Trending

২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭.১১ শতাংশ

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ২.২৯৮ বিলিয়ন ডলার– যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬.৯৮৯ বিলিয়ন ডলার। 

ডিসেম্বর মাসে  বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়নের ব্যাংকের (এডিবি) কাছ ১.১ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়ার পরও চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (প্রথম ৬ মাসে, জুলাই-ডিসেম্বর) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাংলাদেশের ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭.১১ শতাংশ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ২.২৯৮ বিলিয়ন ডলার– যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬.৯৮৯ বিলিয়ন ডলার। 

কর্মকর্তারা আরও জানান, অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পগুলো নিয়ে সতর্কভাবে এগোচ্ছে। পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলো নতুন করে পর্যালোচনা করছে। একইসঙ্গে প্রকল্পের গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে ঋণ প্রক্রিয়াকরণের কাজও করছে। এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নতুন প্রকল্পে  চুক্তি হচ্ছে ধীর গতিতে। 

প্রকল্প ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে এগোলেও অর্থনৈতিক সংকট ও রিজার্ভ সহায়তায় বিগত অর্থবছরের মতো সরকার বাজেট সহায়তায় জোর দিচ্ছে। ইতোমধ্যে গত ডিসম্বেরে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং এডিবির সঙ্গে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণচুক্তি সই করেছে সরকার। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, “জুলাই-আগস্টের পট পরিবর্তন বৈদেশিক প্রতিশ্রুতি কমানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। এখন নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্ট সতর্ক। আগে প্রকল্প নির্ভর দুর্নীতি ঘটতে দেখা গেছে এবং বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে এটি হয়েছে।” 

“প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, অতীতের নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। সমানের বছরগুলোতে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্প বাংলাদেশের প্রয়োজন আছে। বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে দুর্নীতি লুটপাট যদি না হয় এবং যথাযথ ব্যবহার করা যায়, তাহলে বৈদেশিক ঋণ আমাদের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। ফলে বৈদেশিক ঋণ যদি কম আসে, তাহলে উদ্বেগের জায়গা তো থাকবেই।” 

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঘোষণায় ইউএসএইডির সহযোগীতা বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এটা আমাদের জন্য নতুন উদ্বেগের বিষয়। কৃষি, স্বাস্থ্য, জ্বালানি খাতে  ইউএসএআইডির বেশ কিছু প্রকল্প বাংলাদেশে রয়েছে। আমেরিকার নতুন প্রশাসন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেও যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট প্রভাব আছে। বিশ্বব্যাংকের অনেক অপারেশনে যুক্তরাষ্ট্রের বড় অবদান আছে। ভবিষ্যতে এসব সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন দ্বারা প্রভাবিত হবে কি না সে বিষয়ে উদ্বেগ থাকবে।” 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “বিশ্বব্যাংক প্রতি তিন বছর পর পর  নমনীয় ঋণ বিতরণের জন্য একটা তহবিল করে। যেমন–  আগামী জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া  আইডিএ-২১ এর জন্য বিশ্বব্যাংক ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিলের ঘোষণা দিয়েছে।” 

“এই তহবিলে যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় অংশ কন্ট্রিবিউট করে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী তিন মাস এ ধরনের ডোনেশন দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে। আবার পরে যে এটা দেবে না, তাও শোনা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারে, কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সহায়তা বন্ধ করবে বলে মনে হয় না,” যোগ করেন তিনি।

এদিকে ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তাসহ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বিশ্বব্যাংকের কাছে থেকে। এই সংস্থাটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৯১৪.৫ মিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি এসেছে এডিবির কাছ থেকে। এছাড়া জাপান ২৫২.১২ মিলিয়ন ডলার এবং এআইআইবি ১৬০ মিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

অর্থবছরে কমেছে ১৩ শতাংশ 

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছে ৩.৫৩২ বিলিয়ন ডলার– যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪.০৬ বিলিয়ন ডলার।

যদিও বাজেট সহায়তা ঋণচুক্তি হওযার সঙ্গে সঙ্গে অর্থছাড় হয়ে যায়, এরপরও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে অর্থছাড় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম হয়েছে। 

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এডিবি। এই সংস্থাটি ছাড় করেছে ১.০৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর বিশ্বব্যাংক ৮০০.৯৩ বিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ৫৩১.৬৬ বিলিয়ন ডলার, জাপান ৪৪১.০৮ বিলিয়ন ডলার, চীন ২৬৭.৮১ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে। 

বাড়ছে ঋণ পরিশোধের চাপ

এদিকে, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও আগের নেওয়া ঋণের কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বাংলাদেশ বিভিন্ন ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ২৬.৪ শতাংশ বেড়েছে।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বাংলাদেশ পরিশোধ করেছে ১.৯৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশ পরিশোধ করেছিল ১.৫৬৭ বিলিয়ন ডলার। 

এরমধ্যে আসল পরিশোধ করেছে ১.২৩ বিলিয়ন ডলার; গত অর্থববছরের এই সময়ে বাংলাদেশ আসল পরিশোধের করছিল ৯২৬.২ মিলিয়ন ডলার। 

ঋণ পরিশোধ  বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, বিগত সরকারের সময়ে নেওয়া অনেক বড় প্রকল্প ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় আসল পরিশোধ শুরু হয়েছে। আবার বাজারভিত্তিক ঋণের সুদ হারের কারণে সুদ পরিশোধও বেড়েছে।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “আগমী  তিন বছরে কেবল আসল হিসাবে অতিরিক্ত ২.৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ২১৫টি প্রকল্পের তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব করা হয়েছে।” 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button