International

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তার সফরসঙ্গীদের জানাজায় পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে লাখো শোকার্ত ইরানির ভিড়

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তার সফরসঙ্গীদের জানাজায় ইমামতি করেছেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। মঙ্গলবার তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ জানাজায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন। খবর রেডিও তেহরান, আলজাজিরার।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নেতা খামেনির ইমামতিতে জানাজাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াসহ উচ্চপর্যায়ের বিদেশি প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। 
এ জানাজায় অংশ নিয়েছেন ইরানের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবেরও। তিনি জানাজার সময়ই সব নিয়ম ভুলে প্রয়াত প্রেসিডেন্টের স্মরণে কেঁদেছেন। জানাজা শেষে রাইসিসহ অন্যদের কফিন তেহরান সিটি সেন্টারের বিপ্লবী চত্বর হয়ে স্বাধীনতা চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। 

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে ছিল লাখো ইরানির ভিড়। সেখানে যাওয়ার পরে শহিদদের প্রতি লাখো জনতা শ্রদ্ধা জানান। ইরানে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সবার ক্ষেত্রে শেষযাত্রার আয়োজন করা হলেও কিছু ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে তা জনসমাবেশে রূপ নেয়। এসব অনুষ্ঠানে শোকের মাধ্যমে মাতম করা হয়। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত মরদেহ গাড়িতে রাখা হয়। গাড়ি সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। মানুষ সেই গাড়ির চারপাশে ভিড় জমান, দোয়া পড়েন। এভাবে প্রিয় ব্যক্তিত্বকে তারা বিদায় জানান এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় রাইসির স্মরণে এক বিশেষ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এতে তুরস্ক, ইরাক, ভারত, রাশিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন, আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। 

তেহরানে শেষযাত্রা অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ সবার মরদেহ তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাড়িতে করে আজাদি স্কয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাস্তায় লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে। শোকার্ত জনতা রাইসির ছবিসহ নানা বক্তব্য লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্য ছিলেন উদগ্রীব। এর আগে তাবরিজ ও কোম শহরেও জানাজা ও শেষযাত্রায় মানুষের ঢল নামে। প্রেসিডেন্ট ও সফরসঙ্গীদের শেষযাত্রার কারণে মঙ্গলবার তেহরানে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সারা দেশে ৫ দিনের শোকও চলছে। 

ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে রাইসির মৃত্যুর শোকে দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ রাখার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ইসলামিক নির্দেশনা মন্ত্রণালয় সারা দেশে কনসার্টসহ সব ধরনের আনন্দ অনুষ্ঠান ৭ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ প্রেক্ষিতে এ সপ্তাহে ইরানের সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হয়েছে। জাদুঘরসহ বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। সব ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা স্থগিত রাখা হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানের বিভিন্ন হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সব বিয়ের অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। 

তেহরান থেকে মঙ্গলবার মরদেহগুলো আরেক শহর বিরজান্দে নেওয়া হবে। বিরজান্দ থেকে মরদেহগুলো মাশহাদে নেওয়ার পর সেখানেও জনগণ তাদের শ্রদ্ধা জানাবেন। সেখানে মানুষের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ মাশহাদ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট রাইসির নিজের শহর। সেখানেই তিনি জন্মেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন। শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠান শেষে বৃহস্পতিবার মাশহাদে ইমাম রেজার (আ.) মাজার কমপ্লেক্সে প্রেসিডেন্টের লাশ দাফন করা হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button