Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

শীতকালের রং বদল, বড় ধাক্কা কৃষিতে

এবার শীতের যেন কী হলো! মাঘ যায় যায়, তারপরও শীতের কাঁপুনি সেভাবে টের পেল না রাজধানীর মানুষ। উত্তরের কিছু এলাকায় শীতের ঝাপটা থাকলেও তা গতানুগতিক ধারার চেয়ে অনেক কম। জমিয়ে ফেলা ঠান্ডা এ মৌসুমে একেবারেই অনুপস্থিত। উল্টো দিনে ঘরের বাইরে গেলে রোদের তেজে পুড়ছে শরীর। শীতের ব্যাপ্তিও এসেছে কমে। প্রতিবার তীব্র শৈত্যপ্রবাহের চোটে দেশের মানুষ জবুথবু হলেও এবার তার ছিটেফোঁটাও নেই। 

জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবেই আবহাওয়ার এই রং বদল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শীতের তীব্রতা ও বিস্তার কমার ফলে সবচেয়ে বেশি ধুঁকছে কৃষি। ফসলের রোগবালাই বাড়ার পাশাপাশি সার্বিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা ব্যক্ত করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও ঋতুবৈচিত্র্যের কারণে কৃষি, উপকূলীয় অঞ্চল, পানিসম্পদ, বনাঞ্চল, মৎস্য, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি খাত বেশি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। শীতের দাপট না থাকলে ফসলের ফুল কম ফোটার শঙ্কা থাকে। আবার কিছু ফসল দ্রুত পরিণত হওয়ার কারণে ফলন কমে যায়। এ পরিস্থিতিতে আবহাওয়ার গতিবিধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।

 জলবায়ু পরিবর্তনই অনুঘটক
বাংলা ঋতুচক্রে ছয় ঋতুর কথা বলা হলেও আবহাওয়াবিদদের হিসাব খানিকটা ভিন্ন। তাদের কাছে ঋতু হচ্ছে চারটি– বর্ষাপূর্ব, বর্ষা, বর্ষা-পরবর্তী সময় ও শীত। এর মধ্যে শীতকাল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবার বছরের শুরুতে কিছুটা শীত অনুভূত হলেও এর তীব্রতা ছিল সপ্তাহখানেক। তার পর থেকে শীতের বিদায়ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। গ্রামে ভোর ও রাতে কিছুটা শীত অনুভূত হলেও শহরাঞ্চলে ঠান্ডা একেবারেই নেই। মাঘের শেষ সপ্তাহে এসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। 
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শীতলতম মাস জানুয়ারিতে দেশে একটিও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়নি। যদিও প্রতিবছর অন্তত একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয় এই মাসে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহহীন জানুয়ারি দেখা গিয়েছিল ৯ বছর আগে; ২০১৬ সালে। এবার জানুয়ারিতে গড় তাপমাত্রাও ছিল অন্য বছরের চেয়ে বেশি। বিপরীতে কুয়াশা পড়েছে কম। এভাবে শীত কমে যাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত, যা নানা দিক দিয়ে সংকট তৈরি করতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে ২০২৪ সালে চারটি, ২০২৩ সালে একটি এবং ২০২২ ও ২০২১ সালে তিনটি করে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়েছিল।

এই মৌসুমে একটিও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়নি। জানুয়ারির স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছরের জানুয়ারির গড় তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস; ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৭। 

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, এ বছর গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর একই অবস্থা। এ অঞ্চলে চলতি বছরে তেমন দীর্ঘ কিংবা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। এর অনেক কারণের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম। আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এবারকার শীত অন্য রকম। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। সাধারণত বছরের এ সময়ে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি থাকে না। এবার জানুয়ারিজুড়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য ছিল। এ কারণে জানুয়ারিতে স্বাভাবিক শীত পড়েনি। এর কারণ হলো বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। স্থানীয় প্রভাবের সঙ্গে ‘টেলিকানেকশন’, সবকিছু মিলেমিশে আবহাওয়ার খামখেয়ালি আচরণ দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়ার এমন বৈরিতার কারণ অনুসন্ধানে আরও গবেষণা করতে হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল, এই ৩০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রার সঙ্গে ২০২০ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রার তুলনা করলে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সারা বছরের তাপমাত্রাই বেড়েছে। কমেছে বৃষ্টি।

আবহাওয়াবিদ ড. বজলুর রশিদ বলেন, মূলত দু’ভাগে দেশের অভ্যন্তরে শীতের বাতাস প্রবেশ করে। একটি কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ হয়ে উত্তরবঙ্গ দিয়ে; আরেকটি চীন হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে। এই বাতাসটা বয়ে নিয়ে আসে পশ্চিমা লঘু চাপ। এবার ভূমধ্যসাগর থেকে এই বাতাস ভারত হয়ে আসার সময় জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে বেশি পরিমাণে। ফলে ওপরের বাতাস নিচে নামতে বাধা পায়। যে কারণে শীত স্থায়ী হতে পারেনি।

ধুঁকছে কৃষি
ফসলের সবচেয়ে বড় মৌসুম রবি। বোরো ধান, গম, ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল ও তেলবীজ উৎপন্ন হয় এ মৌসুমে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফসল উৎপাদন না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) শস্য উৎপাদন শাখার পরিচালক শওকত ওসমান বলেন, শীতের ব্যাপ্তি যে কমে আসছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এ কারণে শীতকালীন ফসলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শীত কম পড়লে গম, আলু ও শর্ষের মতো ফসলের ফুল কম ফোটার শঙ্কা থাকে। গমের ক্ষেত্রে তাপসহিষ্ণু জাতের বিস্তার ঘটেছে। তবে আলু বা শর্ষের তা নেই। তাই এসব ফসল এবার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ দাউদ হোসেন বলেন, প্রতিটি ফসলের একটা নির্ধারিত তাপমাত্রার স্তর থাকে। শীতকালীন ফসলের জন্য তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ বা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে টানা প্রায় আড়াই মাস থাকতে হয়। এই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে সব ফসলের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন কমে আসবে। তিনি বলেন, তাপমাত্রা বাড়লে ফসল দ্রুত পরিণত হয়ে ফলন কমে যায়। এ কারণে পরবর্তী মৌসুমে ধীরে ধীরে কৃষক ওই ফসলের আবাদ থেকে সরে আসে।

শীতকালীন ফসল সবচেয়ে বেশি হয় রাজশাহী অঞ্চলে। সেখানকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সামছুল ওয়াদুদ বলেন, শীতের সময় কমে যাওয়ায় আগের বছরগুলোতে গমের চাষ কমে গিয়েছিল। তবে এখন আটার দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ গম চাষে আবার ঝুঁকছে। তবে শীতের ব্যাপ্তি কম থাকায় গমসহ শীতকালীন ফসলের ফলন কম হবে, এতে সন্দেহ নেই।

মুন্সীগঞ্জের চাষি আব্দুর রহমান আড়াই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, এবার খুব একটা শীত নেই। তাই আলুর গাছ ভালো হলেও রাতে শীত, দিনে গরমের কারণে আলুর আকার ছোট হয়ে গেছে। 

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু নোমান ফারুক আহমেদ বলেন, রাতে ঠান্ডা দিনে গরম– এমন আবহাওয়া ধানের জন্য ক্ষতিকর। তখন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যায়। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রির বেশি হলে ব্লাস্ট প্রকট হতে পারে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ কৃষি থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। সমস্যা মোকাবিলা ও ঝুঁকি কমাতে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। আবহাওয়ার খেয়ালিপূর্ণ আচরণে যেসব ফসলের ক্ষতি হচ্ছে সেসব কৃষককে সহায়তা দিতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারাবিশ্ব ভুগছে। শীত কম হলে ফসলের দানা বা আকার ছোট হয়ে যায়; বীজের জন্য চাষ করা সবজির পুষ্পমঞ্জরি ভালো হয় না; পেঁয়াজের ফুল আগেই চলে আসে। সব মিলিয়ে উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। তবে আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগ আছে। কীভাবে জলবায়ু সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করা যায়, সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto