Trending

শেষ সময়েও তহবিল নিয়ে অনিশ্চয়তা

দারিদ্র্য, ক্ষুধা, যুদ্ধ, দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় অস্থির এই সময়ে ছোট ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর কাছে জলবায়ু সম্মেলন ছিল আশা-ভরসার প্রতীক। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতবিক্ষত দেশ সারাবছর তাকিয়ে থাকে এই সম্মেলনের দিকে। সেই আশায় গুড়ে বালি! সাম্প্রতিক সময়ে কোনো জলবায়ু সম্মেলন এতটা হতাশাজনক হয়নি। আজারবাইজানের বাকুতে ‘কপ২৯’ জলবায়ু সম্মেলনে বাজছে বিদায়ের সুর। কাল শুক্রবার সম্মেলনের পর্দা নামছে।

শেষ সময়ে এসেও বাকুজুড়ে হতাশার ছায়া। কেউ জানে না, উন্নত বিশ্ব প্রতিশ্রুতি মতো দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশকে কার্বন নির্গমন কমাতে অর্থ সহায়তা করবে কিনা। জলবায়ু নিয়ে এত হইচইয়ের পরও মন গলছে না বিশ্ব মোড়লদের। পরিবেশের উন্নতিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দড়ি টানাটানির অবসান কীভাবে হবে, এখনও বিষয়টির স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই। তবে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশাপাশি গোটা আফ্রিকা নাছোড়। দাবি, ২০২৫ সাল থেকে বছরে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার চাই-ই চাই, যা ঋণ নয়, হতে হবে অনুদান। টাকাকড়ি নিয়ে দরকষাকষি শেষে কী ঘোষণা হবে, এখনও অজানা। কত অর্থ দিতে উন্নত বিশ্ব রাজি হবে, তাতে প্রয়োজন কতটা মিটবে, সেই ধারণা পাওয়া যায়নি ১০ দিনেও। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, ১৫ বছরেও এমন ঘোলাটে সম্মেলন হয়নি। শেষ সময়েও স্পষ্ট রূপরেখা দেখা যাচ্ছে না। 

আশাহত করল জি২০, বিমর্ষ বাকু

বাকুতে জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে সমবেত হয়েছিলেন জি২০ নেতারা। 

বাকুতে পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা গভীর আগ্রহ নিয়ে সেই দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আশা ছিল, রিও থেকে ইতিবাচক কোনো ইঙ্গিত বাকুতে আসবে, যা অর্থায়নের সমস্যার জট কাটাতে সাহায্য করবে। তবে জলবায়ু সংকট নিয়ে কোনো ঐক্যে পৌঁছাতে পারেননি শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি২০ নেতারা। 

জলবায়ু সম্মেলনে থমকে যাওয়া আলোচনায় এই জোট নেতাদের গতি ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘ। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির শিকার দেশগুলোকে কারা অর্থ সহায়তা দেবে, এই আলোচনায় বিভক্ত হয়ে পড়েন জি২০ নেতারা। তারা বলেন, একক কোনো দেশ নয়, লাখ লাখ কোটি ডলারের এ সহায়তা সব উৎস থেকেই আসতে হবে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার আরেকবার হতাশা ছেয়ে যায় বাকুতে। 

জলবায়ুর স্বার্থে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর উন্নত বিশ্ব উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলার দিয়ে চলেছে। অথচ এই অর্থ ‘সিন্ধুতে বিন্দুসম’। এতে তাপমাত্রা কম তো হয়ইনি, বরং শূন্য দশমিক ৮ ডিগ্রি বেড়ে গেছে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ধরে রাখতে হলে এখন প্রয়োজন বছরে ১ লাখ কোটি ডলার। এটাই নতুন লক্ষ্য বা ‘এনসিকিউজি’। রিও সম্মেলনের ঘোষণায় জি২০ নেতারা জলবায়ুর উন্নতিতে ‘বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়নে’ যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন; অর্থাৎ অন্তত ১ লাখ কোটি ডলারের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন। তবে সেই স্বীকৃতি নতুন কিছু নয়। গত বছর দিল্লিতে জি২০ আসরেও নেতারা এই প্রয়োজন মেনে নিয়েছিলেন। বাকুতে সম্মিলিত পরিবেশকর্মীরা ভেবেছিলেন, কোথা থেকে কীভাবে উন্নত বিশ্ব সেই অর্থায়ন করবে, তার একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত বা প্রতিশ্রুতি হয়তো রিও থেকে আসবে; কিন্তু তা এলো না।

কপ২৯-এর প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবাইয়েভ গত সোমবার সরাসরিই জানিয়েছিলেন, রিও থেকে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি শোনার জন্য তারা মুখিয়ে আছেন। কেননা, সেই প্রতিশ্রুতি ছাড়া বাকু সম্মেলন সফল হবে না। অথচ তা না হওয়ায় বাকুর সাফল্য নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রধান সাইমন স্টিয়েল অবশ্য আশা ছাড়তে নারাজ। তিনি বলেছেন, ‘রিও থেকে বাকুতে আলোচকদের কাছে স্পষ্ট বার্তা পাঠানো হয়েছে, অর্থায়নের নতুন লক্ষ্য তৈরি করেই যেন সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলন সফল করতে হবে। কেননা, এর সঙ্গে সবার স্বার্থ জড়িয়ে আছে।’

উন্নত দেশকে প্রতিশ্রুতি পূরণে এগিয়ে আসার আহ্বান উপদেষ্টা রিজওয়ানার

গতকাল বিকেলে কপ২৯-এ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফায়েড গোলের (এনসিকিউজি) আওতায় পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন জলবায়ু অর্থায়নের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অভিযোজন, প্রশমন এবং ক্ষয় ও ক্ষতিপূরণের জন্য ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন এবং প্রশমনের জন্য স্বল্প সুদের ঋণের প্রস্তাব দেন। সৈয়দা রিজওয়ানা ২০২৩ সালের অ্যাডাপটেশন ফান্ড গ্যাপ রিপোর্টের তথ্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অভিযোজন প্রয়োজন, যেখানে দেশীয় উৎস থেকে মাত্র ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ হচ্ছে। ফলে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিশাল ঘাটতি রয়েছে, যা অনুদানভিত্তিক অর্থায়নের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জন করতে প্রস্তুত, যদি প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের গবেষকদের চোখে কপ২৯

সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণবিষয়ক লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, সম্মেলন শেষের পথে। এখনও অর্থায়ন, তহবিল, অভিযোজন, খাদ্য ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, লস অ্যান্ড ড্যামেজ এবং মানবাধিকার বিষয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করেননি। শুধু অঙ্গীকার ঘোষণার ভেতর সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, অঙ্গীকার বাস্তবায়নের রূপরেখা ও টার্গেট ঘোষণা করতে হবে। জলবায়ু ও জীবনবান্ধব খাদ্য ব্যবস্থার জন্য গ্রামীণ ক্ষুদ্র কৃষক এবং জনগোষ্ঠীনির্ভর এগ্রোইকোলজিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। 

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তার সুনির্দিষ্ট চুক্তি ছাড়াই কপ২৯ সম্মেলনে প্রবেশ করেছে ধনী রাষ্ট্রগুলো। উন্নত দেশগুলো গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানো এবং চরম আবহাওয়ার প্রভাব মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচিত হয়েছে। সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে ধনী দেশগুলো তাদের ঐতিহাসিক দায় শোধ করতে পারে এবং বিশ্বকে একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor