Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Trending

পাচারের টাকায় বিদেশে ফ্যাসিবাদীদের বিলাসিতা পাচার ২৩৪ বিলিয়ন ডলার কি ফিরবে?

প্রকাশিত শ্বেতপত্র অনুযায়ী  দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং সরকারের অনুকূল্যের মাধ্যমে গত ১৬ বছরে বিদেশে পাচার হয়েছে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাচারকৃত অর্থে ফ্যাসিবাদী সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়-স্বজন  দুর্নীতিবাজ আমলা ও সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। 
এ নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করলেও রাষ্ট্রের ৯টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স দিনরাত পরিশ্রম করলেও পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে গৃহীত পদক্ষেপের অগ্রগতি আছে খুব সামান্যই। এ নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করলেও সময়ের স্বল্পতা এবং প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রতার কারণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে দৃশ্যমান ফল নিয়ে আসার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানান বিশ্লেষকরা। সেক্ষেত্রে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আসা-না আসা নির্ভর করবে নির্বাচিত সরকারের ওপর। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, পাচার হওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলার কি ফিরবে?
পাচারের ভয়াল চিত্র ॥ শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে প্রতিটি খাতে লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে জানিয়ে এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল, কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংক খাতে যে মন্দ ঋণ তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে ১৪টি মেট্রোরেল নির্মাণ করা যেত। 
এ ছাড়া ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ মন্দ ঋণ তৈরি হয়েছে, তার প্রকৃত পরিমাণ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব ছিল। বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট ছিল। আর এই প্রভাব ব্যাংকিং খাতের সংকটকে আরও গভীর করেছে। কমিটি আরও জানায়, প্রবাসে কর্মী পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো গত ১০ বছরে ভিসার জন্য হুন্ডির মাধ্যমে ১৩.৪ লাখ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। এই টাকা ঢাকা এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা থেকে মতিঝিল) নির্মাণ ব্যয়ের চারগুণ। সিন্ডিকেট এবং এই শোষণমূলক নিয়োগের কারণে অভিবাসী শ্রমিকরা ন্যায্য কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং দেশে রেমিটেন্সের পরিমাণ কমেছে।’
কায়েম হয়েছিল চোরতন্ত্র ॥ অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, শেখ হাসিনার ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের ভাষায়, দেশে গত পনেরো বছরে ‘চামচা পুঁজিবাদ থেকেই চোরতন্ত্র’ তৈরি হয়েছিল, যাতে রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগসহ সবাই অংশ নিয়েছে।

যেসব খাতে বেশি দুর্নীতি হয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে  ব্যাংকিং, অবকাঠামো, জ্বালানি এবং তথ্য প্রযুক্তি খাত। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ তছরুপ হয়েছে। এ ছাড়া লুটকৃত অর্থের প্রায় ৬০ শতাংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আর বাকি ৪০ শতাংশ বাংলাদেশে ছায়া বিনিয়োগ করা হয়েছে। দেশের নানা খাতে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।
লুটের টাকায় বিলাসী জীবন ॥ অনুসন্ধানে জানা যায়, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষমতায় থাকাকালে অবৈধভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এসব টাকা দিয়ে বিদেশে বাড়ি, রেস্তোরাঁ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তাদের অনেকেই কানাডার ‘বেগমপাড়ায়’ পরিবারসহ আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন। গাড়ি-বাড়ি কিনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুরে বিলাসবহুল দিন যাপন করছেন।

সম্পদ পাচারের তালিকায় রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব ববি, ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিকসহ আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় শতাধিক মন্ত্রী-এমপি-আমলা ও ব্যবসায়ীর নাম। অথচ দেশের সাধারণ জনগণ প্রতিদিন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। কষ্টে আছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও। সাধারণ মানুষের দাবি, আওয়ামী লীগের এই দুর্নীতিবাজ নেতাদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনা উচিত। পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে এনে দেশের অর্থনীতিতে পুনর্বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। 
কাজটি সহজ নয় ॥ বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনিতেই পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা খুবই কঠিন। কারণ বড়ধরনের কোনো চাপে না পড়লে কোনো দেশই নিজ দেশে বিনিয়োগ হওয়া বিদেশি অর্থ ফেরত দিতে চায় না। তদন্ত সংস্থাগুলোও ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীতে ভরপুর। টাস্কফোর্সের প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং সমন্বয়ক সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানের বিরুদ্ধে নানাবিধ প্রচারণায় নেমেছে তদন্তে বিঘœ সৃষ্টিকারী পক্ষগুলো

তা ছাড়া আমাদের দেশের ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়াও আন্তর্জাতিক মানের নয়। তার ওপর বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়েছে তার অধিকাংশই গন্তব্যে পৌঁছেছে তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে। এসব কারণে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া বেশ স্বল্প গতিতেই অগ্রসর হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
নির্বাচিত সরকারই ভরসা ॥ বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন, বিচার এবং সংস্কার নিয়ে যতটা সোচ্চার, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ততটা উচ্চকণ্ঠ নয়। তা ছাড়া পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং সময়সাপেক্ষ। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নির্বাচনের পূর্বে অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনা খুবই কম। ফলে অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি অনেকাংশেই নির্ভর করছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়া রাজনৈতিক সরকারের ইচ্ছার ওপর।

যদিও সরকার আইনগত প্রক্রিয়াগুলো দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। পাচারকারীদের বিশ্বাস, রাজনৈতিক সরকার নানা কারণে ব্যবসায়ী এবং আমলাদের প্রতি দুর্বল থাকে। সেই দুর্বলতা থেকেই পাচারকারীদের অনেকেই পার পেয়ে যাবেন বলে আশাবাদী হচ্ছেন। তা ছাড়া পাচারকারীদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে জরিমানা প্রদান সাপেক্ষে নিষ্কৃতি পাওয়ার সুযোগ বর্তমান প্রক্রিয়াতেই রাখা হয়েছে।
উদাহরণ তো আছেই ॥ বিশ্লেষকদের মতে, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার উদাহরণ বাংলাদেশেই আছে। ২০১৩ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার। ২০১৩ সালের নভেম্বরে প্রথম দফায় ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুর ডলার দেশে ফেরত আনে দুদক, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

এরপর দ্বিতীয় দফায় পরের বছরের ৩ জানুয়ারি ওই অর্থের (১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা) মুনাফা হিসেবে ২৩ হাজার ৮০০ সিঙ্গাপুরি ডলার, বাংলাদেশি প্রায় ১৫ লাখ টাকার সমান, দেশে ফেরত আনা হয়। তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের জানান, ওই বছরের ১৩ আগস্ট সিঙ্গাপুর ওভারসিস ব্যাংক থেকে নয় লাখ ৫৬ হাজার ৩৮৭ মার্কিন ডলার বাংলাদেশে পাঠানো হয়। 
সরকার বদ্ধপরিকর ॥ পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকার বহুপক্ষীয় কৌশল গ্রহণ করেছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে গত কয়েক মাস ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১১ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে নানান ধরনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অর্থ পাচারকারীরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের সম্পদ ফেরত আনা হবে।

সেই প্রক্রিয়া এখন শুরু হয়ে গেছে। কানাডা, যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তিনটি আইনি সংস্থার সঙ্গে টাস্কফোর্সের নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও দেশ এ উদ্যোগে যুক্ত হলে পাচার হওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত আনার পথ সুগম হবে। এর মাধ্যমে দেশে দুর্নীতির সংস্কৃতি ভাঙার সুযোগ তৈরি হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
টাস্কফোর্স পুনর্গঠন ॥ এদিকে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স নতুন করে পুনর্গঠন হয়েছে। এতদিন টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। নতুন করে এই টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, দুদক, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

টাস্কফোর্সের কাজ হলোÑ বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিত করা; পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে দায়ের করা মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া; পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া; উদ্ধার করা সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া; এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সাধন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী টাস্কফোর্সের কাজ সমন্বয় করছেন। আর টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে বিএফআইইউ। টাস্কফোর্স সূত্রের আশাবাদ, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই পাচার করা কিছু সম্পদ দেশে ফেরানো সম্ভব হবে।
অগ্রগতিও কম নয় ॥ পাচারের অর্থ শনাক্ত ও জব্দ করার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) সঙ্গে বৈঠক করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জনাথন পাওয়েলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপি, সুবিধাভোগী আমলা ও ব্যবসায়ীদের সম্পদ ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার বিচারিক আদালত। জব্দের আদেশ নিয়ে অভিযুক্তদের সজাগ করতে বাইরের বিভিন্ন দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) চিঠি দিয়েছে সরকার। অনেক দেশ থেকে জবাবও মিলেছে।

লন্ডনে দুজন প্রভাবশালীর সম্পদ জব্দের ঘটনা ঘটেছে। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে থাকা কোম্পানিতে শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বিদেশে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা সম্পদের মূল্য ৪১ লাখ ১৫ হাজার ৪১২ ইউরো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৬ কোটি ৬৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে ৭১টি দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক। এর মধ্যে ২৭টি দেশ থেকে এমএলএআর জবাব পেয়েছে সংস্থাটি।

দ্য অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে’র তদন্তে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের যুক্তরাজ্যে মালিকানাধীন কমপক্ষে ৪০ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) ইতিমধ্যে ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এই বিবৃতিতে স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেছেন, সময় অপচয় না করে তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ জব্দে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সন্ধান মিলেছে ৪০ হাজার কোটি টাকার ॥ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গড়া প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে সংস্থাটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। পাঁচটি দেশের সাতটি শহরে অনুসন্ধান চালিয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানায় এনবিআর। এছাড়াও নয়টি দেশে ৩৫২টি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো টাকার বিনিময়ে অর্জন করেছে কিছু বাংলাদেশি।

দেশগুলো হলোÑ অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, অস্ট্রিয়া, ডোমিনিকান রিপাবলিক, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, নর্থ মেসিডোনিয়া, মালটা, সেন্ট লুসিয়া এবং তুরস্ক। সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব জানান, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ পাচার করে গড়ে তোলা ৩৪৬টি সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে। এসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশের অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সাজা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সিআইসি। অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডাটাবেজ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের লোক বসিয়ে বহু তথ্য গায়েব করে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশার বিষয় হচ্ছে- মুছে দেওয়া তথ্য উদ্ধারে দক্ষতা অর্জন করেছে সিআইসি।
বিশেষজ্ঞের আশাবাদ ॥ শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সিপিডির সম্মানীয় ফ্যালো ড. মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা খুচ সহজ কাজ নয়। এটি বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে পেরেছে, আবার অনেক দেশ পারেনি। কাজেই আমাদের দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আসার বিষয়টি নির্ভর করবে সরকারের সদিচ্ছা ও ধৈর্য্যরে ওপর।

দীর্ঘদিন ধৈর্য্য ধরে এর পেছনে লেগে থাকতে পারলে এবং সময়মতো সঠিক কাজটি করতে পারলে পাচার হওয়া অর্থের একটা বড় অংশ ফেরত আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করে তিনি। তার মতে, পাচারকারী শনাক্ত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করতে হবে। তারপর পাচার হওয়া অর্থ গ্রহণকারী দেশকে উক্ত সম্পদ ফ্রিজ করার জন্য অনুরোধ করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা করে রায় নিতে হবে।

এর কোনো পর্যায়ে ধারাবাহিকতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সংশ্লিষ্ট পাচারকারীর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে জরিমানা আদায়সাপেক্ষ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা যাবে বলেও জানান এই অর্থনীতিতিবিদ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে টাকা না আসলেও বেশ অগ্রগতি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার যদি অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তবে এটি হবে দেশের জন্য কল্যাণকর এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
toto 4d
slot toto
slot gacor
toto slot
toto 4d
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
bacansport
slot gacor
slot gacor
bacan4d
slot gacor
paito hk
bacan4d
slot toto