Hot

কিংস পার্টি: অস্বাভাবিক উত্থান, স্বাভাবিক পতন

কিংস পার্টি। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনের আগে হঠাৎ জন্ম হয়। ঝড়ের গতিতে আলোচনায়  আসে সর্বত্র। নেতাদের বাগাড়াম্বর দেশের দৃষ্টি কাড়ে। বছরের পর বছর দল তৈরি করে রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় থাকা অনেক দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না পেলেও এসব কিংস পার্টি নিবন্ধন পেয়ে যায় খুব সহজেই। এসব দলের নেতাদের কথা শুনে মনে হয় নির্বাচনে তারা সংসদ দখল করে নেবে। কিন্তু যত গর্জে তত বর্ষে না- এর মতোই সময়ে অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়। অস্বাভাবিক উত্থান হলেও পতন হয় স্বাভাবিক গতিতে। কারণ এদের নেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ। নেই কোনো শক্তিশালী সংগঠন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও এমন ক’টি কিংস পার্টির উত্থান দেখেছে জাতি। আবার নির্বাচনের পর তাদের হারিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। বর্তমান সময়ে একেবারে পর্দার আড়ালে এসব পার্টি। এরমধ্যে রয়েছে তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার পর পরই এই তিনটি দল নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। আইন অনুযায়ী তাদের নিবন্ধন পাওয়ার অনেক শর্তই অনুপস্থিত। তারপরও কাদের অনুকম্পায় এসব দল নিবন্ধন পেয়েছে তা সবারই জানা। এই অনুকম্পার কারণেই তারা ‘কিংস পার্টি’- হিসেবে পরিচিতি পায়। নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করে। কিন্তু বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও পদত্যাগ করা নেতারা তৃণমূল বিএনপি’র হাল ধরেন। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকারী দলের সঙ্গে দর কষাকষি করেন নেতারা। দেখা যায় সরকারও তাদের সমীহ করে। এই সমীহের কারণে তারা নিজেদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ দলের কাণ্ডারী হিসেবে ভাবতে থাকেন। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে বিএনএম নিয়েও আলোচনা ছিল সর্বত্র। ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে খ্যাত এসব দল নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে এই তিনটি দলই সুবিধা করতে পারেনি।

সংসদে জাতীয় পার্টিকে টপকে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার স্বপ্নও দেখেছিলেন কিংস পার্টির কেউ কেউ। তবে দু’টি আসন বাদে বাকি সব আসনে জামানত হারান কিংস পার্টির প্রার্থীরা। সরজমিন এসব পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে কোনো নেতাকে পাওয়া যায়নি। সুনসান নীরবতা কার্যালয়গুলোতে। এসব পার্টির নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থীরা এখন বলছেন, স্থানীয়ভাবে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। জামানত হারিয়ে তারা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। নির্বাচনী বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পার্টিগুলোর অস্বাভাবিক উত্থানের পরে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। যুগে যুগে কিংস পার্টিগুলোর দশা এমনই হয়। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১৫৩২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ও বিএসপি’র প্রার্থী ছিল ২৭০ জন। শুধু বিএনএম’র দু’জন প্রার্থী ছাড়া বাকি ২৬৮ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীদের ২০ হাজার টাকা নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়। অর্থ ফেরত পেতে প্রার্থীদের নিজ আসনে ভোটারদের দেয়া ভোটের অন্তত ৮ ভাগের ১ ভাগ অথবা সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট পেতে হবে। ভোটের ফলাফলে  দেখা গেছে, তিন দলের মাত্র সাতজন প্রার্থী নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দু’জন ছাড়া বাকি পাঁচজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। বাকি আসনগুলোয় নামমাত্র ভোট পেয়েছেন প্রার্থীরা। কোনো কোনো আসনে দেখা গেছে, ২৫০ থেকে ৪০০ ভোট পেয়েছেন। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে শূন্য, কোনোটিতে একটি ভোট পাওয়ার চিত্রও দেখা গেছে।

