Bangladesh

ছুটির শীর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ছুটিতে ২৪৪১ শিক্ষক

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট ২ হাজার ৪৪১ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই (ঢাবি) ৩৫৫ জন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্তত ৪৯ জন শিক্ষক অনুমোদন ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন (৪৯তম) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউজিসি সূত্র বলছে- এই শিক্ষকদের সিংহভাগই ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে নগণ্য সংখ্যক দেশে রয়েছেন। উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য ছুটি নিলেও অনেকেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে দেশে ফিরছেন না। এজন্য শিক্ষক সংকটে পড়ে দেশের উচ্চশিক্ষালয়গুলো। শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে যেন উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি নেওয়া যায় সে ব্যাপারে সুযোগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত করা উচিত। কারণ, অনেকে দেশে ফেরেন না। ইউজিসির তথ্যমতে, ঢাবিতে কর্তব্যরত শিক্ষক রয়েছেন ১ হাজার ৪২৩ জন। আর শিক্ষা ছুটিতে আছেন ৩৫৫ জন শিক্ষক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩১ জন শিক্ষক ছুটিতে গেছেন। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক শিক্ষকই ছুটিতে। অর্থাৎ কর্তব্যরত ২৮৭ জন আর শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন ১২৬ জন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে আছেন ১০২ জন শিক্ষক। একইভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭২ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭ জন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৫ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮ জন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।

এ ছাড়াও শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ জন, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ জন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ জন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৩ জন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ জন, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮ জন, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ জন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮ জন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ জন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ জন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৩ জন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ জন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ জন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ জন। আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছুটিতে রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, যারা ডিগ্রির জন্য বিদেশে গিয়ে আর দেশে ফেরেন না তারা নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এটি করে থাকেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। তিনি বলেন, ভারতের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে যাওয়ার তেমন প্রয়োজন মনে করে না। কারণ সেখানে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে দুঃখজনকভাবে এই সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি।

এ শিক্ষাবিদ বলেন, দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো। পিএইচডি করতে সুপারভাইজার দরকার হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুপারভাইজার পাওয়া যায় না। আর যারা সুপারভাইজার হতে পারেন তারা সময় দিতে চান না। এ কারণেই ছুটি নিয়ে বিদেশগামিতার প্রবণতা বাড়ছে। কারা কারা শিক্ষা ছুটি পাবেন সেটি এখন পর্যালোচনা করার সময় এসেছে।

আবদুল মান্নান বলেন, ডিগ্রি গ্রহণের পর চাকরিজীবীদের ইনক্রিমেন্ট, প্রমোশন হয়। আর ডিগ্রির একাডেমিক কার্যকারিতা হয় বিভিন্ন জার্নালে লেখা প্রকাশের মাধ্যমে। কিন্তু ডিগ্রি গ্রহণের পর খুব নগণ্য ডিগ্রিধারী এটি করে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিগ্রি দিয়ে প্রমোশন আর ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পরই এর কার্যকারিতার সমাপ্তি ঘটে।

ইউজিসি সূত্র বলছে- অনুমোদন ছাড়া কর্মস্থলের বাইরে আছেন সর্বোচ্চ মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষক অনুমোদন ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আছেন।

ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, যেসব শিক্ষক ছুটি নিয়ে বৈধভাবে ছুটিতে আছেন তাদের দোষারোপের সুযোগ নেই। দেশের শিক্ষার স্বার্থে শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তবে সীমিত আকারে এই সুযোগ দেওয়া উচিত। শিক্ষকরা ছুটি নিয়ে বাইরে থেকে গেলে তার সেবা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বঞ্চিত হয়। তাই এ ব্যাপারে কড়াকড়ি থাকা উচিত। গণহারে এই সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। এ শিক্ষাবিদ আরও বলেন, আগ্রহীরা দেশে যেন উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি নিতে পারেন সে ব্যাপারে সুযোগ বাড়াতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d online