গ্যাস চুরির দায় ভাগাভাগি
বছরে অপচয় ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বাড়ছে বিতরণ কোম্পানির কারিগরি ক্ষতি। চলছে পেট্রোবাংলা-জিটিসিএল চিঠি চালাচালি।
গ্যাসক্ষেত্র থেকে নিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে গ্যাস সরবরাহ করা হয় সঞ্চালন লাইনে। এরপর বিতরণ লাইনের মাধ্যমে তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছায় ছয়টি বিতরণ কোম্পানি। অবৈধ সংযোগ দিয়ে গ্যাস চুরির অভিযোগ আছে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে। এসব গ্যাস কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে অপচয় ধরে চালিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এখন এর কিছুটা ভাগ করে চাপানো হয়েছে সঞ্চালন লাইনে।
জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইপলাইন থেকে গ্যাস বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে পাইপলাইনে নানা কারণে ছিদ্র তৈরি হতে পারে। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে বিতরণ লাইনে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ২০ থেকে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ গ্যাস অপচয় হতে পারে। আর উচ্চ চাপের সঞ্চালন লাইন থেকে গ্যাস অপচয়ের কোনো সুযোগ নেই।
গ্যাস সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। গত জানুয়ারি থেকে তাদের ওপর যে কারিগরি ক্ষতির দায় চাপানো হয়েছে, তা তাদের মোট সরবরাহের ৩ শতাংশ। এ গ্যাসের দাম পরিশোধ করার জন্য দফায় দফায় তাদের চিঠি দিচ্ছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। তারা অপারগতা প্রকাশ করে এটি প্রত্যাহারের আবেদনও করেছে। অবশ্য তাতে রাজি হচ্ছে না পেট্রোবাংলা।
পেট্রোবাংলার হিসাবে বিতরণ খাতে কারিগরি ক্ষতির নামে অপচয় হয়েছে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) ৯৮ কোটি ঘনমিটার। খোলাবাজার থেকে প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানির খরচ প্রায় ৮০ টাকা। এ হিসাবে রাষ্ট্রের অপচয় হয়েছে ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা।
এদিকে গ্যাস সরবরাহের ৩ শতাংশ অপচয় জিটিসিএলের ওপর চাপানোর পর বিতরণ কোম্পানির কারিগরি ক্ষতি আরও বেড়ে তিন গুণ হয়েছে গত অর্থবছর। সবচেয়ে বড় সংস্থা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কারিগরি ক্ষতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে গত এপ্রিলে। জুনে অবশ্য এটি কমে সাড়ে ৪ শতাংশে এসেছে। তাদের ঠিকাদার, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েও গ্যাস চুরি ঠেকাতে পারছে না এ সংস্থা।
পেট্রোবাংলার হিসাবে বিতরণ খাতে কারিগরি ক্ষতির নামে অপচয় হয়েছে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) ৯৮ কোটি ঘনমিটার। খোলাবাজার থেকে প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানির খরচ প্রায় ৮০ টাকা। এ হিসাবে রাষ্ট্রের অপচয় হয়েছে ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। আর সঞ্চালন লাইনে ধরা ৩ শতাংশের জন্য ৬২ কোটি ঘনমিটার অপচয় হিসাব করা হচ্ছে। এতে আরও অপচয় ৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। গ্যাস অপচয় কমাতে পারলে ডলার–সংকটের মধ্যে এলএনজি আমদানির চাপ কমত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কাগজে-কলমের হিসাবের চেয়ে গ্যাসের প্রকৃত অপচয় আরও বেশি। অনেক গ্রাহক কম গ্যাস নিয়ে বাড়তি বিল দিচ্ছেন, যার ফলে অপচয় কমিয়ে দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে অপচয়ের দায় পুরোটাই চাপছে ভোক্তার ওপর। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে গড়ে ৮০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, কারিগরি ক্ষতি হতেই পারে। গ্যাস অপচয়ে পাইপলাইনে লিকেজ (ছিদ্র) একটা বড় কারণ। তবে চুরি বা অপচয় যাতে না হয়, সেটা নজরদারি করা হচ্ছে। অভিযান চালিয়ে অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করলেও আবার তা বসানো হয়। আবাসিক সংযোগ চালু রেখে এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
চুরি, অনিয়ম ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস। গত অর্থবছরে প্রায় আড়াই লাখ অবৈধ চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মানতে রাজি নয় জিটিসিএল
কারিগরি ক্ষতির পাওনা পরিশোধে গত ৮ অক্টোবর জিটিসিএলকে চিঠি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এতে বলা হয়, সঞ্চালন পয়েন্টে মিটারের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানিতে সরবরাহ করা গ্যাসের পরিমাণের মধ্যে যে পার্থক্য হচ্ছে, তার কারিগরি ও আর্থিক ক্ষতি জিটিসিএল বহন করবে। এতে কোম্পানির লোকসান হলেও তা জিটিসিএলকে পরিশোধ করতে হবে। এটি পরিশোধ করা না হলে বিভিন্ন মার্জিন খাতে যে ঘাটতি, তা মেটানো পেট্রোবাংলার পক্ষে সম্ভব হবে না। জিটিসিএলের অদক্ষতার কারণে আর্থিক ঘাটতি হলে তা সামগ্রিক গ্যাস খাতের জন্য হতাশার কারণ হবে।
এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়ে জিটিসিএল জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে জিটিসিএল লোকসান করেছে প্রায় ২১৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের লোকসান হতে পারে ৭০৮ কোটি টাকা। এর সঙ্গে কারিগরি ক্ষতি হিসেবে ৫০৬ কোটি টাকা দিতে দিলে লোকসান দাঁড়াবে ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকায়। এ ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের খরচ বহন করতে হচ্ছে। পুরোনো প্রকল্পের কিস্তি পরিশোধ আছে। তাই কারিগরি ক্ষতির টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। এর আগে এটি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর পেট্রোবাংলাকে একটি চিঠি দিয়েছিল জিটিসিএল।
কারিগরি ক্ষতি হতেই পারে। গ্যাস অপচয়ে পাইপলাইনে লিকেজ (ছিদ্র) একটা বড় কারণ। তবে চুরি বা অপচয় যাতে না হয়, সেটা নজরদারি করা হচ্ছে। অভিযান চালিয়ে অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করলেও আবার তা বসানো হয়। আবাসিক সংযোগ চালু রেখে এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামান খান
গত ২৩ মে পেট্রোবাংলাকে একটি চিঠি দিয়েছে জিটিসিএল কর্মচারী ইউনিয়ন। এতে বলা হয়, সঞ্চালন ও বিতরণের মধ্যে যে ঘাটতির পরিমাণ জিটিসিএলের ওপর চাপানো হচ্ছে, তা মোট গ্যাস সরবরাহের ৩ শতাংশ। অথচ সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ চাপের এ লাইনে ছিদ্র (লিকেজ) থাকলে তা সহজেই দৃশ্যমান হবে। ছয়টি বিতরণ কোম্পানির বাইরে গ্রাহক না থাকায় অবৈধ উপায়ে গ্যাস বিক্রিরও কোনো সুযোগ নেই। জিটিসিএল নিজেরা ব্যবহার করে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, যার দাম নিয়মিত পরিশোধ করে আসছে জিটিসিএল। কারিগরি ক্ষতির অংশবিশেষ জিটিসিএলের ওপর চাপিয়ে দিলে দুর্নীতি, গ্যাসের অপব্যবহার ও কারিগরি ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।
জিটিসিএলের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর পরও বছরে তাদের আয় হবে প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু কারিগরি ক্ষতি পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। জিটিসিএল চলতে পারবে না।
পেট্রোবাংলার পরিচালক মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, জিটিসিএলের ক্ষেত্রে অপচয়ের পুরোটাই কারিগরি ক্ষতি। তাদের ওপর দায় চাপানো হয়নি; বরং দুই প্রান্তের মিটার দেখেই জিটিসিএলের কারিগরি ক্ষতি হিসাব করা হচ্ছে। ক্ষতির কারণ চিহ্নিত করে এটা তাদের সমাধান করতে হবে।
মিটারে ধরা পড়ছে ক্ষতির দায়
জিটিসিএল থেকে গ্যাস নেওয়ার পর বিতরণ লাইনে ঘাটতি পাওয়া গেলে তা সব বিতরণ কোম্পানির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হতো আগে। এ নিয়ে বিতরণ কোম্পানির আপত্তি ছিল। গ্যাস সরবরাহের প্রতিটি পয়েন্টে মিটার বসালে এটি সমাধান হবে। জিটিসিএল ৬৪টি পয়েন্টে গ্যাস সরবরাহ করে। এর মধ্যে মাত্র ২২টি পয়েন্টে নিজস্ব মিটার আছে, যার ১০টি আবার ক্রেতার হাতে।
জিটিসিএল সূত্র বলছে, বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানিকে সরবরাহ করার জন্য মিটার বসিয়েছে জিটিসিএল। কুমিল্লার ইপিজেড, লালমাই ও বিজরা পয়েন্টে গ্যাস নিত বাখরাবাদ। এখন এ তিন এলাকার জন্য দুই বছর আগে মিটার বসিয়ে বিজরা পয়েন্টে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ২০২১ সালে তিন পয়েন্ট মিলে তারা দিনে সাড়ে চার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেত বলে হিসাব দিত বাখরাবাদ। মিটার বসানোর পর গত বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে তারা দিনে গ্যাস পাচ্ছে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট।
তবে অপচয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কুমিল্লা এলাকায় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বাখরাবাদে। গত অর্থবছরে তাদের অপচয় প্রায় ৬ শতাংশ। এর আগের বছর এটি ছিল মাত্র ১ শতাংশ।
তিতাসের ক্ষতি আরও বেড়েছে
ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে দুটিতে গ্যাস অপচয় নেই। প্রতিবছর তারা গ্যাস কেনার চেয়ে বিক্রি করছে বেশি। এর একটি হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং আরেকটি সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। গত অর্থবছরে ৭৮ লাখ ঘনমিটার গ্যাস বেশি বিক্রি করেছে সুন্দরবন। আর ২ কোটি ২২ লাখ ঘনমিটার গ্যাস বেশি বিক্রি করেছে পশ্চিমাঞ্চল। এ দুটি কোম্পানির দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক হিসাবেই গ্যাসের সরবরাহ বা অপচয়ের হিসাব করা হয়। তবে আবাসিকে প্রিপেইড মিটার ও শিল্পে ইভিসি মিটার পৌঁছালে অপচয় দেখা দেবে।
চুরি, অনিয়ম ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস। গত অর্থবছরে প্রায় আড়াই লাখ অবৈধ চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আগের বছর এটি ছিল পৌনে তিন লাখ। এর বাইরে শিল্প, সিএনজি ও বাণিজ্যিক মিলে ছয় শতাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে গত বছর। তবুও অপচয় কমানো যাচ্ছে না। গত অর্থবছরে তিতাসের গ্যাস অপচয় হয়েছে ৭২ কোটি ৫৫ লাখ ঘনমিটার। এর আগের বছরে অপচয় হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি ঘনমিটার। তিতাস রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে।
তবে অপচয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কুমিল্লা এলাকায় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বাখরাবাদে। গত অর্থবছরে তাদের অপচয় প্রায় ৬ শতাংশ। এর আগের বছর এটি ছিল মাত্র ১ শতাংশ। চট্টগ্রামের গ্যাস বিতরণ কোম্পানি কর্ণফুলী গত বছর অপচয় করেছে ৭ কোটি ঘনমিটার। আগের বছর এটি ছিল ৩ কোটি ঘনমিটার। আর সিলেটের গ্যাস বিতরণ কোম্পানি জালালাবাদ অপচয় করেছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ঘনমিটার। আগের বছর এটি ছিল ৩ কোটি ৪৯ লাখ ঘনমিটার।
তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) মো. সেলিম মিয়া বলেন, আগে মিটার ছাড়াই হিসাব করা হতো। এ বছরের শুরু থেকে দুই প্রান্তে মিটার ধরে প্রকৃত কারিগরি ক্ষতি হিসাব করা হচ্ছে। এটি এখন প্রতি মাসে ধাপে ধাপে কমে আসছে। নিয়মিত অভিযান চলছে, কারিগরি ক্ষতি আরও কমবে।
কারিগরি ক্ষতি বাড়ছে মূলত চুরির কারণে। গ্যাসের চাপ বেশি থাকলে অবৈধ আবাসিক সংযোগে অপচয় হতে পারে। এখন তো চাপ কম, তার মানে বৈধ সংযোগেই চুরি হচ্ছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম তামিম
বাড়তি বিলে চাপা পড়ে অপচয়
গৃহস্থালি রান্নায় ব্যবহৃত দুই চুলার একজন গ্রাহক মাসে গড়ে ৪০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের বিল থেকে এ ধারণা পাওয়া গেছে। তবে প্রায় ৩৮ লাখ গ্রাহকের মিটার নেই। তাঁরা প্রতি মাসে এখন ১ হাজার ৮০ টাকা বিল দেন। তাঁদের গড় ব্যবহার ৬০ ঘনমিটার ধরে হিসাব করা হয়েছে। চুলায় নিয়মিত গ্যাস পান না গ্রাহক। তাই বিলের চেয়ে কম গ্যাস ব্যবহার করায় সুবিধা পায় বিতরণ কোম্পানি। এতে তাদের অন্য খাতের অপচয় বা চুরি চাপা পড়ে যায়। কারণ, গ্যাস কেনার খরচ ও আয়ের মধ্যে তফাত ধরেই সিস্টেম লস হিসাব করা হয়।
শুধু তিতাসের আবাসিক গ্রাহক আছেন সাড়ে ২৮ লাখ। এর মধ্যে ২৪ লাখের বেশি গ্রাহকের মিটার নেই। এ কারণে এসব গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ৮৬ কোটি টাকা বাড়তি নিচ্ছে তিতাস। এতে ৮৬ কোটি টাকার গ্যাস অপচয়ের হিসাব থেকে বাদ যাচ্ছে। আগে দুই চুলায় ৭৮ ঘনমিটার ব্যবহার ধরে হিসাব করা হতো। এতে বছর শেষে বিতরণ কোম্পানি সিস্টেম লসের পরিবর্তে উদ্বৃত্ত থাকার ঘটনাও আছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কোনো সিস্টেম লস হয়নি। বরং শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়তি ছিল। এর বাইরে ইলেকট্রনিক ভলিউম ক্যারেক্টর (ইভিসি) মিটার বসালে শিল্পেও গ্যাস বিল কমে আসবে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাই বিতরণ কোম্পানি ইভিসি মিটার দিচ্ছে না। ইভিসি দিলে তাদের কারিগরি অপচয় চাপা দেওয়ার আর সুযোগ থাকবে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেন, কারিগরি ক্ষতি বাড়ছে মূলত চুরির কারণে। গ্যাসের চাপ বেশি থাকলে অবৈধ আবাসিক সংযোগে অপচয় হতে পারে। এখন তো চাপ কম, তার মানে বৈধ সংযোগেই চুরি হচ্ছে। জিটিসিএলের পাইপলাইনে কারিগরি ক্ষতি ৩ শতাংশ হলে সঞ্চালন লাইন বন্ধ করা দরকার। এটা হতেই পারে না। লোকসান ঠেকাতেই কারিগরি ক্ষতি ভাগাভাগি করে চাপিয়ে দিয়েছে পেট্রোবাংলা।