রাজনীতিতে হতাশার কোনো মূল্য নেই: তৈমূর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলোচনায় থাকা তৃণমূল বিএনপি কোনো আসনেই জয়ী হতে পারেনি। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রার্থীও দিয়েছিল এই দলটি। তবে তাদের ১৩৫ প্রার্থীর কেউই নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। দলটির শীর্ষ নেতারাসহ সব প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। গত বুধবার বিকাল ৪টায় পল্টনের মেহেরবা প্লাজার ১৬ তলায় অবস্থিত তৃণমূল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় কোনো নেতা নেই। অফিস সহকারী জানান- বিকাল থেকে নেতাকর্মীরা আসেন। কথা হয় নওগাঁ-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট পিকে আবদুর রউফ-এর সঙ্গে। তিনি জানান, নির্বাচনে ভরাডুবির পরে দলকে কীভাবে সুসংগঠিত করতে হবে তা নিয়ে কাউকেই ডাকা হয়নি। কেন্দ্র থেকে কোনো সভার আয়োজন করা হয়নি। তিনি বলেন, তৃণমূল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা অভিজ্ঞ রাজনৈতিকদের মূল্যায়ন করে না। এ সময় আরও দু’জন জেলা পর্যায়ের নেতা এলে তারাও একই সুরে কথা বলেন। কার্যালয়ে একঘণ্টা অবস্থান করলেও কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে চোখে পড়েনি।

নেতাকর্মীদের ক্ষোভ নিয়ে তৃণমূল বিএনপি’র মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, এটা ম্যান টু ম্যান ডিফার করতেই পারে। রাজনীতিতে হতাশার কোনো মূল্য নেই। উনাদের যেমন নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে তেমনভাবে আমাদেরও হয়েছে। সবকিছু তো একটা সময়ের ব্যাপার। এমন তো না যে আমরা সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে নির্বাচন করেছি। হতাশা নিয়ে রাজনীতি করার দরকার নাই। নির্বাচনী ভরাডুবির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা মাত্র দুই মাসের একটি দল। সরকারের সঙ্গে আমরা কোনো লিয়াজোঁ করিনি।

সরকার এই দয়া না দেখালেও পারতো: বিএনএম মহাসচিব
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং বিএনপির সাবেক নেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর নির্বাচনে অংশ নেন ফরিদপুর-১ আসন থেকে। ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পেলেও জামানত হারান তিনি। চাঁদপুর-৪ আসনে থেকে ১ হাজার ৭৭টি ভোট পেয়ে জামানত হারান দলটির মহাসচিব মো. শাহজাহান। সরজমিন গুলশান-২ এর প্লাডিয়াম মার্কেটের ৩য় তলায় অবস্থিত বিএনএম’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান অফিস। ভেতরে প্রবেশ করতে দপ্তর সম্পাদকের কক্ষে মিলে অফিস সহকারীকে। তিনি জানান, বিকাল ৪টা/৫টা’র দিকে নেতাকর্মীরা আসেন। অনেকে মিটিং থাকলে আসেন। পার্টির অফিসে তিনটি কক্ষ। মুখ্য সমন্বয়ক, মহাসচিব ও কনফারেন্স রুম। সবগুলো কক্ষই ফাঁকা।

নির্বাচনের পরে পার্টি অফিসে নেতাকর্মীদের দেখা যায় না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনএম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীরা যেভাবে তাদের আসনগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় বঞ্চিত হয়েছেন এমন মানসিক অবস্থায় পার্টি অফিসে গিয়ে বসে থাকবে এটি আশা করা যথাযথ নয়। আমাদের রুটিন ওয়ার্ক বন্ধ আছে তাও নয়। নির্বাচনের আগের সময়ের সঙ্গে পরের সময় এক করে দেখার কোনো কারণ নাই। পার্টির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারা দেশে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শক্তিশালী করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি। ওরা বিভিন্ন জায়গায় কমিটি গঠনে কাজ করছে। চেষ্টা করছি আগামীতে মাঠে থাকার।

নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ নিয়ে তিনি বলেন, কারও ফেভার ছাড়াও তো আমরা অন্তত ৮-১০টা আসন পেতেই পারতাম। আমরা সরকারের সঙ্গে কোনো লিয়াজোঁ করিনি। তবে আমাদের একটা প্রত্যাশা ছিল- সরকার যদি ফেয়ার ইলেকশন দেয়, তাহলে ৩৭টি আসন জিতবো। 

