USA

বিতর্ক মঞ্চের বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ, কমলার বাক্যবাণে খেই হারালেন ট্রাম্প

আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশগ্রহণ করলেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম বিতর্কে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলার বাক্যবাণে খেই হারিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ট্রাম্প। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় এবিসি নিউজের আয়োজনে এই বিতর্ক হয়।

বিতর্কের সঞ্চালক ছিলেন ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস। বিতর্কের শুরুতে একে অপরের সঙ্গে হাত মেলান কমলা-ট্রাম্প। বিতর্কে গর্ভপাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনীতি থেকে আবাসন সংকটসহ বাদ যায়নি কিছুই।
অর্থনীতির প্রসঙ্গ উঠতেই মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠার নিজের গল্প বলেন কমলা। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট হলে পারিবারিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে সাহায্য করবেন। এর পর ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে বলেন, আর উনি প্রেসিডেন্ট হলে কোটিপতিদের এবং বড় করপোরেশনগুলোকে কর ছাড় দেওয়া হবে!
বেকার সমস্যা, কোভিডকালীন অচল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেই দায়ী করেন কমলা। দাবি করেন, ট্রাম্পের তৈরি করে যাওয়া ‘আবর্জনার স্তূপ’ সাফ করতে বাইডেন সরকারকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতেই ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে ঝোঁকেন ট্রাম্প। কমলাকে উদ্দেশ করে বলেন, উনি মার্কসবাদী। ওর বাবাও মার্কসবাদী ছিলেন। ডেমোক্র্যাটরা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর!
পাশাপাশি, প্রেসিডেন্ট হলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী। ব্যক্তিগত আক্রমণে অবশ্য বিচলিত হননি কমলা। হাসিমুখেই শুনেছেন সব ‘অভিযোগ’। রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্পকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর হুঁশিয়ারি, পুতিন আপনাকে খেয়ে ফেলবে।

কমলা বলেন, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন চীনের কাছে আমেরিকার চিপ বিক্রি করেছিলেন। যাতে নিজেদের সামরিক বাহিনীকে আরও মজবুত এবং আধুনিক করে তুলতে পারে চীন। চীনকে নিয়ে এমন নীতি হওয়া উচিত, যাতে একবিশং শতাব্দীর প্রতিযোগিতায় জিতে যায় আমেরিকা। সেই সঙ্গে কমলা অভিযোগ করেন, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তিনি বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন।
বিতর্কের সঞ্চালক গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান সুস্পষ্ট করার আহ্বান জানান। ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেন, ডেমোক্র্যাটরা ৯ মাসের গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের অধিকার দিতে চান। কমলার রানিং মেট টিম ওয়ালজ ৯ মাসের গর্ভাবস্থায়ও গর্ভপাতের অধিকার দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন।
ট্রাম্প চান, গর্ভপাতের বিষয়টি অঙ্গরাজ্যগুলো ঠিক করুক। তারা আইন করুক। নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি নিষ্পত্তির অধিকার অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, কিছু কিছু অঙ্গরাজ্য জন্মের পর নবজাতককে মেরে ফেলার অনুমতি দেয়। ট্রাম্পের এ কথার পর সঞ্চালক বলেন, দেশে এমন কোনো অঙ্গরাজ্য নেই, যেখানে জন্মের পর কোনো শিশুকে হত্যা করা বৈধ।
কমলা স্মরণ করিয়ে দেন, ট্রাম্পের আমলে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতিরাই বছর দুয়েক আগে গর্ভপাতের ফেডারেল অধিকার বাতিল করেন।
ট্রাম্পের উদ্দেশে কমলা বলেন, আপনি বলেন, মানুষ এটাই চেয়েছিল? কিন্তু এমনও ঘটনা ঘটেছে যে পার্কিং লটে গাড়িতে সন্তানসম্ভবা নারীর রক্তপাত হয়েছে। কারণ, তারা গর্ভপাত করার অনুমতি পাননি। নারীদের কথা উল্লেখ করে আবেগপ্রবণ হয়ে কমলা বলেন, তারা এটা চান না।
যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের আর আট সপ্তাহ বাকি। ট্রাম্প না কমলা, কে হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? সে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোড়ও। কিন্তু দীর্ঘ নির্বাচনী প্রচারের পর এই প্রথম মুখোমুখি বিতর্কসভায় অংশ নিলেন তারা। সভার শুরুতে হেসে করমর্দনও করলেন! এর সঙ্গে সঙ্গেই অবসান হলো প্রেসিডেনসিয়াল বিতর্ক সভায় একে অপরকে হাত মিলিয়ে সম্ভাষণ না করার দীর্ঘ আট বছরের ধারার।

এর আগে গত জুন মাসে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রথম রাউন্ডের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট’ হয়েছিল। সভার শুরুতে নিয়ম মতোই কেউ কারো সঙ্গে হাত মেলাননি। বিতর্ক শুরুর পরেও প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করে ছাড়েন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলস্বরূপ জনমত সমীক্ষাগুলোতেও এগিয়ে যান ট্রাম্প। এর পরেই ডেমোক্র্যাট জাতীয় সম্মেলনে বাইডেনের স্থানে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয় কমলা হ্যারিসকে।
বিতর্কের সময় মঞ্চের বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ : যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে বিতর্কের সময় মঞ্চের বাইরে চলে ব্যাপক বিক্ষোভ। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের নিন্দায় বিক্ষোভ করে শত শত মানুষ। বুধবার এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্ক শুরুর আগে থেকেই ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন সেন্টারের বাইরে জড়ো হয় কয়েকশ’ আন্দোলনকারী। এ সময়, গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রতিবাদ জানান তারা।
অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের বাধা দিতে দেওয়া হয়েছিলো ব্যারিকেড। তবে, পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষুব্ধ জনতা এগিয়ে যেতে চাইলে সংঘর্ষের ঘটনা-ও ঘটে।
বিক্ষোভের সময়, অনেকে ধরপাকড়ের শিকার হয়। মার্কিন নির্বাচনের আট সপ্তাহ আগে বিতর্কে মুখোমুখি কমালা ও ট্রাম্প। ভোটের আগেই গাজা ইস্যুতে সমাধান চায় আন্দোলনকারীরা।
কমলাকে ইতিহাসের ‘সবচেয়ে খারাপ ভাইস প্রেসিডেন্ট’ বললেন ট্রাম্প : এবিসি নিউজের আয়োজিত এই বিতর্কে ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে হ্যারিস বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবার জন্য ট্রাম্পের ‘কোনো পরিকল্পনা নেই’। খবর আল জাজিরার।
নিজের বক্তব্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘কমলা হ্যারিস ইসরাইলকে ঘৃণা করেন। তিনি নিজের মতো করে আরব জনগণকেও ঘৃণা করেন।’ তিনি কীভাবে গাজায় চলমান যুদ্ধ শেষ করবেন এবং হামাসের হাতে আটক থাকা বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হবেন জানতে চাওয়া হলে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকলে এ যুদ্ধই হতো না।

কমলা ইসরাইলকে ঘৃণা করেন। যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, আমার বিশ্বাস দুই বছরের মধ্যে ইসরাইলের অস্তিত্বই থাকবে না।’ এ সময় সাবেক এই প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন তোলেন কেন হোয়াইট হাউসে ক্ষমতায় থাকাকালীন নিজের পরিকল্পনাগুলো কার্যকর করেননি কমলা হ্যারিস।
ট্রাস্প বলেন, ‘তিনি এসব বিস্ময়কর জিনিস করতে যাচ্ছেন। কেন তিনি এটা করেননি? তিনি সেখানে (হোয়াইট হাউসে) সাড়ে তিন বছর ধরে আছেন। সীমান্ত ঠিক করতে তাদের সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছে। তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্যও সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছে।’ তিনি বাইডেন এবং হ্যারিসকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আখ্যা দিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটান।
কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলে ইসরাইলের অস্তিত্ব থাকবে না : আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী বিতর্ক এখন জমজমাট পর্যায়ে। বিতর্কে অংশ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস প্রায়ই পরস্পরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এর পাশাপাশি প্রতিপক্ষ প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভবিষ্যতে দেশটির মিত্রদের নেতিবাচক পরিস্থিতিতে পরার মন্তব্যও আসতে দেখা যাচ্ছে।
নির্বাচনি বিতর্কে অংশ নিয়ে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস দেশটির অন্যতম মিত্র রাষ্ট্র ইসরাইলকে সচল রাখতে খুব কমই কাজ করছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে দুই বছরে ইসরাইল পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতের এই বিতর্কে ইসরাইল প্রসঙ্গ উঠে এলে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কমলা হ্যারিসের তীব্র সমালোচনা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি (কমলা) যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে যান, তবে এখন থেকে দুই বছরের মধ্যে ইসরাইল নামে কোনো দেশের অস্তিত্ব থাকবে না। ইসরাইল উধাও হয়ে যাবে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়ে ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেন, এই অভিযোগ মোটেও সত্য নয়। তিনি কর্মজীবনে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে আসছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button