হার মানছে সুপার কম্পিউটার!
উদ্ভাবনী গুগল কোয়ান্টাম এআই ল্যাবের নেতৃত্বে হার্টমুট নেভেন। উদ্দেশ্য উইলো নির্মাণ। বাস্তবে বেশ কিছু জটিল অ্যাপ্লিকেশনের প্রয়োজনে কাজ করবে চিপটি। রহস্য অনেক। সদুত্তর নেই। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
কম্পিউটার চিপ নির্মাণে ‘নেক্সট জেনারেশন’ তকমা লাগিয়েছে গুগল, নাম উইলো। ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারায় গুগলের কোয়ান্টাম ল্যাবে গোপনে প্রস্তুত হয়েছে এ চিপ। বিশেষ ঘরানার জটিল সব অঙ্ক নিমেষে সমাধানে পারদর্শী উইলো।
গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুগলের এমন সাফল্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছে। কারণ এমন উদ্ভাবনে এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে যাবে প্রযুক্তির অকল্পনীয় ভবিষ্যৎ। চিপ ব্যবহার করে অভূতপূর্ব সুপার কম্পিউটার তৈরি করা যাবে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে ওই কম্পিউটার নির্মাণে বেশ কিছুটা সময় প্রয়োজন।
মাল্টিভার্সে প্রবেশ…
সময়ের আলোচিত সুপার কম্পিউটারের আওতায় থাকবে ১০ সেপ্টিলিয়ন বছরের কাজ। অভূতপূর্ব সাফল্য কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ভবিষ্যৎকে ছুড়েছে নতুন চ্যালেঞ্জ। উদ্ভাবক গুগলের এমন অর্জন পদার্থবিজ্ঞানের পরিচিত টাইমস্কেলকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার জন্ম দিয়েছে। একে মহাবিশ্বের বয়স ছাড়িয়ে যাওয়ার চিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং অনেক সমান্তরাল মহাবিশ্বে কাজ করতে পারে, যা ইঙ্গিত করে আমরা বিশেষ মাল্টিভার্সে জীবনযাপন করছি। প্রশ্ন উঠছে, উইলো কি তবে মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনের পথে এগোচ্ছে। সদুত্তর অজানা এখনও। তবে এমন চিপের উদ্ভাবন অদৃশ্য সেই পথেরই দিকনির্দেশক।
উইলো কেন কোয়ান্টাম!
কথা হচ্ছে বিশেষ কোয়ান্টাম কম্পিউটিং চিপ নিয়ে, যার ভিত্তি পদার্থবিজ্ঞান ও কণা পদার্থবিজ্ঞানের নীতি। সুবৃহৎ আকারের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দশকের বেশি সময় কেটেছে উন্নয়নের গোপন গবেষণাগারে।
গুগল কোয়ান্টাম মেকানিকসকে ‘প্রকৃতির অপারেটিং সিস্টেম’ হিসেবে উল্লেখ করে, যার লক্ষ্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে ত্বরান্বিত করা ও মানবতার সবচেয়ে কঠিন সব চ্যালেঞ্জের সমাধান করা। প্রযুক্তিবিদ ইলন মাস্ক যার সাফল্যে প্রশংসা করেছেন।
কিউবিট আদৌ কী
সাবেক কম্পিউটিং পদ্ধতিতে মৌলিক ইউনিটটি (শূন্য বা এক) দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করত, যার ভিত্তি ট্রানজিস্টর চালু বা বন্ধ হওয়ার ওপর নির্ভরশীল, যা কিউবিট বা কোয়ান্টাম বিট– দু’ভাবেই কাজ করতে সক্ষম।
গবেষকরা বলছেন, কিউবিটের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সমস্যা দৃশ্যমান হয়। কারণ সব কিউবিট পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত তথ্যবিনিময়ে পারদর্শী হয় না, যা গণনায় প্রয়োজনীয় তথ্য সুরক্ষায় অসুবিধা হয়। অন্যদিকে গুগল বলছে, যত বেশি কিউবিট ব্যবহার করবেন, অর্থাৎ একটি কম্পিউটার বা চিপসেট যত বেশি শক্তিশালী হবে, তত বেশি ত্রুটি দৃশ্যমান হয়।
জানা গেছে, গুগল বহু গুণ কিউবিট ব্যবহার করতে ও বহুমাত্রিক ত্রুটি সমাধানে সফল হয়েছে। যার ফলে সিস্টেমটি বহু গুণ কোয়ান্টাম তৈরি করে। বিশেষ এমন অবস্থাকে ‘থ্রেশহোল্ডের নিচে’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সব কিউবিট স্কেলিং করার সময় দ্রুত ত্রুটি কমিয়ে আনে। উইলো তৈরির নেপথ্যে বৃহৎ কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির প্রথম ধাপ।
ভবিষ্যতে উইলো
বর্তমানে উইলো থ্রেশহোল্ডের নিচে বসানো প্রথম বিশেষায়িত সিস্টেম। এটি এমন পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতে সুবৃহৎ আকারের কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণের নির্দেশক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গুগলের বৃহৎ নির্মাতা ব্যবহারিক ও বাণিজ্যিকভাবে প্রাসঙ্গিক অ্যালগরিদম বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেবে, যা প্রচলিত কম্পিউটারে চালানো সম্ভব হবে না।
জানা গেছে, উইলো সিস্টেমে এখন ১০৫টি কিউবিট আছে। বাস্তব-বিশ্বের বাস্তবায়নে এটি হয়তো যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাস্তব-বিশ্বের প্রভাব রয়েছে এমন গণনা সম্পাদনে কয়েক মিলিয়ন বা বিলিয়ন কিউবিটের চাহিদা তৈরি হতে পারে। সুতরাং উইলো সিস্টেমের প্রকৃত সুফল অর্জনে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষায় থাকতেই হবে।