Science & Tech

লবণাক্ত পানিকে সুপেয় পানিতে রূপান্তরের যুগান্তকারী পদ্ধতি উদ্ভাবন

সমুদ্রের লবণাক্ত পানিকে সুপেয় পানিতে রূপান্তরের জন্য যুগান্তকারী এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা গোটা বিশ্বের পানির ঘাটতি মোকাবেলায় আরও কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব উপায় দেবে বলে দাবি তাদের।

বর্তমানে বিশ্বের ৩৬ শতাংশ মানুষ প্রতি বছর কমপক্ষে চার মাস তীব্র পানি সংকটে ভোগেন। এই সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে বেড়ে ৭৫ শতাংশ হতে পারে। যা জরুরি ভিত্তিতে পানি সংকট ঠেকানোর প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় সমুদ্রের লবণাক্ত পানি থেকে লবণ সরিয়ে ফেলা হয়। আর এই কাজটি করতে প্রচলিত বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রচুর শক্তি অর্থাৎ বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে এবং এর থেকে পরিবেশে কার্বন দূষণের পরিমাণও বাড়ে। নতুন গবেষণায় এক ধরনের সৌরশক্তিচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ কৌশল নিয়ে কাজ করছেন অধ্যাপক হাওলান শু’র নেতৃত্বে ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া বা ইউএনআইএসএ’-এর গবেষকরা। এ কৌশলকে ‘ইন্টারফেসিয়াল ইভাপোরেশন বা বাষ্পীভবন’ নামে বর্ণনা করেছেন তারা।

এ পদ্ধতিটি শক্তিবান্ধব ও টেকসই। তবে এ কাজে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, লবণ থাকলে সে পানি বাষ্পীভূত হতে সময় লাগে অনেক বেশি। লবণাক্ত পানির মধ্যে থাকা বিভিন্ন আয়ন এ প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। চীনের গবেষকদের সহযোগিতায় এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার উপায় খুঁজে পেয়েছেন অধ্যাপক শু’র গবেষণা দলটি।

এক বিশেষ হাইড্রোজেল বাষ্পীভবনে সাধারণ কাদামাটির খনিজ যোগ করে সমুদ্রের পানির বাষ্পীভবনের হার ১৮.৮ শতাংশ বাড়িয়েছেন গবেষকরা, যা এক যুগান্তকারী অগ্রগতি বলে দাবি তাদের। কারণ আগের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রের পানির বাষ্পীভবনের হার মিঠা পানির চেয়ে আট শতাংশ কম।

এ প্রক্রিয়াটিতে হ্যালোসাইট ন্যানোটিউবস, বেন্টোনাইট, জিওলাইট ও মন্টমোরিলোনাইটের মতো বিভিন্ন খনিজ পদার্থকে ‘কার্বন ন্যানোটিউব’ ও ‘সোডিয়াম অ্যালজিনেট’ উপাদানের সঙ্গে মিলিয়ে এক ধরনের ‘ফটোথার্মাল হাইড্রোজেল’ তৈরি করেছেন গবেষকরা। এ উপাদানটি পানির ওপরে ভাসে ও বাষ্পীভবনের জন্য সূর্যের আলো শোষণ করে।

অধ্যাপক শু বলেছেন, এ প্রক্রিয়ার মূল জিনিসটি রয়েছে লবণাক্ত পানির আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়ার মধ্যে। হাইড্রোজেলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন খনিজ ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম আয়নকে সমুদ্রের পানি থেকে বাষ্পীভবনের পৃষ্ঠে আকৃষ্ট করে, যা এ প্রক্রিয়াটিকে গতি দেয়। এ পুরো প্রক্রিয়াটি সৌর বাষ্পীভবনের সময় প্রাকৃতিকভাবেই ঘটে, যা এটিকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করে তোলে।

গবেষকরা বলেছেন, এ নতুন পদ্ধতিটিকে সহজে যে কোনো পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে। ফলে বিভিন্ন পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার সক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। বিস্ময়করভাবে সমুদ্রের পানিতে কয়েক মাস থাকার পরেও নিজের কার্যকারিতা বজায় রেখে চলেছে হাইড্রোজেল বাষ্পীভবনটি। আর এর মাধ্যমেই নিজের স্থায়িত্বের প্রমাণ দিয়েছে এটি।

গবেষকদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে, এ পদ্ধতিটিকে আরও পরিমার্জন করা ও পানি বিশুদ্ধকরণ কাজে এর ব্যবহার বাড়ানো। তাদের আশা, বিশ্বের পানির ঘাটতি কমিয়ে আনতে ও আরও বেশি মানুষের কাছে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে এ যুগান্তকারী সাফল্য।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor