মালদ্বীপের মতো ভারত-বিরোধী প্রচার বাংলাদেশেও, নেপথ্যে কি অন্য রাষ্ট্রের ইন্ধন, কী ভাবছে নয়াদিল্লি?
মালদ্বীপে যখন ‘ভারতকে তাড়াও’ প্রচার তুঙ্গে, একই সময় বাংলাদেশের একটি অংশও ভারত বিরোধিতায় গলা চড়তে শুরু করেছে। প্রতিবেশী বলয়ে এই ঘটনার অভিঘাতকে কিছুটা আশঙ্কার চোখেই দেখছে বিদেশ মন্ত্রক। আর তাই ঢাকায় ভারত-বিরোধী সুর প্রকট হওয়ার পিছনে যে সব কারণকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে, তাকে প্রশমিত করতে কোমর বেঁধেছে ভোটের মুখে দাঁড়ানো মোদী সরকার। কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, জানুয়ারির নির্বাচনে যারা শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লিগের বিরোধিতা করেছিল, তাদের একটি বড় অংশ ‘ভারত বয়কট’ প্রচারে গলা মিলিয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করে এর পিছনে কোনও সংগঠিত শক্তি বা রাষ্ট্রের ইন্ধন রয়েছে।
ভারতের বাজারে পেঁয়াজের জোগানে সঙ্কট এবং তার জেরে দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মোদী সরকার রফতানিতে রাশ টেনেছিল। গত বছর থেকেই দুই বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ করে দেয় ভারত। বিষয়টি নিয়ে বার বার আবেদন জানান হাসিনার মন্ত্রী এবং সরকারি কর্তারা। সম্প্রতি সে দেশে ভারত বিদ্বেষের যে ঢেউ তৈরি হয়েছে, সে কথাও বিদেশ মন্ত্রকের অজানা নয়। তাই রমজান এবং ইদের আগেই ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ ঢাকাকে পাঠিয়েছে দিল্লি।
গত মাসেই ঢাকার পান্থপথ অঞ্চলের কিছু দোকান ভারতীয় পণ্য তুলতে অস্বীকার করে। অথচ সেখানে ভারতীয় পণ্যই বেশি রাখা হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রামের অনেক দোকানদার এবং কর্মী বলেছেন, ভারতের তৈরি রান্নার তেল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্রসাধনের সরঞ্জাম ও জামাকাপড়ের বিক্রি কিছুটা কমেছে। দেশের বাইরে আত্মগোপন করে থাকা জামাতে ইসলামি ও বিএনপি-র কট্টর সমর্থক অনেক বাংলাদেশি ভ্লগার অনলাইনে ভারত-বিরোধী প্রচার তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার এক সপ্তাহ পরেই এই পোস্টগুলি বাড়তে থাকে। সূত্রের খবর, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাককে সমর্থন করেছিল বিএনপি ও তাদের ১২টি সমমনা দল।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এর ফলে ভারত থেকে বাংলাদেশের রফতানিতে যে বড় ধাক্কা লেগেছে তা নয়। কিন্তু প্রতিবেশী বাংলাদেশে এমন ভারত-বিরোধী উত্তাপ, নয়াদিল্লির চিন্তা বাড়িয়েছে। এর পিছনে একটি নির্দিষ্ট নকশাও দেখছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থী শক্তি এই প্রচারের পিছনে রয়েছে মনে করছে দিল্লি। বাংলাদেশের মাটিকে কাজে লাগিয়ে অতীতে বিএনপি জমানায় ইসলামাবাদ লাগাতার সন্ত্রাস পাচার করেছে ভারতে। বাংলাদেশের ভূকৌশলগত অবস্থানকে নাশকতার কাজে লাগিয়েছে আইএসআই। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে প্রতিশ্রুতি দেন, বাংলাদেশের মাটিকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার হতে দেওয়া হবে না। দিল্লি বার বার স্বীকার করেছে, প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন হাসিনা। বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী আবহাওয়া তৈরি করার সুযোগ পেলে আইএসআই ছেড়ে দেবে না বলে মনে করে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে টানা ৪ বার হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে বিএনপির বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নের মুখ্য শরিক ভারতকে নিশানা করছে বলে ব্যাখ্যা দিচ্ছে বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র। বাংলাদেশের সমাজের ঐতিহ্যগত ভাবেই মৌলবাদী অংশ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ়্জ়ুর ‘ভারত তাড়াও’ প্রচার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
নয়াদিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে বলা হয়েছে, ভারত আচমকা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় অসুবিধা হয়েছে বটে, তবে কূটনৈতিক স্তরে এমন মেকানিজম তৈরির জন্য সাউথ ব্লকের সঙ্গে আলোচনা এগোচ্ছে, যাতে এই পরিস্থিতি তৈরিই না হয়। এক কর্তার কথায়, “ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ভারতের কাছে অনুরোধ, পেঁয়াজ, চিনি, গমের মতো কিছু পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ যাতে প্রতি মরসুমেই বাংলাদেশে যায় সেই মেকানিজম চূড়ান্ত করা। তা হলে কেউ এ নিয়ে রাজনীতি করতে পারবে না।”