কাঁচামরিচ ও সবজির বাজার আরও চড়েছে
সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচ ও সবজির বাজার আরও চড়েছে। তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা ছুঁয়েছে কাঁচামরিচ। বেশ কয়েকটি সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার আশপাশের দরে। এদিকে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজসহ অন্য নিত্যপণ্য আগের বাড়তি দরেই কেনাবেচা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মরিচের দাম এ সময় কিছুটা বাড়তি থাকে। আর সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহে সবজি উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম, যার প্রভাব পড়েছে দামে।
গত বছরের এ সময় কাঁচামরিচের দাম বাড়তে শুরু করেছিল। ধীরে ধীরে তা হাজার টাকা কেজি ছাড়িয়ে যায়। পরে আমদানি শুরু হলে দাম কমতে থাকে। গেল এক সপ্তাহ বাজারে ঘন ঘন ওঠানামা করেছে মরিচের দাম। একদিন বাড়ে তো পরদিন কমে। গতকাল ঢাকার মহাখালী, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। অবশ্য দু-তিন দিন আগে এ দর ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে।
সবজি বাজারে এখনও কমেনি উত্তাপ। বেশ কয়েকটি সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার আশপাশে। বিশেষ করে পেঁপের দাম শুনে ক্রেতার চক্ষু চড়কগাছ। বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি পেঁপের দাম রাখছেন ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। এ ছাড়া কাঁকরোলের কেজি ৭০ থেকে ৮০, বেগুন ৮০ থেকে ৮৫, কচুর লতি ৭৫ থেকে ৮০, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এ দরের চেয়ে কিছুটা কমেও কয়েকটি সবজি কেনা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে ধুন্দল, পটোল ও ঢ্যাঁড়শ। সবজি তিনটি কেনা যাবে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
তেজকুনিপাড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া বলেন, ‘গরমের কারণে কৃষকরা সবজি উৎপাদন কমাইছে। এ কারণে পাইকাররা দাম বাড়াই দিছে। কাঁচামরিচের দরও এখন একদিন কমে, একদিন বাড়ে।’
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, ‘প্রতিবছর এ সময়ে কাঁচামরিচের দর বাড়ে। ফলে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। গত বছরও অনেক বেড়েছিল। তাই এবারও দাম বেড়ে যাওয়ার আগে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’ সবজি নিয়ে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক তীব্র তাপমাত্রার কারণে সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। তবে সবজি বাজার যাতে স্থিতিশীল থাকে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ থাকা দরকার।’ আলু বাজারে এখনও সুখবর নেই। খুচরায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকায়। তবে কারওয়ান বাজারের মতো বড় পাইকারি বাজার থেকে একসঙ্গে পাঁচ কেজি কিনলে কেজিপ্রতি দাম পড়বে ৫০ টাকার আশপাশে।
কয়েক দিন ধরে সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০০ বা এর কিছু বেশি দামে। তবে গত দু’দিনে ২০ টাকার মতো কমেছে। এখন প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকায়। তবে ব্রয়লারের দাম কমেনি। প্রতি কেজি কিনতে খরচ করতে হবে ২১০ থেকে ২২০ টাকা।
মুরগির দর বাড়ার কারণে ডিমে এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে। প্রতি ডজন ডিম বাজারে ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও পাড়ামহল্লায় কিনতে গেলে ডজনে আরও পাঁচ টাকা বেশি গুনতে হয়।
মাছের বাজারে খুব বেশি হেরফের দেখা যায়নি। গত সপ্তাহের মতোই প্রতি কেজি তেলাপিয়া ও পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। কই মাছের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। আর রুই ও কাতলের কেজি কেনা যাচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তবে হাওর এলাকার রুই কিংবা কাতল মাছ কিনতে গেলে কেজিতে আরও ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি
গুনতে হবে।
এদিকে আমদানিনির্ভর কয়েকটি পণ্যের বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। বিশেষ করে মসলাজাতীয় পণ্য জিরা, এলাচ, আদা, রসুনের দর বেড়েছে। আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন ২৩০ থেকে ২৪০, আমদানি করা আদার কেজি ২৮০ থেকে ৩০০, দেশি আদার কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ এবং দেশি রসুনের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে চিনির দর কমে ১৩০ টাকায় নেমেছিল। তবে গতকাল কিছুটা বাড়তি দেখা গেছে। ছোট ব্যবসায়ীরা চিনির কেজি বিক্রি করছেন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে।
কারওয়ান বাজারের আবদুর রব স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. নাঈম বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে পাইকারি বাজারে আমদানি করা পণ্যের দাম কিছুটা বাড়ছে। ভারত থেকে চিনি আসার কারণে মধ্যে
দর কিছুটা কমেছিল। এখন আবার কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেলসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আগের বেড়ে যাওয়া দামে এখনও বেচাকেনা হচ্ছে।