সূর্যের চেয়ে ১৫০ গুণ বড় এক তারার আচরণ দেখে বিভ্রান্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা
মহাকাশ মানেই যেন চমক। বিশাল মহাকাশজুড়ে প্রতিনিয়ত দেখা যায় নানা ধরনের মহাজাগতিক ঘটনা। এবার সূর্যের চেয়ে ১৫০ গুণ বড় একটি তারার আচরণ দেখে চমকে গেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ইংরেজিতে ‘হিকাপিং’ বলে একটি শব্দ আছে, যার বাংলা অর্থ ‘হেঁচকি’। হেঁচকি উঠলে আমাদের শরীরে বেশ ঝাঁকুনি হয়। দৈত্যাকার এই তারাও মাঝেমধ্যে ঝাঁকুনি দিয়ে থাকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, আগে তাত্ত্বিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা হলেও এবারই বাস্তবে প্রথম এমন ঘটনা দেখা গেছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীনা এই ঘটনাকে পালসেশনাল পেয়ার ইনস্টেবিলিটি (পিপিআই) নামের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় বিশাল তারার কেন্দ্র খুব উত্তপ্ত থাকে। তারাটি ধীরে ধীরে জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছালে দ্রুত সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। প্রতিবার স্পন্দিত হয়ে মূল নক্ষত্রের উপাদান কামানের গোলার মতো মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। গোলার মতো নাক্ষত্রিক বস্তু একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে তীব্র আলো তৈরি হতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কুইন্স ইউনিভার্সিটির অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী শার্লট অ্যাঙ্গাস বলেন, এমন সংঘর্ষ চূড়ান্ত সুপারনোভা বিস্ফোরণের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষীণ। এ কারণে নক্ষত্রের তত্ত্ব আগে নিশ্চিত করা সম্ভব হতো না। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এনজিসি ২৯৮১ নামক সর্পিল ছায়াপথে নতুন একটি উজ্জ্বল সুপারনোভা শনাক্ত হয়েছে, যার নাম এখন এসএন২০২০এসিসিটি। এই সুপারনোভার আলো খুব দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছায়াপথের একই অঞ্চল থেকে আলো আসতে দেখা যায়। এটা খুবই অস্বাভাবিক, কারণ সুপারনোভা থেকে কখনো দ্বিতীয়বার আলো আবির্ভূত হয় না। সুপারনোভার এই বিস্ফোরণ হাওয়াই, চিলি, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, প্রথমবার আবির্ভাবের পর আলো ধীরগতিতে মিলিয়ে যায়। কিছু সময় পর আবার আবির্ভূত হওয়ার পর সেখানে অনেক দ্রুত প্রসারণ দেখা গেছে।
কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ম্যাট নিকোল বলেন, ‘এখনো আমরা বিশাল তারাটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানি না। এমন স্পন্দনশীল আলোকচ্ছটা আশ্চর্যজনক মহাজাগতিক ঘটনা হিসেবে আমাদের জ্ঞান বিকাশের বড় পদক্ষেপ বলা যায়। সাধারণভাবে সুপারনোভা ঘটে যখন একটি দৈত্যাকার তারা বিস্ফোরিত হয়। তখন তারার ধ্বংসাবশেষ ও বিভিন্ন কণা মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। সুপারনোভার বিস্ফোরণ খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা যায়।’