Trending

শুধু জরিমানায় পার আলেশা ইভ্যালি

ই-কমার্স কোম্পানির প্রতারণা ঠেকাতে হচ্ছে আইনি কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া থেকে কারাদণ্ডের বিধান প্রত্যাহার

১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে ইভ্যালি, আলেশা মার্টের মতো শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক ই-কমার্স কোম্পানিগুলো পার পেয়ে যেতে পারে। ই-কমার্স বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে এমন একটি আইন হচ্ছে, যেখানে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান থাকছে শুধু ‘আর্থিক জরিমানা’।

খসড়া আইনটির একটি ধারায় বলা হয়েছে, অনলাইনে কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য অসত্য বা অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা বা গ্রাহকদের প্রতারিত করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং পরবর্তীতে প্রতিবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। এ জরিমানা করবে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ। সরকার ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ নামে যে আইন করতে যাচ্ছে, সেখানে এ ধরনের নামমাত্র জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এর আগে প্রস্তাবিত ‘ডিজিটাল কমার্স অ্যাক্ট’-এর খসড়ায় একই অপরাধে ২ বছরের কারাদন্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান সংযুক্ত ছিল। তবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তাদের চাপে ওই আইনটি থেকে সরে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন তারা ডিজিটাল বাণিজ্য পরিচালনায় একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এ লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ আইন-২০২৩’ নামে একটি আইনের খসড়া করে সুবিধাভোগীদের মতামত নিতে গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। ওই খসড়া ঘেঁটে দেখা যায়, এতে আগের প্রস্তাবিত আইনে যেসব জায়গায় কারাদন্ডের বিধান ছিল তার সবই প্রত্যাহার করে একই ধরনের শাস্তির জন্য শুধু আর্থিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে এর সুযোগ নিয়ে ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জের মতো শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া ই-কমার্স কোম্পানিগুলো পার পেতে পারে। উপরন্তু এ ধরনের একটি নমনীয় আইনে গঠিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিশালাকার ডিজিটাল বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হবে না। প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের সাবেক মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের সাবেক প্রধান কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, যথাযথ শাস্তির বিধান না থাকলে এ ধরনের আইনের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। নমনীয় আইনে গঠিত কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের প্রভাব রাখতে পারবে না। ডিজিটাল ব্যবসায় নতুন নতুন প্রতারণা ঠেকাতে আইনটি আরও কঠোর করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালে ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, আলীবাবার মতো বেশ কয়েকটি কোম্পানির মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রতারিত করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর সরকার এ বিষয়ে একটি আইন করার বিষয়ে যথেষ্ট কঠোর ছিল। তবে ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই এ ধরনের আইনের বিরোধিতা করে আসছিল। তাদের দাবি ছিল, প্রচলিত আইনেই ই-কমার্স প্রতারণার বিচার সম্ভব; নতুন আইনের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) একটি গোলটেবিল আয়োজন করে জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত ‘ডিজিটাল বাণিজ্য আইন-২০২৩’ পাস হলে ই-কমার্স ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়বে; ই-কমার্স ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়বে। নতুন এ আইন কোনোভাবেই ব্যবসাবান্ধব নয়। এরপরই সরকার প্রস্তাবিত আইনটির বদলে পৃথক ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠনে মনোযোগ দেয়। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত আইনটির শাস্তির বিধান থেকে কারাদন্ডের বিধান প্রত্যাহার করা হয়। নামকাওয়াস্তে কিছু পরিমাণ আর্থিক জরিমানার বিধান রেখে খসড়াটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়।

আগের আইনের খসড়ায় যেসব শাস্তির বিধান ছিল : ‘ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়ায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য বিক্রি করলে অনলাইন বিক্রেতাকে দুই বছরের কারাদন্ড অনাদায়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড; নির্ধারিত সময়ে পণ্য বা সেবা সরবরাহ না করলে মূল্যের তিনগুণ জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড; নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে তিন বছর কারাদন্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা; অনুমতি ব্যতীত ডিজিটাল বা গিফট কার্ড, ওয়ালেট, ক্যাশ ভাউচার করলে ছয় মাস কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা; ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে লটারি আয়োজন করলে দুই বছর কারাদন্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছিল।

ওয়েবসাইটে আপলোড আইনের খসড়ায় যা আছে : নিবন্ধন ব্যতীত পণ্য বিক্রি করলে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা; চুক্তি অনুযায়ী গ্রাহককে পণ্য না দিলে পণ্য মূল্যের অর্থ ফেরত অথবা সেবামূল্যের দ্বিগুণ জরিমানা; নিষিদ্ধ পণ্য অনলাইনে বিক্রির জন্য ১ লাখ টাকা জরিমানা; অসত্য তথ্য দিয়ে পণ্য বিক্রি করলে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা; অনলাইন কেনাকাটায় কর্তৃপক্ষের তদারকিতে বাধা দিলে ১ লাখ টাকা জরিমানা, কর্তৃপক্ষের চাহিত তথ্য নির্ধারিত সময়ে না দিলে বা তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে ৫ লাখ টাকা জরিমানা; এ আইনের অধীন পেমেন্ট গেটওয়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের চাহিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানালে ৩ লাখ টাকা জরিমানা, অনলাইন বিক্রেতার ওয়েবসাইটে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা না রাখলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor