Bangladesh

২০ শতাংশের কম জনসমর্থন নিয়ে সংসদে যাচ্ছেন ৭২ জন

সংসদীয় আসনের মোট ভোটারের ২০ শতাংশের কম সমর্থন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৭২ জন। এর মধ্যে মোট ভোটের ১০ শতাংশের কম পেয়েছেন দুজন। অবশ্য প্রদত্ত ভোটের হিসাব ধরলে তাঁদের ভোট আরও বেশি।

এবারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। যদিও ভোটের এই হার নিয়েও সন্দেহ ও প্রশ্ন আছে। নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, এভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে আইনে কোনো বাধা নেই। দেশের আইন অনুযায়ী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াও বৈধ। কিন্তু এত কম জনসমর্থন নিয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র বা জনমতের সম্মতির শাসন কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকে।

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত আগের নির্বাচনগুলোর মতো গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ মিত্র দলের ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিলেও নির্বাচনটি নিয়ে প্রশ্ন আছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৩০ আসনে জয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। সেবার দলটির বিজয়ী প্রার্থীদের কেউ নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ৩২ শতাংশের নিচে ভোট পাননি। দলটি ২৩০ জনের মধ্যে ২১৭ জন নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটের ৪০ থেকে ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পেয়েছিলেন।

নবম সংসদের পরের দুটি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক আছে। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ মিত্র দলের ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিলেও নির্বাচনটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। সব নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু ওই নির্বাচনের পর ইসি কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

গণতন্ত্র হচ্ছে জনমতের সম্মতির শাসন। এভাবে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে মূলত ভোটের প্রতি একধরনের অনাগ্রহ তৈরি হতে থাকে। বিভিন্ন নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও জবরদখলের ঘটনায় নির্বাচনব্যবস্থা ও ইসির প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে। ফল নির্ধারণে ভোটারদের গুরুত্ব নেই, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় আওয়ামী লীগ যাঁদের মনোনয়ন দেবে, তাঁরাই জয়ী হবেন, দলীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতাসীনেরাই আবার ক্ষমতায় আসবেন, এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ভোটের প্রতি অনেকের আগ্রহ কমেছে।

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনেও ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। নির্বাচনে বিজয়ীরা ইতিমধ্যে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ইসি ঘোষিত ২৯৮টি আসনের ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০ শতাংশের কম জনসমর্থন পাওয়া ৭২ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩৭ জন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে জয় লাভ করেছেন। বাকিদের মধ্যে ২৮ জন স্বতন্ত্র, জাতীয় পার্টির ৬ জন ও কল্যাণ পার্টির একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন।

মোট ভোটের ১০ শতাংশের কম পেয়েছেন দুজন

চাঁদপুর-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১২৯। আওয়ামী লীগের মুহম্মদ শফিকুর রহমান ৩৬ হাজার ৪৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সে হিসেবে তিনি নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশের সমর্থন পেয়েছেন। এই আসনে ভোট দিয়েছিলেন ৯৫ হাজার ৮৪০ জন। প্রদত্ত ভোটের হিসাবে তিনি ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

২৯৮টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে কম জনসমর্থন নিয়ে সংসদে যাচ্ছেন ঢাকা-৪ আসনে নির্বাচিত (স্বতন্ত্র) আওলাদ হোসেন। এই আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৭৭। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন ট্রাক প্রতীকে ২৪ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন; যা মোট ভোটারের মাত্র ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অবশ্য প্রদত্ত ভোটের হিসাব ধরলে তিনি প্রায় ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এই আসনে ভোট দিয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৯৭০ জন।

চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল লতিফ মোট ভোটের ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন মোট ভোটের ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ।

২৫ জন পেয়েছেন মোট ভোটের ১৫ শতাংশের কম ভোট

শফিকুর রহমান ও আওলাদ হোসেন বাদে নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ১৫ শতাংশের কম সমর্থন পেয়েছেন আরও ২৫ প্রার্থী। এর মধ্যে ঢাকা-৫ আসনে মোট ভোটারের ১০ দশমিক ৩২ শতাংশের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান। তিনি ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল লতিফ মোট ভোটের ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন মোট ভোটের ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ।

ঢাকা-১৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম মোট ভোটের ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ, বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার সাড়ে ১১ শতাংশ, সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুছামুদ্দীন চৌধুরী ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মামুনুর রশীদ ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে জনমতের সম্মতির শাসন। এভাবে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তিনি বলেন, সব সময় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনেরাই আবার ক্ষমতায় এসেছে। এবার বিএনপিও নির্বাচন বর্জন করেছে। এসব কারণে ভোটে মানুষের হয়তো আগ্রহ কম ছিল। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ভোটের হার যদি সঠিকও ধরা হয়, সরকারের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কেন এমন হলো—এটির উত্তর খোঁজা আওয়ামী লীগের নিজের স্বার্থেই জরুরি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor