Hot

শুধু প্রবাসে নয়, এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে আইস

উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন বাবু (ছদ্মনাম)। এক বছরের এমবিএ কোর্সে ভর্তি হলেও তাঁর দেশে ফিরতে সময় লাগে দুই বছর আট মাস। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও পুরো সময় বাবু বুঁদ হয়ে ছিলেন ক্রিস্টাল মেথ বা আইস নামের নতুন মাদকে।

এমন গল্প কাওসার (ছদ্মনাম) নামের আরেক যুবকেরও।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত চাকরি খুইয়েছেন তিনি, হারিয়েছেন সামাজিক মর্যাদাও। সর্বস্ব খুইয়ে তিনি ফিরেছেন দেশে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকার একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে।

আইস

শুধু প্রবাসে নয়, আইসের ছড়াছড়ি এখন দেশেও। হাত বাড়ালেই মিলছে ভয়ংকর এই মাদক। সাভারের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রনি নামের এক মাদকাসক্ত জানান, ইয়াবার ডিলারের কাছ থেকে এই মাদকের সন্ধান পান তিনি। এরপর শুরু করেন আইসের ব্যবসা।

প্রায় সব মাদকাসক্ত বলছে, আইসের ভয়ংকর আসক্তির কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও শারীরিক ক্ষতির শিকার হয়েছে তারা।

বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগীদের দাবি, এই মাদক এখন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।

নিয়মিত আইস চোরাচালান করেন এমন একজন মাদক কারবারির সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠ’র। তিনি জানান, মালয়েশিয়ায় পড়তে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী পাকিস্তানি উৎপাদকদের কাছ থেকে আইস তৈরির কৌশল শিখেছেন। দেশে ফিরে তাঁরা ল্যাবে নিষিদ্ধ মাদক আইস তৈরি করছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, ইয়াবার তুলনায় অন্তত চার গুণ বেশি ম্যাথ-অ্যামফিটামিন (এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান) থাকায় আইস অনেক বেশি বিষাক্ত।

এটি অতিরিক্ত সেবনে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভারের জটিলতা হতে পারে। এই মাদক নেওয়া বন্ধ করলে মানসিক অবসাদ বা বিষণ্নতার কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

আইসের বিস্তৃতি সম্পর্কে ধারণা মেলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পরিসংখ্যানে। সংস্থাটি বলছে, ২০১৯ সালের শুরুর দিকেও দেশে এই মাদকের অতটা পরিচিতি ছিল না। সে বছর উদ্ধার করা হয় মাত্র পাঁচ গ্রাম আইস। ২০২৩ সালে তা গিয়ে ঠেকে প্রায় ১৮৭ কেজিতে। অর্থাৎ মাত্র চার বছরে আইসের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে।

ডিএনসির তথ্য মতে, দেশে মাদক উদ্ধারের পরিসংখ্যানে এখন উল্লেখযোগ্য নাম আইস। ২০২০ সালে ৬৫ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়। ২০২১ সালে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৩৮ কেজি। পরের বছর ১১৩ কেজি।

চলতি বছরের প্রথম দেড় মাসে দেশে প্রায় সাত কেজি আইস উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে সর্বনিম্ন চালানেই ছিল এক কেজির বেশি। এসব চালানের বেশির ভাগ ধরা পড়েছে মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায়।

মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক শহিদুল করিম বলেন, শুরুর দিকে নিরাময় কেন্দ্রে মাদকাসক্ত রোগী বলতে ছিল হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজায় আসক্তরা। এক পর্যায়ে ৯৫ শতাংশ ঘটনাই ছিল ইয়াবার। এখন আইসে আসক্ত রোগী বেশি। অনেক শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে কৌশল রপ্ত করে বাংলাদেশে এই মাদকের কারখানা তৈরি করেছেন। আসক্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

অনুসন্ধান বলছে, অধিক লাভজনক হওয়ায় ইয়াবাকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে আইস। রাতারাতি চাহিদা তৈরি হওয়ায় লাভের আশায় অন্য মাদক ছেড়ে আইস বিক্রিতে নেমেছে অনেক ডিলার। দেশীয় কারখানা তো আছেই, মিয়ানমার থেকেও ঢুকছে দেদার। অন্যদিকে ভারতের সীমান্তপথে এবং বিমানে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকেও অহরহ নিয়ে আসা হচ্ছে আইসের বড় চালান।

সমাজের প্রভাবশালী কিছু মানুষ আইস চোরাচালানিদের গডফাদার হিসেবে ভূমিকা রাখছেন বলে জানান মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এই চোরাচালানচক্র এবং তাদের গডফাদারদের নজরদারির মধ্যে রেখেছি। এখনই তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না। যথাসময়ে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইসের মতো ভয়ংকর মাদক দেশে যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে নজরদারি বৃদ্ধি প্রয়োজন। এ জন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছি।’

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ফরেনসিক ল্যাবের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, বেশির ভাগ আইস ঢুকছে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে দফায় দফায় জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বেশি কড়াকড়ি থাকলে এগুলো মণিপুর, মিজোরাম ও ত্রিপুরা হয়ে দেশে ঢুকছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। তারা সীমান্তের ওপারে যোগাযোগ রেখে দীর্ঘদিন ধরে এসব মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অন্যান্য মাদকের মতো আইসও ধরা পড়ছে র‌্যাবের অভিযানে। এখন পর্যন্ত র‌্যাব প্রায় ৬৫ কেজি আইস জব্দ করেছে। পাশাপাশি এসব মাদক সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দেখা যায়, এই মাদকের দাম অন্যান্য মাদকের তুলনায় তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সমাজের উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের তরুণরা এটি বেশি ব্যবহার করেন।

