সরকারের পরতে পরতে সাবেক ছাত্রলীগ, প্রশাসনের বাটন ঊর্মিদের হাতেই
‘বিসিএসে তোমরা লিখিত পরীক্ষাটা ভালো করে দাও, বাকি ভাইভা পরীক্ষাটা আমরা দেখব। আমি তোমাদের পাশে দাঁড়াব। দরকার হলে কোচিংয়ে ক্লাস নিবো। মেধাবীরাই ছাত্রলীগ করে এবং তারাই দেশকে নেতৃত্ব দেয়’ (এইচ টি ইমাম)। ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই বার্তা দেন। আওয়ামী লীগ রেজিমের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতিবিষয়ক এই উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতির পর সরকারি চাকরির বাজারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিসিএস চাকরি মানেই যেন হয়ে গেছে ছাত্রলীগ আর আওয়ামী লীগ নেতাদের আত্মীয়-স্বজনকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়া। গত এক যুগ কার্যত বিএনপি ও জামায়াত পরিবারের সন্তানদের জন্য ‘বিসিএস চাকরি নিষিদ্ধ’ ছিল। সাধারণ ঘরের মেধাবী ছেলেমেয়েরা মেধায় উপরের দিকে থাকলে কদাচিৎ চাকরি হতো। বাকী পদ হয় কোটায় নয়তো ছাত্রলীগের নেতাকর্মী দিয়ে পূরণ করা হতো। এই রেওয়াজ চলে আসছে অনেকদিন থেকে।
সরকারি চাকরি শুধু বিসিএস নয়, অন্যান্য নন ক্যাডার চাকরিতে এমনকি মালি-পিয়ন পদে নিয়োগে ছাত্রলীগকে প্রাধান্য দেয়া হতো। টাকার বিনিময় এবং আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ছাড়া সরকারি চাকরি পেয়েছে এমন সংখ্যা খুবই কম। হোসেন তৌফিক ইমামের (এইচ টি ইমাম) ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্দেশ্যে ‘আমি তোমাদের পাশে দাঁড়াব’ ফসল হচ্ছে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহকারী কমিশনার বেগম তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি। গত এক যুগে প্রতি বছর বিসিএস ক্যাডারে যে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার কিছু হয়েছে কোটায় নয়তো ওই ছাত্রলীগেরই। এদের মগজ আগে থেকে ধোলাই করে মুজিববাদী করা হয়েছে। জ্ঞানবিজ্ঞানে পৃথিবীর বাতায়নের দরজা খুলে গেছে অথচ এদের জ্ঞানের পরিধি ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সরকারি চাকরি করেও এরা চিন্তার জগতে শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা, বাকশালের বাইরে যেতে পারেন না। ফলে গত কয়েক বছরে প্রশাসন যন্ত্র কার্যত ছাত্রলীগের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
শুধু কি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তাবাসসুম , প্রশাসনে আরো হাজার হাজার আওয়ামী লীগ ভক্ত রয়েছে যাদের মগজ ধোলাই করা। বর্তমানে ক্যাডার সার্ভিসে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থেকে শুরু করে, ইউএনও, এডিসি, ডিসি, এসপি, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব, সিনিয়র সচিব পদে রাজনৈতিক চেতনায় আওয়ামী লীগের বাইরে তেমন কেউ নেই। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পরও এদের বেশির ভাগই প্রশাসনে তৎপর রয়েছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিগত বছরগুলোতে বঞ্চিত আমলারা নানা দাবি দাওয়া নিয়ে এগিয়ে আসেন। গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। তাছাড়া হাসিনার সেবাদাসদের প্রশাসনে রেখে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সংস্কার কার্যক্রম সম্ভব নয়। এটা বুঝতে পেরে প্রশাসনের কিছু জায়গায় আমলাদের মধ্যে ব্যালেন্স করার চেষ্টা হচ্ছে। আর সে ব্যালেন্স করতে গিয়ে জামায়াত অনুসারীদের সেখানে নেয়া হচ্ছে। বিএনপি চেতনাধারী নাম শুনলেই তার বিপক্ষে নানা অজুহাত তোলা হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিগত ১৫ বছর নিয়োগের যোগ্যতা ছিল রাজনৈতিক পরিচয়। লেখাপড়ার সময় ছাত্রলীগ করেছে কিনা, পিতা-মাতা বা পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী কিনা নিদেনপক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে আওয়ামী লীগ আছে কিনা সে সব দেখে নিয়োগ দেয়া হতো। শুধু তাই নয়, মেধাবী কেউ বিসিএসে টিকে গেলে নিয়োগের আগে পুলিশী তদন্তে বাদ দেয়া হতো। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার বিএনপি নেতা আফসার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম তিনবার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বিএনপির নেতার ছেলে হওয়ায় তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। সর্বশেষ ৪২ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পেয়ে জেলার তৎকালীন এসপি বিপ্লব কুমার সরকারের সঙ্গে দেখা করে তার পুলিশী রিপোর্ট পজেটিভ দেয়ার অনুরোধ করেন। জবাবে এসপি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাকে রংপুরে এসপি হিসেবে পাঠিয়েছে বিএনপির নেতার ছেলেকে বিসিএসের চাকরি দেয়ার জন্য নয়’। ছাত্রলীগের কেউ রিটার্নে পাস করলেই বিসিএস চাকরি নিশ্চিত হওয়ায় প্রশাসনের এ টু জেড হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ ঘরানার। পতিত হাসিনাও সরকারি কর্মকর্তাদের পদ-পদবিতে যোগ্যতা-অভিজ্ঞতার চেয়ে ‘মুজিববাদী’ চেতনাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। হাসিনা রেজিমে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। সে জন্য বৈশ্বিক মহামারী করোনার সময় শেখ হাসিনা সচিব ও ডিসিদের দিয়ে সারাদেশে কিছু মানুষের কাছে প্রণোদনা বিতরণ করেছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী অথচ আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে মিছিল নিয়ে হাজির হওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। রাজনৈতিক দলীয় সেøাগান দিয়ে সরকারি চাকরি করলে প্রমোশন, পয়সার খনিতে পদায়নে সুবিধা হয়। ফলে চাকরির শৃংখলা ভঙ্গ করায় প্রশাসনে সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিদের (আওয়ামী তাবেদার) সংখ্যা বেড়েছে। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হাজার হাজার তাপসীরা (সাবেক ছাত্রলীগ) কাজ করছেন। বলা যায় ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও এখনো প্রশাসন পরিচালনার বাটন তাদের হাতেই।
শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ নেতাদের কেউ পালিয়েছেন, কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। কেউ রিমান্ডে হাহুতাশ করছেন, কেউ কেউ পালানোর লক্ষ্যে সীমান্তের জেলাগুলোতে মানুষের বাসাবাড়ির গর্তে লুকিয়ে রয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনে তাপসীদের (আওয়ামী চেতনাধারী) সংখ্যা কমেনি। তিনটি নির্বাচনের নামে সার্কাস করে ক্ষমতায় আনার হাসিনা তাদের বৈধ-অবৈধ সুবিধা দেন। ওই বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা ও আমলা শত শত কোটি টাকা লুট করে গণহত্যার পর পালিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের পরিচিতি যোগ্যতায় সরকারি চাকরি পাওয়া হাজার হাজার কর্মকর্তা ঘাপটি মেরে বসে আছেন। ইতোমধ্যে অতি আওয়ামী লীগার কয়েক জনের উপর রিসেট বাটন ক্লিক করা হয়েছে। তারা কেউ চলে গেছেন কেউ ওএসডি আছেন। কেউ কেউ সেট বাটন নিয়ে রিসেট বাটনে ক্লিক পড়ার ভয়ে আছেন। এখন গিরগিটির মতো রং বদল করে উপর মহলকে ম্যানেজ করার চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাবেক ছাত্রলীগ বেশির ভাগ আমলাই বহাল তবিয়তে কাজ করছেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা আওয়ামী লীগ যোগ্যতায় সরকারি চাকরি পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়া আমলাদের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
দিল্লির নাচের পুতুল শেখ হাসিনার তাবেদার বিতর্কিত তাপসী তাবাসসুম উর্মির বিরুদ্ধে আদালতে মানহানি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালতে গণঅধিকার পরিষদের প্রচার সম্পাদক আবু হানিফ মামলাটি দায়ের করেন। তাকে ২৮ নভেম্বর আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস, জুলাই গণহত্যা ও শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা তাপসী উর্মির বিচারের দাবিতে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডুয়েটের প্রধান ফটকে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদ ফটকে গতকাল সাময়িক বরখাস্ত সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুমকে স্থায়ী বরখাস্ত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। বিতর্কিত তাপসী উর্মি সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ফেসবুকে লেখেন ‘চেতনা বিক্রি, গণহত্যা, যে বলা হচ্ছে জুলাই মাসের গণহত্যা… এগুলো সবই তদন্ত সাপেক্ষ। এগুলো তো প্রমাণিত নয়। আগে প্রমাণিত হোক তারপর দেখা যাবে। কিন্তু যেটা মীমাংসিত সত্য, সেটাকে তো কেউ মুছে ফেলতে পারে না’। ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ বক্তব্যের জন্য তার বিচার দাবি করা হয়েছে।
তাপসী তাবাসসুম উর্মি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। তাকে নিয়ে নানান মন্তব্য, বক্তব্য দিচ্ছেন নেটিজেনরা। তার বিপক্ষে এবং পক্ষে বিতর্ক চলছে। এবিসি ফোরাম অনলাইন টিভির টকশোতে সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী বলেছেন, ‘তাপসী তাবাসসুম উর্মি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অথচ ‘বাটন পুশ’ বোঝেন না? ড. ইউনূস কিভাবে ওই শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা বোঝার মতো শিক্ষা নেই কোন যোগ্যতায় তিনি বিসিএসের চাকরি পেয়েছেন। ছাত্রলীগ কোটায় চাকরি পাওয়ার এই তাপসী উর্মির মতো অনেক অযোগ্য অপদার্থ আমলা আওয়ামী লীগার হিসেবে এখনো চাকরি করছেন। তাছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয় তাকে কয়েক কোটি টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এমনটা করতে পারেন। কারণ সে আওয়ামী লীগের হওয়ায় বিসিএস চাকরি পেয়েছে। টাকা পেলে তো সারাজীবন বসে খেতে পারবে। তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।’ চিন্তক ও প্রখ্যাত ইউটিউবার পিনাকি ভট্টাচার্য বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘ওই মাইয়া (তাপসী উর্মি) কয়, ৩০ লক্ষ শহীদ একটা মীমাংসিত বিষয়, ওই মাইয়া কোত্থেকে জানলো? এতই যদি মীমাংসিত হয় তাহলে জাতিসংঘ গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেয় না কেন?’ তিনি বলেন, ‘এই যে জুলাই আগস্টে যে গণহত্যা হইলো, যে হত্যাকাণ্ড করলো তার নাকি কোনো প্রমাণ নাই। চিন্তা করছেন কেমন জাউরা এই মাইয়া। কেমন শয়তান। এই বদমাইশ বাংলাদেশের সরকারের চাকরি করে।’
বিতর্কিত তাপসী উর্মিকে নিয়ে নেটিজেনরা নানান বক্তব্য চলছেই। তার বাবা নীরব থাকলেও মা প্রফেসর নাসরিন জাহান মেয়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ‘ঊর্মি ছাত্রজীবনে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তবে ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। তখন তার ৪০তম বিসিএস পরীক্ষা ছিল। সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছে। সেখান থেকে মাস্টার্স করেছে। আমার সন্তানরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই।’ কিন্তু জানা গেছে, আওয়ামী আত্মীয় কোটায় চাকরি পাওয়া তাপসী উর্মি হাসিনার পালানোর পর সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঠিক করেছেন বিদেশে গিয়ে ক্যারিয়ার গড়বেন। সেজন্য ১ সেপ্টেম্বর রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার থেকে পাসপোর্টের জন্য এনওসি নেন। সম্প্রতি ‘হায়ার স্টাডি অ্যাবরোড’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে তাকে যুক্ত হতে দেখা যায়। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি চাকরি থেকে দ্রুত বের হতে ভাইরাল হওয়া কৌশল বেছে নিয়েছেন। বিদেশে ভিসা পাওয়া কিংবা প্রয়োজনে অ্যাসাইলাম পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করতে ঊর্মি এমন চাতুর্যের আশ্রয় নেন। প্রথমে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে জনরোষ তৈরি করতে তিনি আবু সাইদকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। কিন্তু তার ফেসবুক প্রোফাইল লক থাকায় সেটা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। কিন্তু এবার প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে তার পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। এতে সফল হন তিনি।
হাসিনা পালানোর পর অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দুই মাস হয়ে গেছে। এখনো প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে পারেনি। এমনকি প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর আগ্রহ নেই। যে হাসিনা ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে প্রায়ই ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে হুংকার দিচ্ছেন। ‘ড. ইউনূস এক মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না’ বলে হুমকি দিচ্ছেন। সংখ্যালঘু নির্যাতন, জুডিশিয়াল ক্যু, আনসারদের দিয়ে সচিবালয় ঘেরাও, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের নামে তৈরি পোশাক শিল্প ধ্বংস করা এবং পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছেন যে শেখ হাসিনা; প্রশাসনে সেই হাসিনার অনুগত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে বিদায় করার কোনো কার্যকর রোডম্যাপ করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি শেখ হাসিনার ‘একমাস ক্ষমতায় থাকতে পারবে না’ হুংকারে আশায় বুক বেঁধে লিখেছেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ! কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।’ প্রশাসনে কর্মরত তাপসী উর্মির এই ‘চেতনা’ বর্তমান প্রশাসনে কর্মরত হাজার হাজার আমলা ধারণ করেন। তারা নীরবে রয়েছেন। সুযোগ পেলেই দাঁড়িয়ে যাবেন।