চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ধস
► আট মাসে ৭০০ প্রকল্পে ৫৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন বিডায়
► দেশি বিনিয়োগ কমেছে ১১ হাজার ৫৯৫ কোটি ও বিদেশি ৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা
► প্রভাব ফেলছে ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য সংকট : বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে মোট ৭০০ প্রকল্পে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-তে। এতে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৬৭২ প্রকল্পের বিপরীতে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধিত প্রকল্পের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে ধস নেমেছে। এক বছরে যৌথ বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে ২১ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪-এ এই তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী- চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬১৯টি দেশি বা স্থানীয় প্রকল্পের বিপরীতে ৩৮ হাজার ৮২২ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছে। অন্যদিকে ৮১টি প্রকল্পের বিপরীতে বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছে ১৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৫৯৫টি প্রকল্পের বিপরীতে ৫০ হাজার ৪১৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছিল। আর ৭৭টি প্রকল্পের বিপরীতে বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশি-বিদেশি উভয় ধরনের বিনিয়োগ কমে গেছে। এর মধ্যে দেশি বিনিয়োগ কমেছে ১১ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে প্রথমে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর কাছে নিবন্ধন করতে হয়। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। বিনিয়োগ সম্পর্কিত যাবতীয় সেবাও দেওয়া হয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে। আর বিডায় নিবন্ধিত প্রকল্পগুলো থেকে পরে বিনিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয় বলে-এ পরিসংখ্যান থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, করোনা মহামারির পরপরই শুরু হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এরপর মধ্যপ্রাচ্য সংকট। সারা বিশ্বেই একটা টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশেই বিনিয়োগের হার নিম্নমুখী। সে তুলনায় বাংলাদেশে বরং ভালো রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে টানা এক দশক দেশে বিনিয়োগের গতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। করোনা মহামারির প্রভাবে ২০২২ সাল থেকে সেই গতিতে ছেদ পড়ে। এর পরের দুই বছর বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৯৫৬টি বেসরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রস্তাবনা এসেছিল ৮৭ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। এক দশক পর ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ১ হাজার ১২৪টি দেশি-বিদেশি প্রকল্পের বিপরীতে এই বিনিয়োগ প্রস্তাবনা আসে। এরপর থেকেই কমতে থাকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ১৬টি প্রকল্পের বিপরীতে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৩ কোটি টাকার যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়। চলতি অর্থবছরে আট মাসে নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে গত অর্থবছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।