Bangladesh

রাতের বেপরোয়া পরিবহন খুবই ভয়ংকর

♦ ঢাকায় এক রাতে প্রাণ গেল পাঁচজনের ♦ রাতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ♦ সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা

রাত যত গভীর হয় সড়ক তত ফাঁকা হয়। ওই সুযোগেই গতি বাড়ে পরিবহনের। বিশেষ করে ট্রাক, বাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলের গতি বাড়ে দ্বিগুণ। এসব পরিবহনের বেপরোয়া গতিতে সড়কে প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানি। গতকালও রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন পাঁচজন। এ ছাড়া সুযোগ পেলেই রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কার রেসিংয়ের নামে বেপরোয়া গাড়ি চালনায় মেতে উঠছে উঠতি বয়সি কিশোর-তরুণদের বেশ কয়েকটি গ্রুপ। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এবং সড়কে চাঁদাবাজি।

গত শনিবার রাতে রাজধানীর দুটি স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে পাঁচজনের। উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, উত্তরা আজমপুর মোড়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন পথচারীর ওপর একটি ট্রাক উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় অপরজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি সেখানে মারা যান। অন্যদিকে কাফরুল থানাধীন বিজয় সরণিতে মাইক্রোবাসের সঙ্গে দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই যুবক নিহত হন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাফরুল থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জান্নাতুল ফেরদৌস বাদল। তিনি জানান, ট্রিপল নাইন (৯৯৯) এর ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যজনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সাজ্জাদুর রহমান (১৮) সে স্থানীয় একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার মিজমিজি দক্ষিণপাড়া গ্রামের মো. আ. নবী বিধানের ছেলে সাজ্জাদুর। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মারা যাওয়া যুবকের নাম মো. ফাহিম (১৮) তার বাড়ি একই এলাকায়। জানা গেছে, রাতে রাজধানীর সব সড়কেই সব ধরনের গাড়ি চলে দ্রুত গতিতে। এমনকি গাড়িগুলো যখন কোনো মোড় অতিক্রম করে তখনো গতি কমায় না। সবচেয়ে বেপরোয়া গতিতে চলে মালবাহী ট্রাক। রাত ১১টার আগে ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয় না। ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে রাত ১০টার পরই ট্রাকগুলো রাজধানীতে প্রবেশ করে বেপরোয়া গতিতে। যাত্রীবাহী বাসগুলোও রাত ১১টার পর বেপরোয়া গতিতে চলে। আর ভোরে বেশির ভাগ যাত্রীবাহী বাস চালায় চালকের সহকারীরা। এ কারণে ভোরে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে বলে বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, রাতে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কার রেসিংয়ের নামে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ সময় সড়কে অবস্থানরত গাড়ি বা পথচারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তাদের ঘিরে নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো তদারকি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গাড়ি অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স দিচ্ছে না বিআরটিএ। চালকরা বড় গাড়ি চালালেও লাইসেন্স দিচ্ছে ছোট গাড়ির। এতেই সড়কে পুলিশের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় চালকদের। জরিমানা গুনতে হয় চালকদের। ফলে চালকদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। তিনি বলেন, সড়কে মালবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান দেখলেই পুলিশ আটক করে। সব ঠিকঠাক থাকলেও যে কোনো একটা অযুহাত দিয়ে তাকে টাকা দিতে হয়। আর বিভিন্ন পয়েন্টে তো চাঁদা দিতে হচ্ছেই। এতেই সব মিলিয়ে মনস্তাত্ত্বিক প্রেশারে থাকে চালকরা। এই কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto