Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

কাতরাচ্ছিল গুলিবিদ্ধ তায়িম মৃত্যু উপভোগ করছিল পুলিশ

ট্রাইব্যুনালে লোমহর্ষক জবানবন্দী

এভাবেই জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ভাই নিহত হওয়ার মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিলেন শহিদ ইমাম হাসান তায়িমের ভাই রবিউল আউয়াল।

‘প্রথমে পুলিশের গালাগাল। ঠিক একটু পর দৌড় দিতে বলেই পায়ে গুলি চালানো হয়। পেছনে ফিরে তাকালে চালান আরেকটা গুলি। তবু ক্ষান্ত হননি। গুলিতে ঝাঁঝরা করে ফেলা হয় পুরো দেহ। রক্তাক্ত শরীরে বাঁচার আকুতি জানালেও বুক কাঁপল না ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের। উলটো দাঁড়িয়ে মৃত্যু উপভোগ করেন তারা। এমনকি বুট জুতায় মাড়িয়ে বিকৃত করে দেয়া হয় চেহারা।’

এভাবেই জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ভাই নিহত হওয়ার মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিলেন শহিদ ইমাম হাসান তায়িমের ভাই রবিউল আউয়াল। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। এদিন ১১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তিনি। তার জবানবন্দী রেকর্ড করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

রবিউল বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমি সিলেটে অংশ নেই। আর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় অংশ নেন আমার ছোট ভাই তায়িম। ১৬ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন আন্দোলনে ছিল। তবে আন্দোলনে যেন যেতে না পারে সেজন্য তার ব্যাগ নিয়ে কাছাকাছি বসে থাকতেন আমার মা। ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ জারি করে সরকার। ২০ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। ওই সুযোগে মাকে চা খাওয়ার কথা বলে বাইরে গিয়ে আন্দোলনে যায় আমার ছোট ভাই।’

আন্দোলনে যাওয়ার পর তায়িমকে দুবার কল করেন রবিউল। কিন্তু রিসিভ করেননি। দুপুর সাড়ে ১২টায় কল দিলে ছোট ভাইয়ের নম্বরটি বন্ধ পান তিনি। ১২টা ৫০ মিনিটে কল করেন মায়ের মুঠোফোনে। ঠিক তখনই রবিউলকে তায়িমের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানানো হয়। বাড়িওয়ালার মাধ্যমে এমন সংবাদ পেয়েছেন বলেও ছেলেকে জানান মা।

জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, ‘তায়িমের গুলিবিদ্ধের খবর পেতেই ঘটনাস্থল অর্থাৎ কাজলা ফুটওভার ব্রিজের পাশে যান আমার মা। যেতেই সেখানে তায়িমের জুতা আর রক্ত দেখতে পান তিনি। তবে উপস্থিত লোকজন আমার মাকে জানান যে, ‘আপনার ছেলেকে ভ্যানে করে যাত্রাবাড়ী থানার দিকে পুলিশ নিয়ে গেছে’। এ ছাড়া খবরটি খালা শাহিদাকে জানাই আমি। পরে তিনি কান্না করতে করতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে খোঁজাখুঁজির পর তায়িমকে না পেয়ে একজন সাংবাদিককে ছবি দেখান আমার খালা। এ সময় তায়িমকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে জানান ওই সাংবাদিক।’

পরদিন ঢামেক থেকে লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় যান তায়িমের বাবা। আর সিলেট থেকে বাড়িতে যান রবিউল। গ্রামেই ২১ জুলাই রাত ১০টায় শহিদ তায়িমকে দাফন করা হয়। তায়িমের শরীরে ২০০ ছররা গুলি ছিল বলে বাবার কাছ থেকে জানতে পারেন এই সাক্ষী। তার বাবাও পুলিশে চাকরি করেন। বর্তমানে একজন জ্যেষ্ঠ এসআই হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

তায়িমের বন্ধুদের বরাতে রবিউল বলেন, ‘২০ জুলাই পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়তে থাকলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ওই সময় দুই বন্ধুসহ কাজলায় লিটনের চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন তায়িম। তবে তাদের দেখে ফেলে পুলিশ। একপর্যায়ে তিনজনকে টেনে বের করে বেধড়ক পেটান। একই সাথে গালি দিয়ে দৌড় দিতে বলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাদের কথামতো প্রথমে দৌড় দেন তায়িম। ঠিক তখনই তার পায়ে প্রথমে গুলি করেন যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন এসআই সাজ্জাদুজ্জামান।’

প্রথম গুলি খাওয়ার পর পেছনে তাকান এই আন্দোলনকারী। তখন আরেকজনের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে তার শরীরের নিম্নাংশে দ্বিতীয় গুলি করেন এডিসি শামীম। খুব কাছ থেকে করায় তায়িমের সামনের পাশে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে গুলিটি বেরিয়ে যায়। এরপর তাকে অনবরত গুলি করতে থাকেন যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) জাকির।

এ বর্ণনা দিয়ে সাক্ষী বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তায়িমকে বাঁচাতে পেছন দিয়ে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল তার বন্ধু রাহাত। তখন তাকেও গুলি চালিয়ে তায়িমকে ফেলে রেখে যেতে বাধ্য করে পুলিশ। রাহাত চলে যাওয়ার পর আধা ঘণ্টা পর্যন্ত পড়েছিল আমার ভাই। রক্তাক্ত শরীরে কাতরাচ্ছিল আর আকুতি করছিল বাঁচান বাঁচান বলে। সাংবাদিকসহ উপস্থিত অনেকেই তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা তাকে নিতে দেননি। বরং তারা তার মৃত্যু উপভোগ করছিলেন। অথচ সেখান থেকে ২০ গজের মধ্যে রাস্তার দু-পাশে দু’টি হাসপাতাল ছিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘আধা ঘণ্টা পর ভ্যানে করে আমার ভাইকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে নেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। সেখানে ভ্যান থেকে মাটিতে নামিয়ে বুট জুতা দিয়ে তাকে মাড়িয়ে চেহারা বিকৃত করে ফেলেন তারা। এর মধ্যে ছিলেন এডিসি শামীম, এডিসি মাসুদুর রহমান মনির ও এসি নাহিদ। পরে কেউ তায়িমকে ভ্যানযোগে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

সে দিনের ঘটনাস্থলে পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিয়ে রবিউল বলেন, ‘২০ জুলাই ঘটনাস্থলে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, যুগ্ম কমিশনার প্রলয়, ডিসি ইকবাল, এডিসি মাসুদুর রহমান মনির, এসি নাহিদ, এসি তানজিল, ওসি আবুল হাসান, ওসি (অপারেশন) ওয়াহিদুল হক মামুনসহ ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই আমার ভাই তায়িমকেসহ যাত্রাবাড়ীতে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের নির্দেশে আন্দোলনকারী প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আমি তাদের ফাঁসি চাই।’

রবিউল ছিলেন দিনের দ্বিতীয় সাক্ষী। তার আগে সাক্ষ্য দিয়েছেন আগুনে পোড়ানো শহীদ আস-সাবুরের বাবা এনাব নাজেম জাকি।

‘আমার ছেলেকে আগুনে পুড়িয়েছে, খুনিদের তেমনই শাস্তি চাই’

গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত এবং পরে আগুনে পোড়ানো শহীদ আস-সাবুরের বাবা এনাব নাজেম জাকি গতকাল ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে আগুনে পুড়িয়েছে, খুনিদের তেমনই শাস্তি চাই।’ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং অভিযোগ করেন, দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

মিছিলে গিয়ে নিখোঁজ, পরদিন পোড়া লাশে শনাক্ত

সাক্ষ্যে এনাব নাজেম জাকি বলেন, তার ছেলে আস-সাবুর, বয়স আনুমানিক ২৫, গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে মিছিলে অংশ নিতে বের হয়। সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে সে বড় ভাই রেজোয়ানকে ফোন করে জানায়, সে মিছিলে আছে। বেলা সাড়ে ১১টায় আবার ফোন করে একই তথ্য জানায়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবার ফোন দিয়ে বলে, ‘অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যাচ্ছে।’ বড় ভাই তাকে সেখান থেকে সরে আসতে বললেও সে যায়নি। এরপর মিছিল আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হয়।

পরবর্তী সময়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আস-সাবুর আশুলিয়ার একটি বাসায় আশ্রয় নেয়, যেখানে সে সময় প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছিল। এর পর থেকে আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। বিকেল ৪টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ওই দিন আর সে ফিরে আসেনি।

পরদিন ৬ আগস্ট বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে খোঁজাখুঁজির পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমন্বয়ক ইমরান বড় ভাই রেজোয়ানকে ফোন করে জানান, আশুলিয়া থানার সামনে পোড়া লাশ রয়েছে, সেখানে আস-সাবুরের লাশ থাকতে পারে।

রেজোয়ান কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন এনাব নাজেম জাকি তার ভাগ্নে হুমায়ূন কবির ও দুঃসম্পর্কীয় খালাতো ভাই মেহেদী হাসানকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তারা পোড়া টি-শার্টের অংশ এবং মোবাইল সিমের মাধ্যমে লাশ শনাক্ত করেন। ওই সিম অন্য মোবাইলে প্রবেশ করানোর পর দেখা যায় সেটি আস-সাবুরের নম্বর।

পরে সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের উদ্যোগে আশুলিয়া থানার সামনে পোড়ানো ছয়টি লাশের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এরপর শহীদ আস-সাবুরের লাশ তার পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়। এনাব নাজেম জাকি বলেন, ‘আমি আমার ছেলের লাশের দিকে তাকিয়েছি। কিন্তু তার চেহারা এমন বীভৎস অবস্থায় ছিল, তাকে চেনার উপায় ছিল না।’

সেদিন রাত ৮টায় পরিবারের সদস্যরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরে রওনা হন। পরদিন ৭ আগস্ট সকাল ৯টায় তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনায় হত্যার অভিযোগ

সাক্ষ্যে এনাব নাজেম জাকি অভিযোগ করেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উসকানিতে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা উত্তরের উপ-পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ হেল কাফি, ডিবির এসআই আরাফাত হোসেন এবং ঢাকা-১৯ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ইসলাম এই হত্যাকাণ্ডে সহায়তা ও মদদ দিয়েছেন।’

পুলিশ ভ্যানে আগুনে পোড়ানো লাশের ভিডিও

সাক্ষ্য দেয়ার সময় এনাব নাজেম জাকি ট্রাইব্যুনালে দু’টি ভিডিও দাখিল করেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হত্যার পর লাশগুলো একটি রিকশা ভ্যানে চ্যাংদোলা করে তোলা হচ্ছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের ভ্যানে লাশগুলোকে পেট্রল ঢেলে আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। ভিডিওতে একজন পুলিশ সদস্যকে আগুনের তীব্রতা বাড়ানোর জন্য কাঠের বেঞ্চ ছুড়ে মারতে দেখা যায়।

ভিডিও প্রদর্শনের সময় এনাব নাজেম জাকি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং রিকশা ভ্যানে স্তূপ করা লাশের মধ্যে তার ছেলের মৃতদেহ শনাক্ত করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের জেরা ও প্রতিউত্তর

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন সাক্ষীকে জেরা করে জানতে চান, জাহাঙ্গীরনগরের ইমরান তার বড় ছেলেকে আগে থেকেই চিনতেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, মোবাইলের সিম থেকে নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করা হয়’।

পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করে, শেখ হাসিনা বল প্রয়োগের নির্দেশ দেননি। জবাবে তিনি বলেন, ‘ইহা সত্য নয়’। আসাদুজ্জামান খান কামালকে নির্দোষ দাবি করলে সাক্ষী বলেন, ‘ইহাও সত্য নয় যে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না’।

সাক্ষ্যের একপর্যায়ে পিতা এনাব নাজেম জাকি বলেন, যেভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করে আগুনে পোড়ানো হয়েছে, আমি চাই খুনিদেরও তেমন শাস্তি হোক। ওরা মানুষ না, ওরা পিশাচ। এর পর দিনের তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজশাহীর প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জন সাক্ষী নিজেদের জবানবন্দী দিয়েছেন। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২০ আগস্ট (বুধবার) দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
bacansport
slot toto