ট্রাম্পের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসীকে নিয়ে ১০০ সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ও কর্মকর্তার উদ্বেগ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সিনেটে রুদ্ধদ্বার বৈঠক আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রায় ১০০ কূটনীতিক, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
তুলসী গ্যাবার্ডের অভিজ্ঞতার ঘাটতি, তাঁর বিরুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের মতো স্বৈরশাসকদের প্রতি ‘সহানুভূতি’ থাকার অভিযোগ এবং অন্যান্য উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে ওই কূটনীতিক ও কর্মকর্তারা এ বৈঠকের আহ্বান জানান।
এক খোলাচিঠিতে কূটনীতিক ও কর্মকর্তারা তাঁদের ওই উদ্বেগ জানান। চিঠিতে তুলসীর ব্যাপারে অসন্তোষ জানিয়ে তাঁরা বলেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও হাওয়াইয়ের প্রতিনিধি পরিষদ সদস্যের গোয়েন্দা খাতে অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পুরোদস্তুর সামরিক অভিযান শুরু করা নিয়ে প্রচলিত ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো তিনি ধারণ করেন। এ ছাড়া ২০১৭ সালে দামেস্কে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের সঙ্গে বৈঠক করার পর নিজেকে রুশ ও সিরীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে রেখেছেন তিনি।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের দায়িত্ব পেলে তুলসী গ্যাবার্ড সবার জন্য গর্ব করার মতো মানুষ হয়ে উঠবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান, ন্যাটোর সাবেক উপমহাসচিব রোজ গটেমোলার, সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অ্যান্থনি লেক। আছেন বেশ কয়েকজন সাবেক রাষ্ট্রদূত, গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার (ডেমোক্রেটিক দলের নেতা) এবং আগামী সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুনকে (রিপাবলিকান পার্টির নেতা) সম্বোধন করে এ চিঠি লেখা হয়েছে।
চিঠিতে ওই কূটনীতিক ও কর্মকর্তারা সিনেটের প্রতি ‘যথাযথ তদন্ত, শুনানি ও নিয়মিত আদেশ অনুসরণ করাসহ তার সাংবিধানিক পরামর্শ এবং সম্মতিসূচক ভূমিকার পূর্ণ ব্যবহার করার’ অনুরোধ জানান। এ ছাড়া সিনেট কমিটির প্রতি এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ‘সহজলভ্য সব তথ্য’ বিবেচনা করার আহ্বান জানান তাঁরা; যাতে ‘মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রগুলো ও পদ্ধতির সুরক্ষায়’ গ্যাবার্ডের দক্ষতা–যোগ্যতা পর্যালোচনা করা যায়।
ইতিপূর্বে একই ধরনের সমালোচনাকে অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তুলসী ও তাঁর সমর্থকেরা। তাঁরা বলেছেন, সিরিয়া ও ইউক্রেনে হস্তক্ষেপবিরোধী তাঁর ভূমিকাকে রাজনৈতিক শত্রুরা ভুলভাবে উপস্থাপন করছেন। উল্লেখ্য, তুলসী নিজেকে ইসরায়েল ও ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ একজন কট্টর সমর্থক হিসেবে এরই মধ্যে পরিচয় দিয়েছেন।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান, ন্যাটোর সাবেক উপমহাসচিব রোজ গটেমোলার, সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অ্যান্থনি লেক। আছেন বেশ কয়েকজন সাবেক রাষ্ট্রদূত, গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো–সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তবে ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতি ও গোয়েন্দা কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত অনেকে গ্যাবার্ডকে একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে মনে করেন। যেমন খোলাচিঠিতে যেসব উদ্বেগের বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, সেসবের একটি এমন যে সিরিয়ায় বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট আসাদের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা নিয়ে গ্যাবার্ডের সন্দেহ রয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রতিবেদনে আসাদ রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর তুলসীর অনলাইন পোস্টগুলোতে বলা হয়, ‘ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন করা ল্যাবগুলো জৈব অস্ত্র তৈরি করছে এবং ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের সংশ্লিষ্টতা রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য এক হুমকি।’
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও সিরীয় প্রেসিডেন্ট আসাদের প্রতি তুলসীর সহানুভূতি ‘তাঁর বিচার–বিবেচনা ও যোগ্যতা’ প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বলেও উল্লেখ করেন ওই মার্কিন কূটনীতিক ও কর্মকর্তারা।
নামের কারণে তুলসী গ্যাবার্ডকে অনেকেই ভারতীয় বলে মনে করেন। তবে ভারতের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। তুলসীর মা হিন্দু মতাদর্শে দীক্ষা নেন এবং তাঁর সব সন্তানের হিন্দু নাম দেন। তুলসীও নিজেকে হিন্দু হিসেবে পরিচয় দেন। মার্কিন কংগ্রেসে তিনিই প্রথম হিন্দু সদস্য। আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় ভগবদ্গীতা হাতে শপথ নিয়েছিলেন তিনি।
উচ্চপর্যায়ের গোয়েন্দা আলাপ–আলোচনা সম্পর্কে অবগত আছেন, এমন একজন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, এ অঞ্চলের অন্য নেতাদের সঙ্গে তুলসীর যোগাযোগ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর উদ্বেগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, তুলসী গ্যাবার্ড একসময় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য। রাজনীতি করেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে। পরে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন। ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর তুলসীকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের দায়িত্ব পেলে তুলসী গ্যাবার্ড সবার জন্য ‘গর্ব’ করার মতো মানুষ হয়ে উঠবেন বলে সম্প্রতি উল্লেখ করেন ট্রাম্প। এখন তুলসীর সামনে সিনেটে অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষা। সিনেটের সমর্থন পেয়ে উতরে গেলে তিনি নিশ্চিতভাবে গোয়েন্দা পরিচালকের দায়িত্ব বুঝে পাবেন।
আগে থেকে তুলসীর কিন্তু গোয়েন্দাগিরি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা নেই। তবে দুই দশকের বেশি সময় ধরে মার্কিন বাহিনীতে একজন সেনাসদস্য হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। কুয়েত ও ইরাক যুদ্ধের সময় দেশ দুটিতে তাঁকে মোতায়েন করা হয়েছিল। এ ছাড়া দুই বছর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন তুলসী।
উল্লেখ্য, নামের কারণে তুলসী গ্যাবার্ডকে অনেকেই ভারতীয় বলে মনে করেন। তবে ভারতের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। তুলসীর মা হিন্দু মতাদর্শে দীক্ষা নেন এবং তাঁর সব সন্তানের হিন্দু নাম দেন। তুলসীও নিজেকে হিন্দু হিসেবে পরিচয় দেন। মার্কিন কংগ্রেসে তিনিই প্রথম হিন্দু সদস্য। আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় ভগবদ্গীতা হাতে শপথ নিয়েছিলেন তিনি।