‘ল্যান্ডলর্ড মডেল’ যুগে চট্টগ্রাম বন্দর, ১৩৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম
চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টার্মিনাল পরিচালনা শুরু হয়েছে। সোমবার নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) জাহাজ ভিড়িয়ে আনুষ্ঠানিকতভাবে পণ্য হ্যান্ডলিং শুরু করল দায়িত্বপ্রাপ্ত সৌদি আরবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল’ (আরএসজিটি)। আর এর মধ্য দিয়ে বন্দর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় ‘ল্যান্ডলর্ড’ মডেলের নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। এই মডেলে বন্দর কর্তৃপক্ষ থাকে নিয়ন্ত্রণকারী ও জমির মালিকের ভূমিকায়। বেসরকারি অপারেটররা শর্ত সাপেক্ষে কার্গো-কনটেইনার হ্যান্ডলিংসহ টার্মিনাল পরিচালনার পুরো কাজ সামাল দেয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৭ বছরের ইতিহাসে পিসিটি প্রথম টার্মিনাল, যেখানে ল্যান্ডলর্ড পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এর আগে কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান বন্দরের কোনো টার্মিনাল পরিচালনার সুযোগ পায়নি। দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৯০ শতাংশের বেশি সমুদ্রকেন্দ্রিক বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালিত হয়। পিসিটিতে বছরে ৬ লাখ টিইইউএস (২০ ফুট সমমান) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব। অর্থাৎ এর মধ্য দিয়ে বাড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা। ২০২২ সালে এ বন্দর বিশ্বের শীর্ষ ১০০ কনটেইনার বন্দরের মধ্যে ৬৭তম অবস্থানে ছিল। ওই বছর হ্যান্ডলিং হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টিইইউএস কনটেইনার।
নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছাকাছি পিসিটির অবস্থান। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগে টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব পায় আরএসজিটি, যাদের বিশ্বের বড় বড় বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আগামী ২২ বছর তারা চারটি জেটি সংবলিত টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষে সোমবার প্রতিষ্ঠানটি জেটিতে প্রথমবারের মতো ভিড়িয়েছে ফিডার জাহাজ ‘মায়েরস্ক দাভাও’। কনটেইনার লোড-আনলোডও শুরু হয়েছে। মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্ল্যাং থেকে আসা জাহাজটি পিসিটিতে প্রায় ৮০০ টিইইউএস কনটেইনার ওঠানামা করানোর পর পরবর্তী গন্তব্য ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ান বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবে।
প্রথম জাহাজ ভেড়ানো উপলক্ষ্যে সোমবার পিসিটিতে একটি সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আরএসজিটি। এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আরএসজিটি-বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরউইন হেইজ।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আজকে আমাদের জন্য আনন্দের একটি দিন। চট্টগ্রাম বন্দরের বয়স ১৩৭ বছর। এই প্রথম আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্বনামধন্য বিদেশি একটি অপারেটর প্রতিষ্ঠান ‘রেড সি গেটওয়ে’কে পেয়েছি। তারা আগামী ২২ বছর এ টার্মিনাল পরিচালনা করবে। সেই কাজ আজকে শুরু হলো। এর মাধ্যমে আমরা প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব পাব। এই সময় পার হলে তারা সব সরঞ্জামসহ টার্মিনাল বন্দরের কাছে হস্তান্তর করবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আরও বড় বড় আন্তর্জাতিক অপারেটরের সঙ্গে কাজ করব। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকগুণ বেড়ে যাবে। বিশ্বের আধুনিক সব বন্দর চলে ল্যান্ডলর্ড সিস্টেমে। আরএসজিটি-বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরউইন হেইজ বলেন, আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক লজিস্টিক চেইনে চট্টগ্রাম বন্দরের কেন্দ্রীয় ভূমিকা বাড়াতে অবদান রাখার জন্য উন্মুখ।
চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিসিটিতে চারটি জেটি রয়েছে। এর তিনটি কনটেইনার এবং একটি তেল খালাসের।