Science & Tech

ইন্টারনেট থেকে ২ মিলিয়নের বেশি গবেষণাপত্র গায়েব!

এই গবেষণায় ব্যবহৃত নিবন্ধগুলোর ২৮ শতাংশ অর্থাৎ, দুই মিলিয়নেরও বেশি গবেষণাপত্রের সক্রিয় ডিওআই থাকা সত্ত্বেও, এগুলো কোনো ডিজিটাল সংরক্ষণাগারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, বলা যায় সেগুলো গায়েব হয়ে গেছে। ডিওআই লেবেলযুক্ত মাত্র ৫৮% নিবন্ধ মাত্র একটি সংরক্ষণাগারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে, বাকি ১৪% নিবন্ধ এই গবেষণা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

৭০ লাখেরও বেশি ডিজিটাল প্রকাশনা নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেটে থাকা এক-চতুর্থাংশেরও বেশি জ্ঞানগর্ভ নিবন্ধ যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

গত ২৪ জানুয়ারি জার্নাল অব লাইব্রেরিয়ানশিপ অ্যান্ড স্কলারলি কমিউনিকেশনে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, অনলাইনে কাগজপত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা গবেষণার পরিমাণ বাড়ার হারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কবেকের সাহিত্য, প্রযুক্তি ও প্রকাশনা গবেষক লেখক মার্টিন ইভ বলেছেন, ‘আমাদের বিজ্ঞান ও গবেষণার পুরো সারগর্ভ সঠিক পাদটীকার ওপর নির্ভরশীল।’ 

তিনি বলেন, ‘যদি আপনি কোনো তথ্য যাচাই না করতে পারেন, তবে সে তথ্য ব্যবহার করার অর্থ হলো; আপনি অন্ধ বিশ্বাসের মতো এমন তথ্যের ওপর নির্ভর করছেন, যা আপনি নিজেও পড়েন নি।’

ইভ গবেষণা ও ডিজিটাল-অবকাঠামো উন্নয়ন সংস্থা ‘ক্রসরেফ‘-এর সঙ্গেও সম্পৃক্ত। 

তিনি সংরক্ষণাগারগুলোতে রাখা ডিজিটাল অবজেক্ট আইডেন্টিফায়ার (ডিওআই) লেবেলযুক্ত ৭৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭টি গবেষণাকাজ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করেছেন।

ডিওআই হলো সংখ্যা, অক্ষর ও প্রতীকের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ ধরনের চিহ্ন (ফিঙ্গারপ্রিন্ট), যা নির্দিষ্ট প্রকাশনা শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন: এটা কি গবেষণামূলক নিবন্ধ নাকি অফিসিয়াল প্রতিবেদন।

ক্রসরেফ হলো বৃহত্তম ডিওআই নিবন্ধন সংস্থা। এই সংস্থায় প্রকাশক, জাদুঘর এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ২০ হাজার শনাক্তকারী সদস্য রয়েছে।

গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ডিওআইগুলোর নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রতিটি সদস্য সংস্থায় নিবন্ধিত এক হাজার গবেষণাকাজ থেকে এলোপাতাড়িভাবে বাছাই করা হয়েছে।

এই গবেষণায় ব্যবহৃত নিবন্ধগুলোর ২৮ শতাংশ অর্থাৎ, দুই মিলিয়নেরও বেশি গবেষণাপত্রের সক্রিয় ডিওআই থাকা সত্ত্বেও, এগুলো কোনো ডিজিটাল সংরক্ষণাগারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, বলা যায় সেগুলো গায়েব হয়ে গেছে।

ডিওআই লেবেলযুক্ত মাত্র ৫৮% নিবন্ধ মাত্র একটি সংরক্ষণাগারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে, বাকি ১৪% নিবন্ধ এই গবেষণা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অতি সম্প্রতি প্রকাশ হওয়া, কোনো জার্নাল নিবন্ধিত না হওয়া বা শনাক্তযোগ্য উত্স না থাকায় এই নিবন্ধগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।

সংরক্ষণের চ্যালেঞ্জ

ইভ জানান, এই ধরনের গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন: এতে শুধু ডিওআই থাকা নিবন্ধগুলো ব্যবহার করা হয় এবং এতে নিবন্ধগুলোর জন্য সব ডিজিটাল সংগ্রহস্থল অনুসন্ধান করে দেখা হয়নি। উদাহরণ: ডিওআইযুক্ত নিবন্ধগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সংগ্রহস্থলগুলোতে সংরক্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা তিনি পরীক্ষা করেননি।

তবে সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের ইয়র্কে অবস্থিত ডিজিটাল প্রিজারভেশন কোয়ালিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইলিয়াম কিলব্রাইড বলেন, ‘ই-জার্নালগুলোর ডিজিটাল সংরক্ষণ চ্যালেঞ্জের প্রকৃত মাত্রা সম্পর্কে জানা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

হেলসিংকির হ্যানকেন স্কুল অব ইকোনমিক্সের জ্ঞানগর্ভ প্রকাশনা নিয়ে গবেষণারত মিকায়েল লাকসো বলেছেন, ‘অনেকের অন্ধবিশ্বাস রয়েছে যে আপনার যদি ডিওআই থাকে তবে এটি চিরকাল সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে লিঙ্কটি দিয়ে সবসময় কাজ হবে।’

২০২১ সালে লাকসো এবং তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে ১৭০ টিরও বেশি ওপেন-অ্যাক্সেস জার্নাল ইন্টারনেট থেকে গায়েব হয়ে গেছে।

নিউইয়র্ক সিটির ডিজিটাল আর্কাইভিং সার্ভিস পোর্টিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেট উইটেনবার্গ সতর্ক করে বলেছেন, বড় প্রকাশকদের তুলনায় ছোট প্রকাশকদের নিবন্ধ সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

তিনি বলেন, ‘কনটেন্ট সংরক্ষণের জন্য অর্থ ব্যয় হয়।’

তিনি আরও বলেন, আর্কাইভিংয়ের সঙ্গে অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও দক্ষতার সম্পর্ক রয়েছে, অনেক ছোট সংস্থার এসবের সক্ষমতা নেই।

ইভের গবেষণায় এমন কিছু পদক্ষেপের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা ডিজিটাল সংরক্ষণের উন্নয়ন করতে পারে। এর মধ্যে ডিওআই নিবন্ধন সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয়তা এবং প্রকাশক ও গবেষকদের মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে আরও ইতিবাচক জ্ঞান ও সচেতনতার গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য রয়েছে।

ইভ বলেন, ‘সবাই কোথাও একটি কাগজ বের করে তাৎক্ষণিক লাভের কথা চিন্তা করে, তবে আমাদের সত্যিই গবেষণাকাজ দীর্ঘদিন স্থায়ী করার ব্যাপারে চিন্তা করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘যদি তা না করা হয়, তাহলে আপনি কোন বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন, আপনার মৃত্যুর ১০০ বছর পরে মানুষ কীভাবে সেগুলোর সন্ধান পাবে?’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button