USA

কমলার পালে নতুন হাওয়া

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে দারুণ নৈপুণ্য দেখানোর পর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পালে নতুন হওয়া লেগেছে। এমনকি রিপাবলিকান প্রার্থীর ঘনিষ্ঠজনও স্বীকার করছেন, কমলা ভাগ্যনির্ধারণী এ লড়াইয়ে জিতে গেছেন। খবর সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের। 

ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে নতুন উদ্যম ও উচ্ছ্বাস তৈরি করেছেন। বিতর্কের পরপরই পপ সেনশেসন টেইলর সুইফটের দৃঢ় সমর্থনকেও কাজে লাগাচ্ছে কমলাশিবির। তারা আশা করছে, পপ মেগাস্টারের অনুগত ফ্যানদের মধ্যে কমলাকে নিয়ে আগ্রহের নতুন দ্বার খুলতে পারে।

ট্রাম্প অবশ্য এই ঘটনার পর বিতর্কের ধারণা পাল্টানোর চেষ্টা করছেন। বিতর্কের পর ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “বক্সিং বা ইউএফসির জগতে যখন একজন যোদ্ধাকে মারধর করা হয় বা তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিটকে যায়, তখন তারা উঠে চিৎকার করে, ‘আমি রিম্যাচ চাই, আমি রিম্যাচ চাই!’ বিতর্কের ব্যাপারটা তা থেকে আলাদা নয়। গত রাতে আমাকে ‘প্রহার’ করা হয়। তবে প্রতিটি জরিপে আমাদের জয় হয়েছে। তাহলে আমি কেন রিম্যাচ দাবি করব?” এর মাধ্যমে তিনি দৃশত দ্বিতীয় দফায় কমলার মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করলেন। 

মঙ্গলবারের বিতর্কের পরপরই সিএনএন পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, কমলাকে ৬৩ শতাংশ  আর ট্রাম্পকে মাত্র ৩৭ শতাংশ দর্শক বিজয়ী মনে করছেন।  তবে বিতর্কে বিজয়ী হওয়ার পরও সামনে চ্যালেঞ্জিং সময় কমলার। ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনে কমলার প্রচারণা সদরদপ্তর এখনও উত্তেজনাপূর্ণ। তাঁর প্রচারশিবিরের একজন সিনিয়র সহকারী সিএনএনকে বলেছেন, নির্বাচনে তাদের জয়ের সম্ভাবনা ৫০-৫০। ভোটে অবিশ্বাস্য রকমের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বিজয়ের আগ পর্যন্ত আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ নেই।

 সমালোচকরা বলছেন, মঙ্গলবার কমলার পারফরম্যান্স নৈপুণ্যের দিক থেকে শক্তিশালী হলেও তিনি মূল প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেছেন। ভোটাররা ডেমোক্র্যাট  প্রার্থীর কাছ থেকে আরও বিস্তারিত জানতে চান। 

তিনি তাঁর নীতি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুনির্দিষ্ট ছিলেন না।  যেমন– কমলা বলেছেন, তিনি মধ্যবিত্তদের ওপরে তুলতে চান।  কিন্তু কীভাবে করবেন, তা বলেননি। 

এদিকে ট্রাম্প যদিও দাবি করেছেন, তিনি একটি দুর্দান্ত বিতর্ক করেছিলেন। তবে তাঁর মিত্ররা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলছেন ভিন্ন কথা।  ট্রাম্প লিখেছেন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘এটি আমার সর্বকালের সেরা বিতর্ক ছিল।  বিশেষ করে তিনজনের বিরুদ্ধে আমাকে একা লড়তে হয়েছে।’ এবিসি নিউজের দুই মডারেটরকেও কমলার সহযোগী বলে দাবি করেন তিনি।

অবশ্য বিতর্কের কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প তাঁর উপদেষ্টা এবং মিত্রদের কাছেও ব্যক্তিগতভাবে একই কথা বলেছেন বলে ওয়াকিবহাল তিন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন। 

তবে বিতর্কের পরের দিন, তাঁর সহযোগীরা জনসমক্ষে তাঁর পারফরম্যান্সের প্রশংসা করলেও ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই স্বীকার করেছিলেন, তিনি খুব কঠিন অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলেন। 
ট্রাম্পকে সমর্থনকারী  রিপাবলিকান নেতা রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র ফক্স নিউজকে বলেছেন‌, ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস স্পষ্টতই মার্জিত এবং সুসংগঠিত এবং তাঁর প্রস্তুতির পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্কে জিতেছেন। বিষয়বস্তুর নিরিখে ট্রাম্প জিতেছেন, তবে তিনি কমলার মতো সেভাবে গল্প বলতে পারেননি।’ 

ট্রাম্প বিতর্কে হেরেছেন কিনা তা নিয়ে তার মিত্রদের কেউ কেউ সন্দিহান হলেও, ওয়াল স্ট্রিট নিশ্চিত করেছে,  ট্রাম্প খারাপ করেছেন। বিতর্কের পারফরম্যান্সের পর বিনিয়োগকারীরা দ্রুত ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবসাকে শাস্তি দিয়েছেন।

ট্রুথ সোশ্যাল গত মার্চের শেষের দিকে শেয়ারবাজারে আসার পর ট্রাম্পের মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের শেয়ার বুধবার ১০ শতাংশ কমেছে। এর শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে। এর আগে সিএনএন বিতর্কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিপর্যয়কর পারফরম্যান্সের পর  গত ২৮ জুন ট্রাম্পের মিডিয়ার শেয়ারের দামের ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গেছে এবার। ট্রাম্প মিডিয়ার শেয়ারদর সেই দিন ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button