মালয়েশিয়া থেকে প্রথম চালান

অনুসন্ধান চলাকালে আন্তর্জাতিক আইস চোরাচালানচক্রের এক সক্রিয় সদস্য প্রতিবেদকের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করতে রাজি হন। আনিস নামের এই ব্যবসায়ী জানান, ২০১৩ সাল থেকে মালয়েশিয়া থেকে অন্তত ২০০ বারের বেশি বাংলাদেশে আইস পাচার করেছেন তিনি। অথচ বাংলাদেশে এই মাদকের নাম প্রথমবার শোনা গিয়েছিল ২০১৯ সালে।

কালের কণ্ঠকে আনিস বলেন, ‘২০১৩ সালে মালয়েশিয়া থেকে শখের বশে মাত্র পাঁচ গ্রাম আইস নিয়ে আসি। পরে অভিজাত এলাকায় তরুণ-তরুণীর মধ্যে এর ব্যাপক চাহিদা দেখে বেশি পরিমাণে আইস পাচার করি। প্রথমদিকে প্রতি গ্রাম আইস বিক্রি হতো ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকায়, যেখানে মালয়েশিয়ায় প্রতি গ্রাম আইস কেনা হতো মাত্র আড়াই হাজার টাকা দিয়ে। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি গ্রাম আইস পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক এই আইস পাচারকারী দাবি করে বলেন, শুরুর দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অজ্ঞতা ও নজরদারির অভাবে বিমানবন্দর দিয়ে আইস পাচার করতে কোনো সমস্যায় পড়তে হতো না। ২০১৯ সালে দেশে প্রথমবারের মতো এই মাদক উদ্ধার হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ে।

আনিসের ভাষ্য, রাতারাতি গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি ও পুরান ঢাকার বনেদি পরিবারের সন্তানদের ভেতরে এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। একসময় মাদকাসক্তদের কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম অর্থ দিয়ে এই ব্যবসা পরিচালনা করেছেন তিনি। কুয়ালালামপুরে পাকিস্তানি উৎপাদক ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বাংলাদেশের বাজারে এসব আইস ছড়িয়ে দেওয়া হতো। দেশের বাজারে এসব আইস ছড়িয়ে দিতে অন্তত শতাধিক ইয়াবা ডিলার সক্রিয়ভাবে কাজ করে বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে মাদকের হাটে

আনিসের কথার সূত্র ধরে মাদকের খুচরা বাজারে অনুসন্ধান চালায়। একটি পুনর্বাসনকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা সোহেল (ছদ্মনাম) জানান, ইয়াবার ডিলারের কাছ থেকে আইসের সন্ধান পান তিনি। এই মাদককে সাংকেতিক ভাষায় বিক্রেতারা ‘দাদা’ নামে সম্বোধন করেন। কালের কণ্ঠকে সোহেল বলেন, ‘ইয়াবার চেয়ে পাঁচ গুণ নেশা হয় আইসে। এক গ্রাম আইস কিনতে খরচ হতো পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা।’

মাদকাসক্তদের দেওয়া সূত্র ধরে ছদ্মবেশে এক খুচরা আইস ব্যবসায়ীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন প্রতিবেদক। রাজু নামের ওই ব্যবসায়ী প্রতিবেদককে রাজধানীর ধানমণ্ডির ২৭ নম্বর সড়কে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে রাজুর কাছ থেকে সাত হাজার টাকার বিনিময়ে এক গ্রাম আইস সংগ্রহ করেন প্রতিবেদক। কৌশলী কথোপকথনে রাজু প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে দেশে তৈরি আইস বিক্রি করছেন অনেক মাদক বিক্রেতা। তবে এসব আইস বিদেশ থেকে আসা আইসের মতো মানসম্পন্ন নয়। রাজু দাবি করেন, তাঁর সরবরাহ করা আইস এসেছে মিয়ানমার থেকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, খিলক্ষেত, গুলশান, বনানী, উত্তরা, লালমাটিয়া, ওয়ারী, গেণ্ডারিয়ার নানা স্পটে ইয়াবার পাশাপাশি অবাধে আইস বিকিকিনি চলছে। বেশির ভাগ বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশি লাভের আশায় তাঁরা মূলত আইস বিক্রিতে নেমেছেন। বাজারেও এর বেশ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আর এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ হয় মুঠোফোনে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইস বিক্রেতা জানায়, বহু রকমের সেবন কৌশল ও ইয়াবা থেকে অনেক গুণ বেশি মাদকতা থাকায় আইসের প্রতি নতুন সেবনকারীরা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। আর ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণের সুযোগ থাকায় অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ীও ঝুঁকে পড়েছেন আইস ব্যবসায়।

জার্মানিতে সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলকভাবে আইস প্রয়োগ করা হয় ১৮৮৭ সালে। যুদ্ধবিমানচালকদের দীর্ঘক্ষণ নির্ঘুম, নির্ভীক, মনোযোগী ও উত্তেজিত রাখতে এটি ব্যবহার করা হতো। তবে সেনা থেকে সাধারণ উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাবের কারণে ১৯৭০ সালে আইস নিষিদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot