Bangladesh

সিন্ডিকেটে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলেও বাংলাদেশের মানুষ এই ফাঁদ থেকে বের হতে পারছে না। গত বছর এ সময় যেসব খাদ্যপণ্য ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেগুলো কিনতে হচ্ছে গড়ে ১১২ টাকায়। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সিন্ডিকেটের কারণে দেশে পণ্যমূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। নুন, ডাল, আলুসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্য সিন্ডিকেটের কবলে। বাদ যায়নি দেশের উৎপাদিত সবজি, মাছও। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অনেক পণ্যের দাম এক বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। নিত্যপণ্যের এমন দামে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন এক যুগে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে নিম্ন আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্ত খাবারের তালিকা ছোট করে এনেছে।

শুরুতে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের করপোরেট সিন্ডিকেট থাকলেও এখন আলু ও পেঁয়াজের মতো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অনেক পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণেও সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সরকারের কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। সরকারি সিদ্ধান্তকে অনেকটা দাপট দেখিয়েই উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে সিন্ডিকেট। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকারের মন্ত্রীরাও এখন হতাশ।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বেশি থাকার দোহাই দিয়ে আটা, ভোজ্য তেল, চিনির দাম বাড়িয়ে দেন কিছু করপোরেট ব্যবসায়ী। সরকারও তাদের মুনাফা নিশ্চিত করতে দাম বেঁধে দেয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ানো হলেও কমার ক্ষেত্রে তাতে খুব ধীরগতি দেখা যায়। নিত্যপণ্যে করপোরেটদের এমন সিন্ডিকেটে উৎসাহিত হয়ে হিমাগার মালিকরাও আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছেন। এতে করে আলু প্রতি কেজি ৫৫ টাকাও বিক্রি হয়েছে। সরকার ৩৬ টাকা দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। দেশের ডিম ও পোলট্রি মুরগির বাজারও এখন কয়েকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় বাজার তদারকি সংস্থাগুলো অনেক সময় ব্যবস্থা নিতে পিছিয়ে যাচ্ছে। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের অন্য সংস্থাগুলো শুধু লোকদেখানো কাজ করছে বলেই ব্যবসায়ীদের কাছে ভোক্তারা অসহায়।

সিন্ডিকেটের কারণে গরিবের মাছ বলে খ্যাত তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশও এখন নিম্নবিত্তের বাইরে চলে গেছে। এসব মাছের কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ ৭০-৭৫ হলেও সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে তা এখন কিনতে হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকায়।

সর্বশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছে। দাম বেঁধে দেওয়ার এক মাসেও নির্ধারিত মূল্যে কোথাও মিলছে না এসব পণ্য। উল্টো বাজারে পণ্যগুলোর কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৫-১৬ টাকা বেশিতে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যবিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির হার ১০০ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য সবজি ও মাছের গড় মূল্যবৃদ্ধির হার ১০৮ থেকে ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বেড়েছে আলুর দাম। গত বছর প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৫ টাকায়। বছর ঘুরতেই দেশি পেঁয়াজে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি। দেশের বার্ষিক চাহিদার পুরোটা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকে আলু। এই পণ্যটিরও দাম এক বছরে প্রতি কেজি ২৬ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। সরকার ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তা কোথাও পাওয়া যায় না।

দেশে বর্তমানে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৭৫-৮০ লাখ টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৬ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ কোটি ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ এবং ২০২০-২১ ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৪২ টন আলু উৎপাদন হয়। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছর আলুর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টন।

সবজির বাজারেও এখন সিন্ডিকেটের থাবা পড়েছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টির দোহাই দিয়ে সব ধরনের সবজির দাম প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সবজির মধ্যে অস্বাভাবিক দামে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ৭০-৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।

অন্যদিকে আলুর মতো সংকট দেখিয়ে পেঁয়াজের বাজারও অস্থিতিশীল করে তুলেছেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। কিন্তু প্রতি বছর চাহিদা থেকে অন্তত সাড়ে ছয় লাখ বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য বলছে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৮ লাখ টন। যদিও গত অর্থবছরে দেশে কৃষিপণ্যটি উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার টন।

সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপণ্যের বাজার উত্তাল হওয়াকে কেন্দ্র করে সরকারের বাজার তদারকি সংস্থাগুলোকে তৎপর হতে দেখা গেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশন যৌথভাবে আলু-পেঁয়াজ ও ডিমকাণ্ডে বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়েছে। এতে করে অনেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানাও করেছে। তারপরও দাম কমেনি।

মূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসার জন্য আইনের সদ্ব্যবহার না হওয়াকে দায়ী করছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে তা ভেঙে দেওয়া সরকারের জন্য তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। এর জন্য সরকারের আন্তরিক দরকার। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের অন্য উইংগুলো শুধু লোকদেখানো কাজ করছে। কারসাজির দায়ে দণ্ডিত হওয়া ব্যবসায়ীরা আইনের আওতায় আসে না দাবি করে তিনি আরও বলেন, অপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d