রাবিতে বামপন্থীদের সঙ্গে শাহবাগবিরোধী ঐক্যমঞ্চের সংঘর্ষ, আহত ৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সঙ্গে শাহবাগবিরোধী ঐক্যমঞ্চের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
আজ মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এবং রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্যারিস রোডে দুই দফা এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের ৪ নেতা এবং একজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
শাহবাগবিরোধী ঐক্যমঞ্চ নামে প্ল্যাটফরমটি এর আগে দেখা যায়নি।
শাহবাগবিরোধী ঐক্যমঞ্চের মিছিলে শিবিরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
আহতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রগণমঞ্চের সভাপতি নাসিম সরকার, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক তারেক আশরাফ, ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কাইসার আহমেদ ও দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ সৈকত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি নোমান ইমতিয়াজ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে মশাল মিছিলের ডাক দেয় গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ মিছিল হওয়ার কথা ছিল।
তবে তা ওইসময় হয়নি। এ খবর পেয়ে শাহবাগবিরোধী ঐক্যর ব্যানারে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পরিবহন মার্কেটের আমতলায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
অন্যদিকে রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা মশাল জ্বালিয়ে মিছিল শুরু করেন।
এক পর্যায়ে সমাবেশে উপস্থিতদের মধ্যে থেকে কিছু শিক্ষার্থী বাম নেতাদের দিকে তেড়ে যান। এ সময় উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং চেয়ার, ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ রূপান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নোমান ইমতিয়াজ আহত হন।
পরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল নিয়ে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের দিকে এগিয়ে গেলে তাদের পিছু নেয় শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় শিবিরের নেতাকর্মীদের এগিয়ে যেতে বাঁধা দেন শিবিরের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নওসাজ্জামানসহ কয়েকজন। পরে মশাল মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আসলে শিবিরের নেতাকর্মীরা ফের মিছিলে বাঁধা দেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ বাগবিতণ্ডায় জড়ান।
এ সময় বাম নেতা নাসিম সরকারকে ধাক্কা দিলে তিনি সড়কে পড়ে যান। এতে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে বাম নেতারা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এ সময়ও শিবিরের নেতাকর্মীরা এসে তাদেরকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘আমাদের মশাল মিছিলে প্রায় সকলেই আহত হয়েছে। তবে ৪ জন নেতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। চব্বিশ পরবর্তী সময়ে এ হামলার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে আদালতের একটি রায় এসেছে। কিন্তু যারা এ রায় মেনে নেয়নি, তাদের আমারা সবাই চিনি। তারা ২০১৩ সালেও আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে শাহবাগতন্ত্র কায়েম করে ফ্যাসিবাদের বীজ রোপন করেছিল। চব্বিশে এসে ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে আমাদের তা সমাধান করতে হয়েছে। শাহাবাগীরা সব সময় হাসিনা আর ভারতের ম্যান্ডেট সার্ভ করেছে। আজ আমরা বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে পরিবহন চত্বরে একত্রিত হয়েছি। আমরা শাহবাগ বিরোধী স্লোগান দিয়েছিলাম তখন তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের উপর ঢিল-নিক্ষেপ করে উত্তেজিত করে দিয়েছে।’
হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘এটা আদত ছাত্রশিবিরের কোনো প্রোগ্রাম নয়। এটা শাহবাগ বিরোধী ঐক্যর প্রোগ্রাম ছিল। এটি যেহেতু ঐক্য, সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সেখানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেছে। হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য ২০১৩ সালে তাদের যে ভূমিকা, এটির বিরুদ্ধেই আজকের কর্মসূচি ছিল।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টিয়াল বডি ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে নিভৃত করার চেষ্টা করেছেন। সেখানে ছাত্র উপদেষ্টাও কাজ করেছেন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নিব।’