USA

রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেলেন ট্রাম্প

এ বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্পকে এই মনোনয়ন দেওয়া হয়। একই দিন তার রানিং মেট হিসেবে মনোনীত হন ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সিনেটর জেডি ভ্যান্স। ৩৯ বছর বয়সী এই রিপাবলিকান নেতা একসময় ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক ছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে হামলার পর জেডি ভ্যান্স ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হন।
শনিবার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলারে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলির পর সোমবার প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসেন তিনি। মিলওয়াকির অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর সমর্থকরা তাকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেয়। খবর আলজাজিরা, এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের।   
অবশ্য রবিবারই সম্মেলনে অংশ নিতে মিলাওয়াকিতে পৌঁছেন ট্রাম্প।  এর আগেই তার প্রচার শিবির থেকে জানানো হয়, হামলা সত্ত্বেও দলের জাতীয় সম্মেলন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী এগিয়ে চলবে। রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলন চলবে ১৮ জুলাই পর্যন্ত। চার বছর পর পর এই সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি। এবারের সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেন দলটির বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা (ডেলিগেট)। রিপাবলিকান পার্টির ২ হাজার ৩৮৭ জন প্রতিনিধি ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানান।
জেডি ভান্স এর আগে প্রকাশ্যে বলেন, আমি কখনোই ট্রাম্পের লোক নই। আমি কখনোই তাকে পছন্দ করি না। হায় ঈশ্বর! কেমন ইডিয়ট! আমি তাকে নিন্দনীয় মনে করি। জেডি ভান্স ২০১৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে ও টুইটারে এসব বলেন। ওই বছরই ফেসবুকে তিনি তার এক সহযোগীকে লিখেছিলেন যে, তিনি ভাবছেন যে ট্রাম্প কি গাধা নাকি আমেরিকার হিটলার।
কিন্তু এমন অবস্থানে থাকার পরের কয়েক বছরে ভান্স নিজেকে ট্রাম্পের একজন সমর্থক ও সহযোগীতে পরিণত করেন। ওহাইও থেকে প্রথমবারের মতো সিনেটর হওয়ার পর, তিনি এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রানিং মেট হিসেবে মনোনীত হলেন। ওহাইওর এক শহরে তিনি যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন তার মা লড়াই করছিলেন নেশার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য, আর তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। মূলত দাদা দাদির কাছে বড় হয়েছেন ভান্স। রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশনে বক্তা ছিলেন প্রায় এক ডজনের মতো। এর মধ্যে রাজনীতিক, কনজারভেটিভ অ্যাক্টিভিস্ট ও সাধারণ নাগরিকরাও ছিলেন।
কিন্তু এই কনভেনশনের যিনি তারকা, তিনি তখনো মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াননি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন সন্ধ্যায় সেখানে যান, সমর্থকেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। মুহুর্মুহু হাততালি ও স্লোগান দিচ্ছিল এ সময়ে তারা। এটা ছিল এমন এক মুহূর্ত যখন সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছিল। সদ্য বুলেটের ছোঁয়া পাওয়া বীরকে স্বাগত জানানোর যেন এটা ছিল একটা সুযোগ। হামলার প্রমাণ ছিল একেবারেই দৃশ্যমান। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্টের কানে ব্যান্ডেজ ছিল।

পরের কয়েক ঘণ্টা তিনি ভিআইপি সেকশনে বসেছেন, তার রানিং মেট জেডি ভান্সের পাশে। সেখানে তার পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। যখন সেখানকার বড় পর্দায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখানো হচ্ছিল ততবারই সমবেত লোকজনকে উল্লাস করতে দেখা যায়। কনভেনশনের তৃতীয় দিনে ডেলিগেট ও জাতির উদ্দেশ্যে কথা বলবেন ট্রাম্প। তখনই তিনি দলের মনোনয়ন গ্রহণ করবেন।
আনুষ্ঠানিক মনোনয়নের পর ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জেডি ভান্সের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। তিনি লিখেন, দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনা ও চিন্তাভাবনার পর জেডি ভান্সকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তিনি দরিদ্র মানুষ ও কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভান্স সম্পর্কে খবরে বলা হয়েছে, তিনি একজন ইয়েল-শিক্ষিত পুঁজিবাদী উদ্যোক্তা। তার লেখা সর্বাধিক বিক্রিত স্মৃতিকথা হিলবিলি এলিজি থেকে চলচ্চিত্রও হয়েছে।

ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ভান্সের লেখা বই আমাদের দেশের পরিশ্রমী পুরুষ ও নারীদের বিজয়ী করেছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট হলে জেডি আমাদের সংবিধানের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন, আমাদের সৈন্যদের সঙ্গে দাঁড়াবেন এবং আমেরিকাকে আবার মহান করতে আমাকে সাহায্য করার জন্য তিনি যা করতে পারেন তার সবকিছুই করবেন।
উল্লেখ্য, বাটলারে বিশাল নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্পের ওপর অতর্কিত হামলা হয়। তিনি রক্ষা পেলেও হামলাকারীসহ অন্তত দুজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হন। সমাবেশ মঞ্চের মাত্র ১৩০ গজ দূর থেকে ট্রাম্পকে  লক্ষ্য করে পর পর আট রাউন্ড গুলি করা হয়। দ্বিতীয় গুলিটি ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্পের ডান কানে লাগে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কান চেপে ধরে বসে পড়েন।

পাশে থাকা সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তারা দ্রুত ট্রাম্পের চারপাশে মানববর্ম তৈরি করেন। মঞ্চ থেকে নামার সময় তার কান বেয়ে রক্ত পড়ছিল। এ সময় মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ঊর্ধ্বে তুলে তিনি বলেন, ‘ফাইট ফাইট ফাইট’। গুলির আঘাতে ট্রাম্পের কান ফুটো হয়ে যায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button