যেভাবে সৌদিকে দমিয়ে রাখতো হাসিনা সরকার!
সম্প্রতি সাবেক পতিত শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের আরামকোর বিনিয়োগ আটকে দেওয়ার অভিযোগ আসে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আরামকোর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসে উপকূলে একটি তেল শোধনাগার স্থাপনের প্রস্তাব দিলেও, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও কিছু কর্মকর্তার স্বার্থপর মনোভাবের কারণে তাদের প্রস্তাব কার্যকর হয়নি।
সরকার বারবার বাংলাদেশকে বিনিয়োগবান্ধব দেশ হিসেবে তুলে ধরলেও বাস্তবতার সঙ্গে তা মেলেনি। বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও আরামকোর প্রতিনিধি দল সঠিক সহযোগিতা পাননি। এই অদক্ষতা ও নীতিগত ত্রুটি শুধু সৌদি বিনিয়োগই নয়, অন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও নিরুৎসাহিত করেছে। ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য তৎকালীন সরকারের সঠিক নীতিমালা ও জবাবদিহিতার অভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান বলেছেন, সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আরামকো বাংলাদেশে বিশাল অংকের বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে তিনবার বাংলাদেশে এসেছে। তবে আরামকো এখনো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
৫ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় রাষ্ট্রদূত এই মন্তব্য করেন। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল “Enhancing Saudi-Bangladesh Economic Engagement: Trends, Key Challenges & Long-Term Growth Prospects”।
বিনিয়োগ-বান্ধব বাংলাদেশ, কিন্তু বাস্তবে নয়
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি যে আমাদের দেশ বিনিয়োগ-বান্ধব। কিন্তু সবসময় তা সত্য নয়। বর্তমান সরকার পরিস্থিতি পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা সহজ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে সৌদি বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশে এলে আগের চেয়ে ভালো পরিবেশ দেখতে পাবেন।
সৌদি রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ
রাষ্ট্রদূত ইসা আল দুহাইলান বলেন, “২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আরামকোর একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল তিনবার বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু কেউ তাদের গ্রহণ করেনি। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের দপ্তর, সচিব এবং কর্মকর্তাদের কাছে ঘুরতে ঘুরতে তারা সমস্যায় পড়েছিল। কারণ, তখন কিছু মানুষ শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ দেখেছিল। তবে আমরা অতীত নিয়ে কথা বলব না, আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলব।”
তিনি আরও বলেন, আরামকো এখনো বাংলাদেশে আসতে চায়। কোম্পানিটি বঙ্গোপসাগরে একটি তেল শোধনাগার স্থাপন করতে চায়, যা বাংলাদেশের পাশাপাশি এ অঞ্চলের তেল সরবরাহে সহায়ক হবে।
সমুদ্রপথের সম্ভাবনা
রাষ্ট্রদূত বলেন, “যদি চট্টগ্রাম ও জেদ্দা বা দাম্মামের মধ্যে একটি সমুদ্রপথ স্থাপন করা যায়, তবে এটি বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের জন্য আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।”
তিনি জানান, প্রস্তাবিত শোধনাগারের পণ্যগুলো চীন, ভারত এবং আশপাশের অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
পূর্ববর্তী নীতিগত ভুল এবং ভবিষ্যৎ কৌশল
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অর্থ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “দুর্নীতি ও পূর্বের নীতিগত ভুলের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সৌদি আরবের আরামকো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং-এর মতো বড় বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা সঠিকভাবে স্বাগত পাননি। পরে স্যামসাং ভিয়েতনামে চলে যায়। এই নীতিগত ভুলগুলো এখন সংশোধন করা দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা অল্প সময়ের জন্য থাকলেও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পথ তৈরি করে যেতে চাই।”
বাংলাদেশ-সৌদি আরব সম্পর্কের গুরুত্ব
সালেহউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বহুস্তরীয় সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের বাণিজ্য বর্তমানে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও এর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিনামূল্যের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করছে। তবে এর জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সরকার একা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে না। এর জন্য বেসরকারি খাতের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) মো. নজরুল ইসলাম এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তারা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।