দমনপীড়ন চালিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না ইমরান সমর্থকদের
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের বিভিন্ন সড়কে কয়েক সপ্তাহ ধরেই সারি করে রাখা জাহাজের কনটেইনার; রাখা হয়েছে অন্য প্রতিবন্ধকতাও। যে কোনো বিক্ষোভে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো কাজে লাগানো যায়, সেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইসলামাবাদকে অবরুদ্ধ করে রাখা এখন অনেকটা নিয়মিত ঘটনা। অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার কোনো ইঙ্গিত পেলেই রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে কর্তৃপক্ষ। সড়কগুলোয় থাকা এসব কনটেইনার ও প্রতিবন্ধকতা নগরবাসীকে যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো কিছু ঘটার কথাই সর্বক্ষণ মনে করিয়ে দেয়।
শুক্রবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। সর্বশেষ গত রোববার ইসলামাবাদের চারপাশজুড়ে ২৯টি রুট (পথ) আটকে দেওয়া হয় কনটেইনার দিয়ে। কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের সমর্থকরা পূর্ব ঘোষিত মিছিল ও সমাবেশে অংশ নিতে রাজধানী অভিমুখে রওনা করেন। তাদের অনেকের হাতে ছিল পতাকা, ব্যানার এবং ইমরানের ছবিসংবলিত পোস্টার। সমর্থকরা ‘ইমরান খান জিন্দাবাদ’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
সড়কে রাখা বড় বড় কনটেইনার আটকে রাখতে পারেনি ইমরান খানের সমর্থকদের স্রোত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, সমর্থকরা সারি বেঁধে ঠেলে ধাতব প্রতিবন্ধকগুলো একপাশে সরিয়ে দিচ্ছেন। এভাবেই সমাবেশস্থল অভিমুখে এগিয়ে চলেন তারা। কিন্তু সমর্থকরা যার ছবি হাতে হাতে নিয়ে ঘুরছেন, সেই ইমরানই সমাবেশে নেই। এক বছরের বেশি সময় ধরে তিনি কারাগারে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁস করার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইমরান তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছেন।
জাতিসংঘের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপও বলেছে, স্বৈরাচারী কায়দায় আটক করা হয়েছে ইমরানকে। তবে তাঁর মুক্তির সম্ভাবনা কম। অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, পাকিস্তানে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর সম্মতি ছাড়া ইমরান খানের মুক্তি নেই। কিন্তু তার পরও পিটিআইয়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দমে নেই। সব প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে রোববার তারা সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্ডাপুর বলেন, পাকিস্তানের মানুষের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি দু-এক সপ্তাহের মধ্যে ইমরানকে আইনগতভাবে মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে স্রষ্টার নামে শপথ করছি, আমরাই তাঁকে মুক্ত করব। আপনি কি তৈরি?
বিক্ষোভ দমনে সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎক্ষণিক। সমাবেশের পরের দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনে দমনাভিযান শুরুর খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পাকিস্তান পার্লামেন্টের এক ফুটেজে দেখা যায়, পিটিআই চেয়ারম্যান ও আইনপ্রণেতা গওহার আলি খানকে সেখান থেকে জোরপূর্বক বের করে আনা হচ্ছে। পুলিশ তাঁর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে; আর তাঁকে ঘিরে আছে ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, জাতীয় পরিষদের আরেক সদস্য সোয়েব শাহিনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পিটিআইর তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে পিটিআই বলেছে, গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১০ জনের বেশি। গওহার আলি খানকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যরা এখনও পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে নতুন এক আইনে। গত সপ্তাহে পাস করা এ আইনকে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের অধিকারের ওপর আরেক হামলা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, এর পরিণাম বিপজ্জনক। সবচেয়ে খারাপ যে ফলাফল হতে পারে, সেটি হলো, পাকিস্তান আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। এতে দেশটির অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা আগের চেয়ে বেশি কঠিন হবে।
সম্প্রতি দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন অনলাইন জানায়, পিটিআইপ্রধান ইমরান খানের বিচার সামরিক আদালতে হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র। তিনি বলেন, তাদের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই; কোনো দলকেও তারা সমর্থন করেন না। তবে সাবেক আইএসআইপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) ফায়াজ হামিদ সম্পর্কিত এক মামলায় ইমরান খানের বিচার সামরিক আদালতে হতে পারে।