ করার জন্য এ ইস্যুকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। তারা বলছেন, বাইডেন দুর্বল এবং দেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম নন।
রিপাবলিকানরা বলছেন, ক্যাম্পাসে অস্থিরতা দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নারাজ ছিলেন প্রেসিডেন্ট। আরকানসাসের রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এখনও ক্যাম্পাসে ‘হামাসের উগ্র জনতার’ নিন্দা করেননি।
বাইডেনের ওপর দোষ চাপানোর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির আরও আক্রমণাত্মক। দলের একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ক্যাম্পাসে এটি বাইডেনের বিশৃঙ্খলা।’ তাদের মতে, বিক্ষোভ করার অধিকারের পক্ষে কথা বলে মহা ভুল করেছেন বাইডেন।
অন্যদিকে বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যেও এ ইস্যু নিয়ে তিক্ত বিতর্ক চলছে। কিছু ডেমোক্র্যাট সতর্ক করেছেন, ক্যাম্পাসের অস্থিরতা বাইডেনের ব্যাপারে আগ্রহকে হ্রাস করতে পারে। এরই মধ্যে জরিপে দেখা গেছে, তরুণ ভোটারদের কাছ থেকে ২০২০ সালের মতো সমর্থন বজায় রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রেসিডেন্টকে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির ছাত্র শাখা গত বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বাইডেনের জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে। এতে বলা হয়, ‘কলেজ ডেমোক্র্যাটদের ভোট ডেমোক্রেটিক পার্টি এমনিতেই পেয়ে যাবে– এমনটি যেন মনে না করা হয়। আমাদের দলকে আমাদের কথা শুনতে হবে। আমরা দলের সমালোচনা করার অধিকার সংরক্ষণ করি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলো ডেমোক্র্যাটদের জন্য ভোটের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সাধারণত রিপাবলিকানদের তুলনায় তরুণ ভোটারদের মধ্যে তাদের সমর্থন বেশি।
সাউথ ক্যারোলাইনার ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জেমস ক্লাইবার্ন বলেছেন, কলেজ ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বিষয়ে বাইডেনের অবস্থান তরুণ ভোটারদের নাখোশ করেছে।
আটলান্টায় ঐতিহাসিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের বিশ্ববিদ্যালয়খ্যাত মোরহাউস কলেজে চলতি মাসের শেষ দিকে সূচনা ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে বাইডেনের। তবে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, অনুষদ সদস্য এবং বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্ররা তাঁর আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষকে।
স্বাক্ষরবিহীন একটি বেনামি খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যে কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় এ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দিলে তারা গণহত্যাকেই সমর্থন করবে। এখন সময় এসেছে মোরহাউস কলেজের ইতিহাসের সঠিক দিকে যাওয়ার।’
গ্রেপ্তার প্রায় আড়াই হাজার
বার্তা সংস্থা এপির হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪৬টি ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৪০০-এর বেশি ফিলিস্তিনপন্থিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ দমনে পুলিশের নজিরবিহীন তাণ্ডবের মধ্যেও প্রতিবাদ থেমে নেই। মিশিগানে বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার মিশিগান স্কুল অব মিউজিক, থিয়েটার এবং ডান্সের সূচনা অনুষ্ঠানে বাধা দেন বলে জানায় সিএনএন।
প্রতিবাদের মধ্যে ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন, জাতিসংঘের মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড সেখানে সূচনা বক্তব্য দেবেন না। বিক্ষোভকারীরা গ্রিনফিল্ডের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিয়েছে।