নির্বাচন কমিশনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা যেভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে সেটা একমাত্র পরোয়ারদিগার ছাড়া কেউ রক্ষা করতে পারবে কিনা আমার জানা নাই। তিনি আরও বলেন, বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৭ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের তো কোনো কোনো আসনে ৩/৪ জন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীও ছিল। তাদের মূল প্রার্থী ও স্বতন্ত্র ভাগাভাগি করে আমার ঘরে ভোট বেশি আসার কথা। আমি তো দুর্বল, ভোট কাটতে পারি না। সরকারকে বিশ্বাস করাটা ভুল ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করেছিলাম- সারা বিশ্বকে অন্তত বুঝানোর জন্য হলেও সরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে। এই বিশ্বাসটা আমাদের ভুল ছিল।

সরকারকে বিশ্বাস করে ভুল করেছি: বিএসপি মহাসচিব
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) থেকে কেউ নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি। তাদের সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। চট্টগ্রাম-২ আসনে (ফটিকছড়ি)  হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী। নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের একটি অংশের সমর্থনও পেয়েছিলেন তিনি। তবুও পরাজিত হন তিনি। 

মিরপুর-১ এর শাহ্ আলীবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি ব্যানার ঝুলছে। একটি মিরপুর মেট্রো মডেল থানা, ঢাকা জেলা ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নামে। প্রতিটি ব্যানারেই পার্টির নাম ও ঠিকানা রয়েছে। অফিসের গেইট বন্ধ। নেতাকর্মীদের তেমন আনাগোনা নেই। দরজায় আঘাত করলে সিকিউরিটি গার্ড এসে গেইট  খোলেন। প্রতিবেদকের পরিচয় দিলে বলেন, সামনে উরস। এজন্য সবাই ফটিকছড়ি আছেন। অফিসে দলীয় কোনো নেতাকর্মী আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ভেতরে এসে মসজিদের ইমামের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ইমাম সাইফুল ইসলামও উরসের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা আছি। অফিস খোলা থাকলে পার্টির নেতাকর্মীরা আসেন। সিকিউরিটি গার্ড মন্টু হাওলাদার জানান, ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে মুরিদরা জড়ো হন। অফিসের আশপাশে অবস্থিত দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক ও ধর্মীয়- দুই ধরনের মানুষের আনাগোনা হয় বিএসপি’র এই কার্যালয়ে। 

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)-এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আব্দুল আজিজ সরকার বলেন, আমাদের লোকজন তো কেউ নাই। সবাই চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও ফটিকছড়িতে সভায় গেছেন। নির্বাচনী ভরাডুবির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা দেশ চালায় তারা আমাদেরকে কথা দিয়ে যেভাবে নির্বাচনে নিয়েছে, পরে কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল পাইনি। আমরা তাদের বিশ্বাস করে ভুল করেছি। এমনটা হবে আমরা তা বুঝিনি। 

কিংস পার্টির অস্বাভাবিক উত্থান ও পতন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাদের অবস্থা এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। তারা যে কাজটা করেছে এটা তো সম্মানিত কাজ নয়। এই দলগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে যেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি থেকে নেতাকর্মীদের এনে দলগুলোতে যোগদান করিয়ে কীভাবে একটা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা যায়। তাদের উদ্দেশ্যই তো সৎ ছিল না। এখন তারা সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তারা স্বার্থের জন্য এসেছিল। এখন স্বার্থসিদ্ধ হয়নি বলে তাদের এখানে থাকার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। একদল সুবিধাবাদী লোক এই দলগুলো সৃষ্টি করেছে। তারা উপহাসের পাত্র হওয়াই স্বাভাবিক।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, এদের পরিণতিই তো এমনটা হওয়ার ছিল। কোনোদিনই তাদের কোনো খবর ছিল না। নির্বাচন উপলক্ষে তাদের আবির্ভাব হয়েছিল। এককথায় তাদের অস্বাভাবিক উত্থানের পরে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot