Bangladesh

শিল্পাঞ্চল থমথমে বিজিবির টহল: শ্রমিক আন্দোলনের মুখে সাড়ে ৪শ’ গার্মেন্টস বন্ধ

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক আন্দোলনের মুখে গাজীপুর আশুলিয়া ও মিরপুরে সাড়ে চারশ’ পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিজিবির উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক থাকলেও পরিস্থিতি থমথমে। তবে আশুলিয়া, সাভার ও রাজধানীর মিরপুরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা মাঠে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বিজিবি টহল জোরদার করলে তারা মাঠ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। বিকেল থেকে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
বিজিবি জানিয়েছে, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার গার্মেন্টসের নিরাপত্তায় তাদের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় গার্মেন্টসের নিরাপত্তা জোরদারে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আশুলিয়া, সাভার, মিরপুর, রামপুরা, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী ও গাজীপুর-কোনাবাড়ী এলাকার গার্মেন্টসগুলোর নিরাপত্তা জোরদারে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়।
সর্বশেষ জানা গেছে, বন্ধ গার্মেন্টসগুলো আগামীকাল শনিবার খুলে দেওয়া হতে পারে। বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কারখানা মালিকরা দেখা করার পর তিনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় যেসব কারখানা বন্ধ রয়েছে, সেগুলো শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান। তবে আগামীকাল শনিবার থেকে বন্ধ সব কারখানা খুলবে। তখন কোনো শ্রমিক যদি কাজ না করে আন্দোলন করেন, তাহলে বিষয়টি বেআইনি ধর্মঘট হিসেবে বিবেচিত হবে।
এদিকে কারখানা বন্ধের পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, বৃহস্পতিবার গাজীপুর শহরের আশপাশের এলাকা ছাড়াও কোনাবাড়ী, কাশিমপুর ও কালিয়াকৈরে ৩৮৬টি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। কারখানা বন্ধের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। অন্যদিকে শিল্প পুলিশ-১-এর (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ৩০ থেকে ৩৫টি পোশাক কারখানার ছুটির নোটিস পেয়েছি আমরা। আবার কিছু কারখানায় বৃহস্পতিবার সকালে কাজ শুরু হলেও পরে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক কারখানা শুক্রবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে নোটিস দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ছয়টি কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে এলেও ঘণ্টাখানেক পর কাজ বন্ধ করে তারা কারখানা থেকে চলে যান। সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কারখানা বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ ছিল স্বাভাবিক। তবে সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছে। শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে মহাসড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেয়। এ নিয়ে বুধরাত রাতে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গেও বৈঠক করেন। মালিকরা মন্ত্রীর কাছে বাড়তি নিরাপত্তা দাবি করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মিরপুর ॥ বৃহস্পতিবারও বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকরা মিরপুরে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করে। কিন্তু তাদের সড়ক থেকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মিরপুরের পূরবী সিনেমা হলের সামনে থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকে পূরবীর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ইপিলিয়ান, অ্যাপোলো নিটওয়্যার ও স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। তবে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিকদের সরিয়ে সড়কে অবস্থান নেয় বিজিবিসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছোড়ে পুলিশ।
পুলিশ লাঠি ও জলকামান এনে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ সময় প্রধান সড়ক ও অলিগলি থেকে গার্মেন্টস শ্রমিক ও উৎসাহী জনতাকেও সরিয়ে দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পুলিশ দেখে জয় বাংলা সেøাগান দিতেও দেখা গেছে তাদের। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শ্রমিকরা কালশী, মিরপুর ১২ নম্বর ও ৬ নম্বরের দিকে যেতে দেখা গেছে। তবে দুপুর ১২টা থেকে পূরবীর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এছাড়া পূরবী সিনেমা হলের সামনে পুলিশ সদস্য মোতায়ন রয়েছে। সেই সঙ্গে বিজিবি ও র‌্যাবকে টহল দিতে দেখা গেছে। এর আগে সকালে মিরপুর ১০ নম্বরে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসীন বলেন, সকালে মিরপুর ১০ নম্বরে আমাদের ওপর হামলা করেন পোশাক শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে তারা গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরাতে গেলে আবারও তারা পুলিশের ওপর হামলা করে। আমার মনে হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য অন্য কিছু, আমরা তাদের প্রধান সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। যাতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মিরপুর জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার হাসান মোহাম্মদ মুহতারিন বলেন, শ্রমিকরা কাফরুল ও পল্লবী থানার ওসির ওপর হামলা চালায়। এতে তারা আহত হন। আমরা তারপর অ্যাকশনে যাই। পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ফিরোজ বলেন, শ্রমিকরা মিরপুরে বিআরটিসির ডিপোতে ঢুকে বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেছে। আন্দোলনকারী পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে অবরোধকারীরা থাকতে পারে। আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সাভার ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা সাভার থেকে জানান, আশুলিয়ায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে দুটি পোশাক কারখানা ও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে আশুলিয়া থানাধীন কাঠগড়া এলাকায় ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের পোশাক কারখানা এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড ও নাসা গ্রুপের সাইন অ্যাপারেলস কারখানায় এ ভাঙচুর চালায় তারা। এ সময় এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড কারখানার গ্যারেজে রাখা একটি প্রাইভেটকার ও একটি নোহা মাইক্রোবাসে ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। শিল্প-কলকারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন পয়েন্টে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জলকামানসহ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও পুলিশের পাশাপাশি এলাকাজুড়ে এপিসিসহ (আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার) টহল দিচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা। এদিন সকাল থেকেই শ্রমিকরা মারমুখী থাকলেও তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়রা জানান, এদিন সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে কাঠগড়ার উত্তরপাড়া এলাকার ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের এআর জিন্সে হামলা চালায়। এ সময় তারা কারখানার শ্রমিকদের বের করে আন্দোলনে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেডের পার্কিং করা একটি প্রাইভেটকার ও একটি নোয়া গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। অন্যদিকে বেলা ১২টার দিকে কাঠগড়া আমতলা এলাকায় কয়েকটি কারখানার ২-৩ হাজার শ্রমিক হঠাৎ একত্রিত হয়ে নাসা গ্রুপের কারখানা সাইন অ্যাপারেলসে ভাঙচুর চালায়। এ সময় শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়ে কারখানার গ্লাস ও সিসিটিভি ক্যামেরাও ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ফ্যাশন গ্লোব গ্রুপের কোম্পানি সচিব আর এ কে লিটন বলেন, সকাল থেকে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কারখানায় কাজ চলছিল। সকাল ১০টার পর পার্শ্ববর্তী আগামী অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা হঠাৎ বের হয়ে এসে আমাদের কারখানায় হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা আজকের জন্য কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছি।
এদিকে সকাল থেকে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের তুলনায় আশুলিয়ার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে অবস্থিত কিছু কারখানা ছাড়া অধিকাংশ কারখানাই বন্ধ রয়েছে।
শিল্প-কলকারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন পয়েন্টে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জলকামানসহ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও পুলিশের পাশাপাশি এলাকাজুড়ে এপিসিসহ (আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার) টহল দিচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা। আশুলিয়া এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজিবির লে. কর্নেল রেজাউল কবির বলেন, গত পরশু থেকে আশুলিয়ায় আমাদের ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে আশুলিয়ার পরিস্থিতি গত পরশু ও তার আগের দিনের তুলনায় আজ ভালো রয়েছে। গতকালও অনেকটা ভালো ছিল। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। কিছু কিছু স্থানে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছিলেন, আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি। আপাতত পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিলে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে সরকার নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন। তার বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়। পরদিন থেকেই গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। পরে আশুলিয়া-সাভারেও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। গত সোমবার দুজন শ্রমিক নিহত হন। তারপর মঙ্গলবার আন্দোলন আরও সহিংস হয়ে উঠলে বিজিএমইএ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, মালিকরা চাইলে কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন, তারপরই কারখানা বন্ধ করে দেন মালিকরা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d